আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘আচরণ এবং অভিযোজন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

অভিযোজন কাকে বলে?
পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কোনো জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত স্থায়ী পরিবর্তনকে সেই জীবের অভিযোজন বলে।
অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য কী?
অথবা, অভিযোজনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
- অভিযোজনের মাধ্যমে কোনো জীবের নিজ পরিবেশে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
- অভিযোজনের মাধ্যমে জীব প্রজাতি পরিবর্তিত পরিবেশে বেঁচে থাকলে তা কালক্রমে অভিব্যক্তি ঘটায় ও নতুন জীব প্রজাতি সৃষ্টি করে।
অভিব্যক্তির মূলভিত্তি হল অভিযোজন – ব্যাখ্যা করো।
অথবা, অভিযোজন কারণ হলে বিবর্তন তার ফল – ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
অভিব্যক্তির পথে নতুন জীব প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে। নতুন প্রজাতির নানা বৈশিষ্ট্য তাকে পূর্ববর্তী জীব থেকে ক্রমশ পৃথক করে তোলে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির আবির্ভাব ঘটে পরিবেশে জীবের অভিযোজন দ্বারা। অর্থাৎ, জীবের অভিযোজনগুলি একত্রিত হয়ে নতুন জীবের উৎপত্তি ঘটায়। এজন্য বলা হয় যে, অভিব্যক্তির মূল ভিত্তি হল অভিযোজন। অন্যভাবে বলা যায় যে, অভিযোজন কারণ হলে বিবর্তন হল তার ফল।
আচরণ কাকে বলে?
পরিবেশের কোনো ইঙ্গিত বা উদ্দীপকের প্রভাবে বা অন্য কোনো জীবের ক্রিয়ার ফলে কোনো একটি জীব স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে আচরণ বলে।
আচরণ কীভাবে পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত?
- প্রত্যেক জীব পরিবেশের সাথে সঠিক আচরণ দ্বারা সামঞ্জস্য রক্ষা করে।
- পরিবেশের পরিবর্তনে আচরণ পরিবর্তিত হয়।
আচরণ ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক কী?
কোনো জীবের আচরণই সেই জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় ও জননে সাহায্য করে। পরিবেশ পরিবর্তিত হলে জীবও নিজের প্রয়োজনমতো আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে অভিযোজিত হয়। এই আচরণ বহু বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হলে ওই প্রজাতির সমস্ত জীবে ছড়িয়ে গিয়ে অভিব্যক্তি ঘটায়।
আচরণ ও অভিযোজনের সম্পর্ক কী?
অথবা, আচরণ কীভাবে অভিযোজনে সাহায্য করে?
প্রকৃতপক্ষে আচরণ হল একটি বিশেষ প্রকারের অভিযোজন। এই ধরনের অভিযোজন প্রাণীকে পরিবেশে মানিয়ে চলতে ও বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, অর্থাৎ প্রাণীর অভিব্যক্তিতে এটি সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক নির্বাচনে সাহায্যকারী বলবিশেষ।
আচরণগত অভিযোজনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
জিনগত এবং শিক্ষানির্ভর যে সকল ক্রিয়ার সাহায্যে কোনো জীব তার অস্তিত্ব বজায় রাখে এবং জননের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে, সেই ক্রিয়াগুলিকে আচরণগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ – শিম্পাঞ্জির ডালের সাহায্যে উইপোকা শিকার।
আচরণ বিজ্ঞান বা ইথোলজি (ethology) কী?
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবজন্তু, পোকামাকড় ইত্যাদির আচার-আচরণ সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে আচরণ বিজ্ঞান বা ইথোলজি বলে।
অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
পরিবর্তিত পরিবেশে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য জীবদেহের যে বাহ্যিক অথবা অভ্যন্তরীণ গঠনের সুবিধাজনক, উন্নত ও স্থায়ী পরিবর্তন হয়, তাকে জীবের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ – ক্যাকটাসের পাতার কাঁটায় রূপান্তর।
ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকা কাকে বলে?
কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটি শুষ্ক প্রকৃতির হয় এবং এর জলধারণ ক্ষমতা কম হয়। এইপ্রকার মাটিকে ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকা বলে। ক্যাকটাসজাতীয় উদ্ভিদ এইপ্রকার মৃত্তিকায় জন্মায়।
জাঙ্গল অভিযোজন কাকে বলে?
শুষ্ক পরিবেশে জন্মানোর জন্য উদ্ভিদের মধ্যে যে সকল অঙ্গসংস্থানগত ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন লক্ষিত হয়, তাদের একত্রে জাঙ্গল অভিযোজন বলে।
জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট (xerophyte) কারা?
যে সকল উদ্ভিদ ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকায় বসবাসের জন্য এবং কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুতে বেঁচে থাকার জন্য অভিযোজিত হয়, তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বলে। যেমন – ফণীমনসা, ত্রিশিরা মনসা, শতমূলী, বাবলা ইত্যাদি।
বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের পাতার কী ধরনের অভিযোজন হয়েছে?
বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের পাতায় নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যথা –
- পাতার সংখ্যা কম হয় এবং তা আকারে ছোটো হয়।
- অধিকাংশ পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এগুলি অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনের উদাহরণ।
ফণীমনসার কান্ডের অভিযোজন লেখো।
ফনীমনসার (ক্যাকটাসের) কাণ্ডের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হল – কাণ্ড সাধারণত ছোটো, প্রসারিত, স্থূল, রসালো এবং সবুজ বর্ণের। এইরূপ কান্ডকে পর্ণকান্ড বা ফাইলোক্ল্যাড বলে। কান্ডের ত্বক পুরু, কিউটিক্স আবরণযুক্ত এবং মিউসিলেজ সমৃদ্ধ হয়।
ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজনগুলি লেখো।
- পাতা সংখ্যায় কম ও আকারে ছোটো হয়, কখনও তা প্রায় থাকেই না, ফলে জলের বাষ্পমোচন হ্রাস করা সম্ভব হয়। ক্যাকটাসের (ফণীমনসা) পাতা কাঁটায় পরিণত হয়, যা আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
- পাতায় অনেক সময় ঘন রোম থাকে যা বাষ্পমোচন রোধে সাহায্য করে।
মুখ্য জলজ প্রাণী কাকে বলে?
জলে বসবাসকারী যেসব প্রাণীর পূর্বসূরিরাও তাদের উদ্ভবকাল থেকে জলেই বাস করত তাদের মুখ্য বা প্রাথমিক জলজ প্রাণী বলে। উদাহরণ – মাছ।
গৌণ জলজ প্রাণী কাকে বলে?
যে সকল প্রাণীর পূর্বপুরুষ স্থলে বসবাস করত কিন্তু বর্তমানে তারা বিশেষ কোনো কারণে জলে বসবাস করে তাদের গৌণ জলজ প্রাণী বলে। যেমন – তিমি, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি।
মাছের যে-কোনো দুটি জলজ অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
মাছের দুটি জলজ অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হল –
- জলের বিভিন্ন গভীরতায় গমনের জন্য পটকা এবং।
- জলে সাঁতার কাটার জন্য বিভিন্নপ্রকার পাখনার উপস্থিতি।
মাছের অভিযোজনে পটকার ভূমিকা কী?
অথবা, রুইমাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা কী কী?
অথবা, উদ্স্থৈতিক অঙ্গ রূপে পটকার গুরুত্ব কী?
পটকার সাহায্যে মাছ জলের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন গভীরতায় বিচরণ করতে পারে। পটকার বায়ুর পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিবর্তিত হয় ও মাছ জলের মধ্যে নিজের অবস্থানের গভীরতা পরিবর্তন করে। পটকা বায়ুপূর্ণ হলে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে। ফলে মাছ ভেসে ওঠে। আবার পটকা বায়ুশূন্য হলে আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে মাছ জলে ডুবতে পারে।

রেটি মিরাবিলি (rete mirabile) কী?
