আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ’ থেকে ‘জৈব রসায়ন’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানী ভোলার (1828) পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়াম সায়ানেট নামক অজৈব পদার্থ থেকে ইউরিয়া নামক জৈব যৌগ তৈরি করে প্রমাণ করেন জীবদেহের বাইরে প্রাণশক্তির সাহায্য ছাড়াই জৈব যৌগ প্রস্তুত করা যায়।
জৈব যৌগের মূল উপাদান কার্বন। এছাড়া জৈব যৌগে H, O, N, S, P, হ্যালোজেন ও কিছু কিছু ধাতব মৌল উপস্থিত থাকতে পারে।
যে বিশেষ ধর্মের জন্য কার্বন পরমাণুগুলি সমযোজী বন্ধন দ্বারা পরস্পর যুক্ত হয়ে সুস্থিত কার্বন-শৃঙ্খল গঠন করে তাকে কার্বনের ক্যাটিনেশন ধর্ম বলে।
যেসব জৈব যৌগের অণুর গঠনে পাশাপাশি থাকা সবগুলি C -পরমাণুই নিজেদের মধ্যে এক-বন্ধনে যুক্ত থাকে তাদের সম্পৃক্ত যৌগ বলে। যেমন – ইথেন, মিথেন ইত্যাদি।
যেসব জৈব যৌগের অণুর গঠনে পাশাপাশি থাকা দুটি কার্বন পরমাণুর মধ্যে দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধন থাকে তাদের অসম্পৃক্ত যৌগ বলে। যেমন – ইথিলিন, অ্যাসিটিলিন ইত্যাদি।
কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত জৈব যৌগগুলিকে হাইড্রোকার্বন বলে।
যেসব সক্রিয় মূলক জৈব যৌগের অণুতে উপস্থিত থেকে যৌগগুলির প্রকৃতি ও রাসায়নিক ধর্ম নির্ধারণ করে তাদের কার্যকরী মূলক বা ফাংশন্যাল গ্রুপ বলে।
একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট একাধিক যৌগ গঠনের ঘটনাকে সমাবয়বতা বা আইসোমেরিজম বলে। একই আণবিক সংকেতবিশিষ্ট ভিন্নধর্মী যৌগসমূহকে পরস্পরের আইসোমার বা সমাবয়ব বলে।
আণবিক গঠনের পার্থক্যের জন্য একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন ধর্মসম্পন্ন দুই বা ততোধিক যৌগ গঠিত হওয়ার ঘটনাকে গঠনগত সমাবয়বতা ও ভিন্ন ধর্মসম্পন্ন যৌগগুলিকে গঠনগত সমাবয়ব বলে।
একই মৌলসমূহ দ্বারা গঠিত ও একই সাধারণ সংকেত দ্বারা প্রকাশযোগ্য সমকার্যকরী মূলকযুক্ত সমধর্মী জৈব যৌগসমূহকে আণবিক ভরের ক্রমানুসারে সাজালে যদি একটি শ্রেণি উৎপন্ন হয় যার পরপর দুটি সদস্যের আণবিক সংকেতের পার্থক্য হয় CH2, তবে সেই শ্রেণিকে সমগণীয় শ্রেণি বলা হয় এবং শ্রেণিটির প্রতি সদস্যকে সমগণ বলা হয়।
বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়নবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জৈব যৌগসমূহের নামকরণের জন্য একটি সুশৃঙ্খল ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি রচিত হয়, যা IUPAC পদ্ধতি নামে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে এই নিয়মগুলির সংশোধন করা হয়েছে।
মিথেন (CH4), ইথিলিন (C2H4) ও অ্যাসিটিলিন (C2H2) যথাক্রমে অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইন সমগণীয় শ্রেণির হাইড্রোকার্বন, শিল্পক্ষেত্রে এদের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
আংশিক পাতন প্রক্রিয়ায় পেট্রোলিয়ামের পরিশোধনের সময় যে গ্যাসীয় অংশ পাওয়া যায় তাকে উচ্চচাপে তরলে পরিণত করে স্টিলের সিলিন্ডারে আবদ্ধ করে জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়। এটিই হল তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG)।
পেট্রোলিয়াম খনিতে তেলের ওপরে বা কয়লাখনিতে যে গ্যাসীয় পদার্থ আবদ্ধ অবস্থায় থাকে তাকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে। একে চাপ প্রয়োগে তরলে পরিণত করা হয় এবং একেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা CNG বলে। এটি জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
মিথেন অ্যালকেন শ্রেণির একটি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যা মূলত প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
ইথিলিন, অ্যালকিন শ্রেণির একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যা মূলত যুত বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ইথিলিনের পলিমার পলিথিনের বিভিন্ন ব্যাবহারিক প্রয়োগ রয়েছে।
অ্যাসিটিলিন, অ্যালকাইন শ্রেণির একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যা যুত বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
যে বিক্রিয়ায় বহুসংখ্যক সরল অণু পরস্পর সংযোজিত হয়ে উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন করে তাকে পলিমেরাইজেশন বিক্রিয়া বলে এবং এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থকে পলিমার বলে। যেমন – পলিথিন, PVC, টেফলন ইত্যাদি।
জৈব-অবিশ্লেষ্য কৃত্রিম পলিমারের ব্যবহারে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। কম খরচে জৈববিশ্লেষ্য পলিমার উৎপাদন সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত তুলো, কাঠ, কাগজ, পাট জাতীয় প্রাকৃতিক পলিমার ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
ইথাইল অ্যলকোহল, অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ডিনেচার্ড স্পিরিট বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ’ থেকে ‘জৈব রসায়ন’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষয়সংক্ষেপ দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।