এই আর্টিকেলে আমরা হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়ই এই প্রশ্নটি পরীক্ষায় উঠে আসে।
হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করাে।
হিমবাহ এবং জলধারা একসাথে কাজ করলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। এই ভূমিরূপগুলি সাধারণত হিমবাহের গলিত জল এবং জলধারার চলাচল দ্বারা তৈরি হয়। নিচে এমন কিছু ভূমিরূপের বর্ণনা দেওয়া হল:
বহিঃবিধৌত সমভূমি (Outwash Plain): হিমবাহের গলিত জল যখন গ্রাবরেখার প্রান্তভাগ দিয়ে ধীরে ধীরে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়, তখন সেই জল সঙ্গে নিয়ে সূক্ষ্ম বালু, কাদা, পলি ইত্যাদি নিয়ে আসে। এই উপাদানগুলি গ্রাবরেখার প্রান্তে জমা হয়ে বিশাল সমতল ভূমিরূপ তৈরি করে, যাকে বহিঃবিধৌত সমভূমি বলে। এই ভূমিরূপটি সাধারণত সমতল এবং ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হয়ে থাকে।চিত্র: বহিঃবিধৌত সমভূমির উদাহরণ।
ড্রামলিন (Drumlin): বহিঃবিধৌত সমভূমির উপর হিমবাহের মাধ্যমে বাহিত নুড়ি, বালি, কাদা, পলি ইত্যাদি জমা হয়ে একটি উল্টানো নৌকা বা চামচের মতো গঠন তৈরি হয়। এই ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে। ড্রামলিনের এক পিঠ একদম প্রশস্ত এবং অপর পিঠ ঝাঁকানো বা তীক্ষ্ণ হতে পারে। এটি সাধারণত হিমবাহের গতির দিক নির্দেশ করে।
কেম ও এস্কার (Kame and Esker):
- কেম (Kame): হিমবাহের গলিত জলের মধ্যে থাকা নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি জমা হয়ে পাহাড় বা দ্বীপের মতো আকৃতির গঠন তৈরি হয়। এর আকার ত্রিকোণাকার বা ঢেউয়ের মতো হয়ে থাকে এবং এটিকে কেম বলা হয়।
- এস্কার (Esker): হিমবাহের তলদেশে থাকা নুড়ি, বালি, কাদা ও পলি জমে একটি সংকীর্ণ, বাঁকানো শৈলশিরার মতো ভূমিরূপ তৈরি হয়, যা এস্কার নামে পরিচিত।
কেটল ও কেটল হ্রদ (Kettle and Kettle Lake): হিমবাহের গলিত জলের প্রভাবে, কখনও কখনও বিশাল বরফের টুকরা গলে গিয়ে ভূমিতে গর্ত তৈরি হয়। এই গর্তগুলি কেটল নামে পরিচিত। যখন এই কেটল গর্তে জল পূর্ণ হয়ে যায়, তখন সেখানে হ্রদ সৃষ্টি হয়, যাকে কেটল হ্রদ বলে। এটি সাধারণত ছোট এবং পানিতে পূর্ণ থাকে।
এই ভূমিরূপগুলির মধ্যে হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কাজের ফলস্বরূপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়, যা পরিবেশ ও ভূগোলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।