অধিকাংশ অস্থিবিশিষ্ট মাছের পটকার পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে গ্যাস শোষণ করার উপযোগী যে রক্তজালকগুচ্ছ থাকে, তাকে রেটি মিরাবিলি (rete mirabile) বলে। এর দ্বারা পটকার অগ্র প্রকোষ্ঠের রেড গ্রন্থি নিঃসৃত গ্যাস শোষিত হয়। এভাবে পটকায় গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয় যা মাছকে জলের বিভিন্ন গভীরতায় বিচরণ করতে সাহায্য করে।
মুখ্য খেচর প্রাণী কাকে বলে?
যে সকল খেচর প্রাণী তাদের উৎপত্তির সময় থেকেই যথার্থভাবে খেচর বৈশিষ্ট্যে অভিযোজিত, তাদের মুখ্য খেচর প্রাণী বলে। যেমন – পায়রা, বাদুড়।

গৌণ খেচর প্রাণী কাকে বলে?
যে সকল প্রাণী বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে গৌণ অভিযোজনের মাধ্যমে খেচর বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে তাদের গৌণ খেচর প্রাণী বলে। যেমন – উড়ুক্কু মাছ, উড়ুক্কু ব্যাং।
পায়রার বায়ুথলির অভিযোজনে ভূমিকা কী?
পায়রার খেচর অভিযোজনে বায়ুথলিগুলি বায়ুপূর্ণ হলে দেহ সামগ্রিকভাবে হালকা হয় এবং বাতাসে ভাসতে সুবিধা হয়।
পায়রার বায়ুথলি নষ্ট হয়ে গেলে কী অসুবিধা ঘটবে উল্লেখ করো।
পায়রার বায়ুথলি নষ্ট হলে –
- দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব বেড়ে যাবে।
- শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত বায়ুর জোগান ব্যাহত হবে। এ ছাড়াও, মৃত্তিকা সংলগ্ন স্তরে বেশি অক্সিজেনযুক্ত বাতাস দেহের মধ্যে সঞ্চিত হবে না। সেজন্য বাতাসের উচ্চস্তরে ওড়ার সময় শ্বাসকার্যে অসুবিধা হবে।
- দেহের ভারসাম্য ও ভরকেন্দ্র সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না।
সুন্দরী গাছ তার দেহের অতিরিক্ত লবণ কীভাবে রেচিত করে?
সুন্দরী গাছের লবণ রেচনের পদ্ধতিগুলি হল –
- পাতায় লবণ গ্রন্থির উপস্থিতি যা জলের সাথে লবণ নির্গত করতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত লবণ বাকলের বিশেষ কোশ বা মূলের কোশে সঞ্চিত থাকে, যা বাকলমোচন বা অন্যান্য বিশেষ পদ্ধতি দ্বারা নির্গত হয়।
- সাধারণত কচি পাতার তুলনায় পরিণত পাতায় দেহের অতিরিক্ত লবণ সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজনমতো পত্রমোচনের দ্বারা সেই অতিরিক্ত লবণ নির্গত করে দেয়।
- কোশের ভ্যাকুওলগুলি আকৃতিতে বড়ো হওয়ায় এরা ভ্যাকুওলের কোশরসে লবণ সঞ্চয় করে এবং প্রয়োজনমতো দেহ থেকে সেটি নির্গত করে। এমনকি এদের মূল অধিক লবণ শোষণে এদের বাধা দান করে।
শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন কাকে বলে?
পরিবর্তিত পরিবেশে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য জীবদেহের বিবিধ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার যে সকল সুবিধাজনক উন্নত ও স্থায়ী পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনকে জীবের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলে। উদাহরণ – সুন্দরী গাছের সাধারণ মূলের শ্বাসমূলে রূপান্তর।
শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি কাকে বলে?
যে মাটিতে খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় মাটিতে পর্যাপ্ত জল থাকলেও উদ্ভিদ ওই জল শোষণ করতে পারে না সেই মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি বলে। এই মাটিতে অতিরিক্ত খনিজ লবণ (MgCl2, NaCl প্রভৃতি) থাকায় মাটির কৈশিক জলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে উদ্ভিদের মূলরোম অভিস্রবণ পদ্ধতির মাধ্যমে ওই জল প্রয়োজনমতো শোষণ করতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই ধরনের মাটি দেখা যায়।
লবণাম্বু উদ্ভিদ বা হ্যালোফাইট (halophyte) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে সকল উদ্ভিদ সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চলে বা নদীর মোহনায় লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় তাদের লবণাম্বু উদ্ভিদ বলে। যেমন – সুন্দরী, গরান, হেঁতাল ইত্যাদি।
শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর কাকে বলে?
লবণাক্ত মৃত্তিকায় বাতাবকাশ অত্যন্ত কম থাকে বলে মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত কম হয়। এই কারণে গরান, সুন্দরী প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য বিশেষ প্রকারের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন দেখা যায়। এদের শাখামূলগুলি অভিকর্ষের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে মাটির ওপরে উঠে আসে। এইজাতীয় মূলকে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর (pneumatophore) বলে। এইসব মূলের অগ্রভাগে কিছু শ্বাসরন্দ্র বা নিউম্যাথোড থাকে যার সাহায্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন সরাসরি গৃহীত হয়।
সুন্দরী গাছের অভিযোজনে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর কীভাবে সাহায্য করে?
অথবা, সুন্দরী গাছে শ্বাসমূলের গুরুত্ব লেখো।
লবণাম্বু উদ্ভিদের অভিযোজন হিসেবে সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এরা উপকূলবর্তী অঞ্চলে জন্মায়। এখানকার মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম থাকায় মূলতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়া যায় না। এই কারণে শ্বাসমূল গঠিত হয় যারা মাটির ওপরে উঠে আসে ও বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এইভাবে শ্বাসমূল লবণাক্ত পরিবেশে সুন্দরী গাছকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এটি একপ্রকার শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন।
উটের মরু অভিযোজনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
অথবা, মরুভূমিতে বসবাসের জন্য উটের দুটি জলসহন অভিযোজনের উল্লেখ করো।
- গাঢ় মূত্রত্যাগের ফলে এদের দেহ থেকে জলের নির্গমন কম হয়।
- নিশ্বাস ত্যাগের সময় উট যে জলীয় বাষ্প পরিত্যাগ করে তা নাসাপথে বিন্যস্ত মিউকাস স্তর দ্বারা পুনঃশোষিত হয়ে দেহে ফিরে যায় এবং জলক্ষয় রোধ করে।
উটের লোহিত কণিকা বা RBC -এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য কী?
অথবা, উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহন ক্ষমতার সাথে এদের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) বিশেষ চরিত্রটি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
অথবা, একসাথে অনেকটা জল পান করলেও উটের লোহিত কণিকা ফেটে যায় না কেন?
- উটের RBC নিউক্লিয়াসবিহীন হয় এবং সেই স্থান প্রান্তীয় ব্যান্ড (marginal band) পূর্ণ হয়। এই প্রান্তীয় ব্যান্ড আসলে হল একটি মোটা পট্টি-জাতীয় গঠন যা RBC অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকার আকৃতি যথাযথভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলি জলবিহীন অবস্থায় RBC থেকে জল নির্গমনে বাধা দেয়।
- RBC ডিম্বাকৃতি ক্ষুদ্র আকারের হয়, ফলে জলের অভাবে রক্ত ঘন হলেও রক্তবাহতে তার চলাচল সম্ভব হয়।
- উটের RBC অধিক জলপানের পরে 240% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই কারণে এদের লোহিত রক্তকণিকা আকস্মিক অভিস্রবণীয় চাপ সহ্য করতে পারে। তাই দীর্ঘদিন জলপান না করার পর অধিক জলপানেও উটের লোহিত রক্তকণিকা বিদীর্ণ হয় না।

শিম্পাঞ্জির বাদামের খোলা ভাঙার ক্ষেত্রে হাতুড়ি ও নেহাই -এর ব্যবহার সম্পর্কে লেখো।
শিম্পাঞ্জিরা পাথরের একটি শক্ত পাটাতনকে নেহাই হিসেবে ব্যবহার করে তার ওপর বাদাম রাখে। এরপর একটি গাছের ডাল হাতুড়ির মতো ব্যবহার করে সেটা দিয়ে বাদামের খোলা ভাঙে।
শিম্পাঞ্জিরা খাবার জন্য কীভাবে উইপোকা শিকার করে তা ব্যাখ্যা করো।
শিম্পাঞ্জিরা উইপোকা ধরার জন্য সাধারণত কোনো সোজা এবং সরু গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে, সেই ডালের পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলে। এরপর সেই ডালটিকে উইঢিবির মধ্যে ঢুকিয়ে গর্ত করে, এরপর যখন ওই ডালের গা বেয়ে উইপোকাগুলি উঠে আসে, তখন শিম্পাঞ্জিরা সেই ডাল চেটে উইপোকাগুলিকে ভক্ষণ করে। বলাবাহুল্য গাছের এই ডালগুলিকে শিম্পাঞ্জিরা ‘ফিশিং টুল’ হিসেবে ব্যবহার করে।
বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ কী জন্য বিখ্যাত?
বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ মৌমাছির ওপর গবেষণা করে মৌমাছির ভাষা আবিষ্কার করেন। শ্রমিক মৌমাছি কোনো স্থানে মিষ্টি ফুলের রসের সন্ধান পেলে মৌচাকে ফিরে এসে চাকের সামনে বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিতে নেচে সঙ্গীদের খাদ্যের অবস্থান জানিয়ে দেয়। মৌমাছিদের এই ধরনের বিশেষ ভঙ্গিগুলিকে তিনি লিপিবদ্ধ করেন এবং তার অর্থ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দেন।

স্কাউট কর্মী মৌমাছিগুলি মৌনৃত্য দ্বারা ফোরেজারদের কী তথ্য জানায়?
স্কাউট কর্মী মৌমাছি মৌনৃত্য দ্বারা ফোরেজারদের –
- মৌচাক থেকে খাদ্য উৎসের দূরত্ব।
- খাদ্যের ঘ্রাণ ও মান।
- মৌচাক থেকে খাদ্য উৎসের অভিমুখ সম্পর্কিত তথ্য জানায়।
মৌমাছির ওয়াগল নৃত্য বলতে কী বোঝ?
খাদ্যের উৎস মৌচাক থেকে 50-75 মিটার -এর বেশি দূরে অর্থাৎ 75-100 মিটার হলে স্কাউট মৌমাছিরা একবার ডান দিকে ও তারপর একবার বামদিকে লুপ তৈরি করে ইংরাজি ‘৪’ সংখ্যার আকৃতিতে এক বিশেষ ধরনের নৃত্য করে। লুপের মাঝে সরলরৈখিক অংশে তারা উদর অংশ আন্দোলিত বা ওয়াগল করে। এই বিশেষ প্রকৃতির নৃত্যকে ওয়াগল নৃত্য বলে।
মৌমাছির চক্রাকার নৃত্যের (রাউন্ড ডান্স) কারণ কী?
মৌচাক থেকে খাদ্য উৎসের দূরত্ব 50-75 মিটার -এর মধ্যে হলে মৌমাছি চক্রাকার নৃত্য বা রাউন্ড ড্যান্স করে। এই নাচ দেখে খাদ্যের উৎসের দূরত্ব সম্বন্ধে ফোরেজার বা খাদ্য সংগ্রাহক মৌমাছিরা জানতে পারে ও সেদিকে খাদ্য সন্ধানে ধাবিত হয়।
অভিযোজন ও অভিব্যক্তি – পার্থক্য লেখো।
অভিযোজন ও অভিব্যক্তির পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | অভিযোজন | অভিব্যক্তি |
ধারণাগত। | পরিবেশ ও বাসস্থানে ভালভাবে বাঁচার জন্য জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত পরিবর্তন। | কোনো জীব থেকে জিনগত ও ফিনোটাইপগত ব্যাপক পরিবর্তন দ্বারা নতুন জীবের আবির্ভাব। |
সময়কাল। | তুলনামূলক স্বল্প সময়কাল ব্যপী কার্যকর থাকে। | দীর্ঘ ও মন্থর পদ্ধতি। |
কার্যকারণ সম্পর্ক। | অভিযোজন হল অভিব্যক্তির অন্যতম একটি কারণ। | অসংখ্য অভিযোজনের সমন্বয় ও তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে অভিব্যক্তি ঘটে থাকে। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘আচরণ এবং অভিযোজন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন