এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা 4
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
Contents Show

রামায়ণে রাবণকে রাক্ষস রাজা বলার তাৎপর্য কী?

রামায়ণে সম্ভবত বৈদিক সভ্যতার উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে বিস্তারের কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে অনার্য রাবণ আর্যবীর রামের কাছে পরাজিত হয়েছেন। তাই হেরে যাওয়া রাবণকে ভয়ংকর দেখানোর জন্য তাকে ব্যঙ্গ করে রাক্ষস রাজা বলা হয়।

রামায়ণে রাবণকে রাক্ষস রাজা বলার তাৎপর্য কী
রাবণ রাক্ষস

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার বলতে কী বোঝায়?

ভারতে প্রচলিত ভাষাগুলির একটি ভাষা পরিবার হল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার। ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরোপের অনেক ভাষাই এই ভাষা পরিবারের অন্তর্গত (যেমন – সংস্কৃত ভাষা) এদেরকে তাই একসঙ্গে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার বলা হয়। ঐতিহাসিকদের অনুমান এই ভাষাভাষীরা তৃণভূমি অঞ্চলের মানুষ ছিলেন।

রাম ও ইংরেজিতে রোমিং শব্দের মধ্যে মিল কোথায়?

সংস্কৃত রাম শব্দের অর্থ ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি। ইংরেজিতে রোমিং শব্দের অর্থ ঘোরা। রাম হলেন আর্য জাতির প্রতিনিধি। আর্যরা ঘুরতে ঘুরতে ভারতে এসে পৌঁছেছিলেন। তাই অর্থগত দিক থেকে এবং উচ্চারণের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে মিল রয়েছে।

রাম ও ইংরেজিতে রোমিং শব্দের মধ্যে মিল কোথায়
রাম ও ইংরেজিতে রোমিং শব্দের মধ্যে মিল কোথায়

আর্য কারা?

আর্য কারা এই নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে নানা মত আছে। যেমন –

  • ভাষা গোষ্ঠী – আর্য একটি ভাষার নাম। যারা আর্য ভাষায় কথা বলতেন তারা ‘আর্য’ নামে পরিচিত ছিল।
  • ভাষাগত অর্থ – আর্য শব্দটি এসেছে ‘অরি’ শব্দ থেকে এর অর্থ ‘নবাগত’ বা ‘নবাগতের প্রতি পক্ষপাতীত্ব’।
  • দৈহিক বিবরণ – খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে যে – দীর্ঘকায়, টিকালো নাক, গৌরবর্ণ বিদেশিরা ভারতে প্রবেশ করেছিল তারাই আর্য।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ব্যবহারকারীরা কোথাকার বাসিন্দা ছিলেন?

বেশিরভাগ পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ব্যবহারকারীরা কোনো তৃণভূমি অঞ্চলে বাস করতেন। যেমন –

  • শব্দের ব্যবহার – এই ভাষাতে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত শব্দ কম ব্যবহৃত হয়েছে।
  • ঐতিহাসিক ব্যবহার – ঐতিহাসিকেরা তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এই ভাষার ব্যবহারকারীরা মধ্য-এশিয়ায় তৃণভূমি অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন।

ইন্দো-ইরানীয় ভাষা বলতে কী বোঝো?

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার একটি শাখা হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা। ঋগবেদ ও জেন্দ অবেস্তায় ইন্দো-ইরানীয় ভাষার ব্যবহার হতে দেখা যায়। এই ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি হয়।

বৈদিক যুগ ক-টি ভাগে বিভক্ত এবং কী কী?

বৈদিক যুগ দুটি ভাগে বিভক্ত। যথা –

  • আদি বৈদিক যুগ – ঋগবেদ থেকে যে সময়ের ইতিহাস জানা যায় তা আদি বৈদিক যুগ নামে পরিচিত।
  • পরবর্তী বৈদিক যুগ – সাম, যজুঃ ও অথর্ববেদ থেকে যে সময়ের ইতিহাস জানা যায় তা পরবর্তী বৈদিক যুগ নামে পরিচিত। তবে যে সভ্যতা থেকে পুরো বৈদিক যুগের ইতিহাস জানা যায় তাকে বলে বৈদিক সভ্যতা।

ঋগবেদ ও জেন্দ অবেস্তায় ব্যবহৃত শব্দের অর্থগত কী পার্থক্য দেখা যায়?

ঋগবেদ ও জেন্দ অবেস্তায় ইন্দো-ইরানীয় ভাষার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। কিন্তু দুটি ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের অর্থগত বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন –

  • দেব – ঋগবেদে দেব বলতে দেবতা বা সম্মানীয় ব্যক্তিদের বোঝানো হত। অন্যদিকে জেন্দ অবেস্তায় দয়েব (দেব) বলতে ঘৃণিত ব্যক্তিদের বোঝাত।
  • অনুর – ঋগবেদ অসুর (অহ্বর) বলতে খারাপ ব্যক্তিদের বোঝানো হত। অথচ জেন্দ অবেস্তায় অহুর ছিলেন প্রধান দেবতা।

ঋগবেদের ভূগোল থেকে আদি বৈদিক সভ্যতার বিস্তৃতি সম্পর্কে কী তথ্য পাওয়া যায়?

ঋগবেদের ভূগোল থেকে জানা যায় যে –

  • বর্তমান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আদি বৈদিক সভ্যতা ছড়িয়ে পড়েছিল।
  • সিন্ধুনদ ও তার পূর্বদিকের উপনদী অঞ্চলই ছিল এ যুগের মানুষের বাসস্থান। ইতিহাসে এই অঞ্চলই ‘সপ্তসিন্ধু’ অঞ্চল নামে পরিচিত।

জেনে রাখো – হিন্দুদের অনেকের বিশ্বাস বেদ কোনো পুরুষ সৃষ্টি করেননি। ঈশ্বর বেদের সৃষ্টিকর্তা। তাই বেদকে বলা হয় অপৌরুষেয়। আবার বেদ শুনে শুনে মনে রাখতে হত। তাই বেদের অপর নাম শ্রুতি। যজুর্বেদ-এর দুটি ভাগ। যথা – শুকু ও কৃয়। অনেকে মনে করেন যজুর্বেদের যে অংশে গদ্য ও পদ্য মিশ্রিত আছে, তা হল কৃষ্ণ। আর যে অংশে গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণ নেই তা শুকু। বেদ সমূহকে ত্রয়ী বলা হয়। ঋক, সাম ও যজুঃ বেদকে একত্রে ত্রয়ী বলা হয়। অথর্ববেদে যজ্ঞের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকায় তাকে ত্রয়ীর মধ্যে ধরা হয়নি। ঋগবেদে গঙ্গা নদীর কথা একবার মাত্র বলা হয়েছে। যমুনা নদীর কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঋগবেদে বাঘের কথা বলা হয়নি। মনে হয় বাংলার সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় বাঘের সঙ্গেও পরিচিত হয়নি।

চতুরাশ্রম কী?

অথবা, চতুরাশ্রম – টীকা লেখো।

বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের জীবন চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। এই পর্যায়গুলিকেই একত্রে বলা হয় চতুরাশ্রম। এগুলি হল –

  • ব্রহ্মচর্য – ছাত্রাবস্থায় গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করা।
  • গার্হস্থ্য – শিক্ষালাভের পর প্রত্যেকের বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করে সংসার জীবনযাপন করা ছিল গার্হস্থ্য।
  • বাণপ্রস্থ – সংসার জীবন ত্যাগ করে, ধর্মচর্চার জন্য বনে বাস করাই বাণপ্রস্থ।
  • সন্ন্যাস – সংসারের মায়া কাটিয়ে ঈশ্বর চিন্তায় শেষ জীবন কাটানো হল সন্ন্যাস আশ্রম।

জান কি? – চতুরাশ্রমের অনুশাসনগুলি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা মেনে চললেও শূদ্ররা মেনে চলতে বাধ্য ছিল না।

বৈদিক সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, বৈদিক সাহিত্য – টীকা লেখো।

সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ নিয়ে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছে। এ ছাড়া আছে ছ-টি বেদাঙ্গ। যথা – শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ ও কল্প।

  • সংহিতা – সংহিতা হল ছন্দে বাঁধা কবিতা। সংহিতা কথার অর্থ হল সংকলন করা। সংহিতা আবার চারটি-ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব।
  • ব্রাহ্মণ – সংহিতাগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য গদ্যে লেখা অংশ ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত।
  • আরণ্যক – বাণপ্রস্থে থাকা অরণ্যচারী মানুষের যাগযজ্ঞ ও নানা চিন্তাভাবনা আরণ্যকে স্থান পেয়েছে।
  • উপনিষদ – বেদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা স্থান পেয়েছে উপনিষদে।

তুমি কোন ভাষায় কথা বলো? এই ভাষার জন্ম কীভাবে হয়েছে?

বাঙালি হিসেবে আমার মাতৃভাষা বাংলা, অর্থাৎ আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি। বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। সংস্কৃত ভাষা এসেছে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা থেকে। ইন্দো-ইরানীয় ভাষা আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার একটি শাখা।

ভাষাবিবর্তন – ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা –> ইন্দো-ইরানীয় ভাষা –> মাগধি প্রাকৃত (অপভ্রংশ) –> বাংলা ভাষা

চারটি বেদ কী কী? এদের সম্বন্ধে লেখো।

বেদ চারটি। যথা – ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ।

  • ঋগবেদ – পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখিত গ্রন্থ ঋগবেদ। আদি বৈদিক যুগের নানা তথ্য এখান থেকে পাওয়া যায়। ঋগবেদের সুক্তগুলি ছন্দে রচিত হয়েছে। এর অপর নাম ঋক্ সংহিতা। সংহিতা কথার অর্থ সংকলন করা।
  • সামবেদ – সামবেদ সংহিতার অনেকাংশই ঋগবেদর থেকে নেওয়া হয়েছে। সামবেদ সুর করে গানের মতো করে গাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।
  • যজুর্বেদ – যজুর্বেদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির প্রয়োজনীয় মন্ত্র সংকলিত করা আছে। যজুর্বেদে মন্ত্রগুলি কিছুটা পদ্যের আকারে কিছুটা গদ্যের আকারে লেখা হয়েছে।
  • অথর্ববেদ – অথর্ববেদে সংকলিত অংশগুলি মূলত জাদুমন্ত্র। বৈদিক যুগে এবং তার অনেক পরেও অথর্ববেদকে সংহিতা বলে গ্রাহ্য করা হত না।
বৈদিক সাহিত্য
বৈদিক সাহিত্য

সূত্র সাহিত্য বলতে কী বোঝো?

বৈদিক সাহিত্য জটিল হয়ে উঠলে তা শুদ্ধভাবে পাঠ, যাগযজ্ঞ ইত্যাদি করার জন্য সৃষ্টি হয় সূত্র সাহিত্য। সূত্র সাহিত্যের আবার দুটি ভাগ। যথা –

  • বেদাঙ্গ – বৈদিক সাহিত্যগুলি ঠিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য রচিত হয়েছিল বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ আবার ছটি ভাগে বিভক্ত। শিক্ষা (বিশুদ্ধ উচ্চারণ), ছন্দ (বেদের ছন্দ), ব্যাকরণ (ভাষা ব্যবহারের নিয়ম), নিরুক্ত (শব্দের উৎপত্তির ব্যাখ্যা), জ্যোতিষ (গ্রহ-নক্ষত্রের সম্বন্ধে জ্ঞান) কল্প (যাগযজ্ঞের নিয়ম)।
  • দর্শন – ছয়জন ঋষি দ্বারা ষড়দর্শন রচিত হয়েছিল। এগুলি যোগ, বৈশেষিক, হল সাংখ্য, ন্যায়, পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা।

উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত কেন?

বেদের পূর্ণতম পরিণতি ঘটেছে উপনিষদগুলির মধ্যে। বেদের শেষভাগ হল উপনিষদ। তাই উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত (বেদ+অন্ত)। বেদান্তে আত্মা, জীবাত্মা ও পরমাত্মা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কোন্ সময়কে বৈদিক সাহিত্যের রচনাকাল বলা হয়?

বৈদিক সাহিত্যের রচনাকাল নিয়ে নানারকম মত চালু আছে। মনে করা হয় আনুমানিক 1500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে বৈদেশিক সাহিত্যগুলি রচিত হয়েছে।

  • ঋবৈদিক যুগ – খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দ থেকে 1000 অব্দ পর্যন্ত সময়কাল ঋবৈদিক যুগ বা আদি বৈদিক যুগ বলে মনে করা হয়।
  • পরবর্তী বৈদিক যুগ – 1000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কাল পরবর্তী বৈদিক যুগ নামে পরিচিত।

সপ্তসিন্ধু অঞ্চল বলতে কী বোঝো?

প্রথম পর্বে বৈদিক সভ্যতা সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে বিস্তারলাভ করেছিল। সাতটি নদী অধ্যুষিত অঞ্চল সপ্তসিন্ধু নামে পরিচিত ছিল। এই সাতটি নদী হল – সিন্ধু, সরস্বতী, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, শতদ্র, ইরাবতী এবং বিপাশা।

বৈদিক যুগের প্রত্নস্থল থেকে কী কী জিনিসপত্র পাওয়া গেছে?

বৈদিক যুগের প্রত্নস্থল থেকে মানুষের ব্যবহার্য নানা জিনিসের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেমন – মাটির বাসনপত্র, লোহার তৈরি তিরের ফলা, বর্শার ফলা, আংটি, পেরেক, ছোরা, বড়শি প্রভৃতি। তা ছাড়া তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি গয়না, পশুর মূর্তি প্রভৃতিও পাওয়া গেছে।

বৈদিক যুগের প্রত্নস্থল সম্পর্কে আলোচনা করো।

যে-সমস্ত স্থান থেকে বৈদিক যুগের নানা নিদর্শন পাওয়া গেছে সেইসব স্থানকে বৈদিক যুগের প্রত্নস্থল বলা হয়। এইরকম প্রত্নস্থল হল – হরিয়ানার ভগবানপুরা, অত্রঞ্জিখেরা, হস্তিনাপুর, অহিচ্ছত্র, নোহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার পার্থক্য –

  • প্রকৃতি – প্রকৃতির দিক থেকে হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। কিন্তু বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা।
  • ধাতুর ব্যবহার – সিধুর অধিবাসীরা লোহার ব্যবহার জানত না। অথচ বৈদিক সভ্যতার মানুষেরা লোহার ব্যবহার জানত।
  • পশুর ব্যবহার – হরপ্পাবাসীরা ঘোড়ার ব্যবহার না জানলেও, বৈদিক সভ্যতার মানুষেরা তা জানত।
হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।
হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

বৈদিক সভ্যতার তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তোমার মতে কী কী হতে পারে?

বৈদিক সভ্যতা বর্তমান সভ্যতার প্রারম্ভকাল ছিল। এর তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • এক্কা গাড়ির ব্যবহার – বৈদিক সভ্যতায় ঘোড়ায় টানা এক্কা গাড়ির বহুল ব্যবহার দেখা যায়।
এক্কা গাড়ির ব্যবহার
এক্কা গাড়ির ব্যবহার
  • তির-ধনুকের ব্যবহার – বৈদিক সভ্যতায় অস্ত্র হিসেবে তির-ধনুকের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
  • গ্রামীণ সভ্যতা – বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা, গ্রামের নানা বৈশিষ্ট্য এই সভ্যতার প্রথমদিকে দেখা যায়।

বৈদিক রাজনীতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বৈদিক রাজনীতিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় –

  • রাজা – বৈদিক যুগে শাসককে রাজা বলা হত। গোষ্ঠীপতিরাই একসময় নরপতি বা রাজা হয়ে উঠেছিলেন, রাজা প্রজাদের সমস্যা মেটাতেন।
  • রাজনৈতিক সংগঠন – ঋবৈদিক যুগের একটি রাজনৈতিক সংগঠন ছিল বিদথ। আর পরবর্তী বৈদিক যুগে ছিল সভা ও সমিতি নামে দুটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
  • রত্নিন – বৈদিক যুগে রাজাকে শাসনকার্যে সহায়তা করতেন আজকের মন্ত্রীদের মতো রত্নিন নামক একটি গোষ্ঠী।

বৈদিক সভ্যতার মৃৎপাত্রগুলি কেমন ছিল?

বৈদিক সভ্যতার মৃৎপাত্রগুলির বৈশিষ্ট্য স্বরূপ বলা যায় –

  • একরকমের পাত্র – বৈদিক সভ্যতার মৃৎ-পাত্রগুলি একইরকমের বানানো হত।
  • ধূসর রং – এখানকার মৃৎপাত্রগুলি ধূসর রঙের হত। তাই সেগুলিকে ধূসর রঙের মৃৎপাত্র বলা হত।
  • চিত্রণ – মৃৎপাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের ছবি আঁকা থাকত।

দশরাজার যুদ্ধ কী?

ঋগবেদে দশটি রাজার জোট একত্রিত হয়ে ভরত গোষ্ঠীর রাজা সুদাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এই যুদ্ধ দশরাজার যুদ্ধ নামে পরিচিত।

পরিণতি – রাজা সুদাস দশরাজার জোটকে হারিয়ে দিয়েছিলেন, ফলে তার সুনাম ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

জেনে রাখো – অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় মন্ত্রপূত ঘোড়াকে ছেড়ে দেওয়া হত। ঘোড়া এক বছর স্বেচ্ছায় বিচরণ করত। ঘোড়াকে কেউ বাধা দিলে যুদ্ধ হত। বছরের শেষে ঘোড়া ফিরে এলে তাকে বলি দেওয়া হত।

বৈদিক যুগে রাজা হওয়ার পদ্ধতি কী ছিল?

বৈদিক যুগে নানা পদ্ধতিতে রাজা হওয়া যেত। যেমন –

  • যুদ্ধে জয়লাভ – যুদ্ধে জয়লাভ করে রাজা হওয়া যেত।
  • উত্তরাধিকার সূত্রে – জন্মগতভাবে বা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজার ছেলে রাজা হতে পারতেন।
  • নির্বাচনের মাধ্যমে – গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছায় রাজা হওয়া যেত।

সভা ও সমিতি বলতে তুমি কী বোঝো?

পরবর্তী বৈদিক যুগে সভা ও সমিতি নামে দুটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিল। রাজা এই প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন।

  • সভা – সভা ছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত একটি পরিষদ।
  • সমিতি – সাধারণ মানুষদের নিয়ে তৈরি হত সমিতি।

বৈদিক যুগে রাজারা যজ্ঞ করতেন কেন?

বৈদিক যুগে রাজারা অশ্বমেধ, রাজসূয়, বাজপেয় প্রভৃতি যজ্ঞ করতেন। এর কারণ হল –

  • যুদ্ধে জয়লাভের আশায় যজ্ঞ করতেন।
  • যুদ্ধে জয়লাভ করার পর যজ্ঞ করতেন।
  • নিজের নাম ও ক্ষমতা জাহির করতে রাজারা যজ্ঞ করতেন।
বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞ
বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞ

‘বলি’ বলতে কী বোঝো?

অথবা, বলি কী?

বৈদিক যুগে রাজাকে প্রজারা স্বেচ্ছায় এক ধরনের কর দিতেন। এর নাম ছিল বলি। প্রজারা নিরাপদে থাকার জন্য রাজাকে এই কর দিতেন, তবে পরবর্তী বৈদিক যুগে এই কর জোর করে প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা হত বলে মনে করা হয়।

ঋবৈদিক যুগের কৃষিকাজ কেমন ছিল?

ঋবৈদিক যুগ ছিল কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সভ্যতা। ফলে সমাজ ও অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ছিল বেশি।

  • জমি এই সময় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হত না।
  • কৃষিজ ফসলের মধ্যে যব ছিল প্রধান।
  • গম ও ধানের উৎপাদন হত কিনা তা জানা যায় না।

আদি বৈদিক সমাজে কারিগরি শিল্পের কী অবস্থা ছিল?

আদি বৈদিক সমাজে কারিগরি শিল্পের তেমন চল ছিল না। এ যুগে কাঠের কারিগরি শিল্পের কথা জানা যায়। এ সময় কাঠের আসবাব ও বাড়িঘর তৈরি করা হত। কাঠ দিয়ে বানানো হত রথ। আর চামড়া দিয়ে বানানো হত থলি, ঘোড়ার লাগাম প্রভৃতি। ভেড়ার লোম থেকে বানানো হত পোশাক। সোনার অলংকার, তামার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রমাণও এ যুগে পাওয়া যায়।

পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণাশ্রম প্রথার স্বরূপ কেমন দেখা যায়?

ঋগবেদে বর্ণাশ্রম প্রথা বোঝাতে ‘বর্ণ’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায় না। পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথা-র কঠোরতা দেখা যায়। সে-সময় ‘বর্ণ’ বলতে গায়ের রং বোঝাত না। এ সময় চারটি বর্ণ অর্থাৎ – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের পরিচয় পাওয়া যায়। এই চারটি বর্ণকে কেন্দ্র করে জন্মের ভিত্তিতে মানুষের পেশা ঠিক করা শুরু হয়। এ থেকেই জাতিভেদপ্রথা সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

বৈদিক যুগে বাণিজ্যের মাধ্যম কী ছিল?

বৈদিক যুগে বাণিজ্যের মাধ্যম ছিল প্রধানত –

  • বিনিময় প্রথা – বৈদিক যুগে প্রথম দিকে জিনিসের বদলে জিনিস বিনিময় প্রথায় কেনাবেচা চলত।
  • মুদ্রা ব্যবস্থা – নিষ্ক, মনা, শতমান নামক মুদ্রার মাধ্যমে। বাণিজ্য চলত বলেও জানা যায়।

বৈদিক যুগের সমাজ কেমন ছিল?

বৈদিক যুগের সমাজের বর্ণনাগুলি হল –

  • পরিবার – বৈদিক যুগে সমাজের ছোটো অংশ ছিল পরিবার। একই পরিবারের লোকেরা একসঙ্গে বসবাস করত।
  • বয়স্ক সদস্য – পরিবারের পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান। তাই বৈদিক সমাজকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ বলা হত।
  • নারীর স্থান – ঋবৈদিক যুগে সমাজে নারীর স্থান ছিল সম্মানের। কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর স্থান কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।

বৈদিক সমাজের বর্ণপ্রথা বলতে তুমি কী বোঝো?

বৈদিক সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল, যথা –

  • ব্রাহ্মণ – যাগযজ্ঞ, পূজার্চনা যাঁরা করতেন তারা ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত ছিলেন।
  • ক্ষত্রিয় – বৈদিক যুগে যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্য পরিচালনা যারা করতেন তারা ছিলেন ক্ষত্রিয়।
  • বৈশ্য – কৃষিকাজ, পশুপালন, শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বৈশ্যরা।
  • শূদ্র – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সম্প্রদায়কে যারা সেবা ও তাদের কাজের জন্য শ্রমদান করতেন তারা শূদ্র নামে পরিচিত ছিলেন।
বৈদিক সমাজের বর্ণপ্রথা বলতে তুমি কী বোঝো
বৈদিক সমাজের বর্ণপ্রথা বলতে তুমি কী বোঝো

বৈদিক যুগে কোন্ কোন্ পেশার কথা জানা যায়?

বৈদিক যুগের পেশাগুলি হল প্রধানত –

  • কামার, কুমোর, জেলে, চিকিৎসক প্রভৃতি পেশার অস্তিত্বের কথা জানা যায়।
  • ধনুক, ধনুকের ছিলা, তির তৈরির কারিগর ছিল।

বৈদিক সমাজে বর্ণপ্রথা ও জাতিপ্রথা কী?

বৈদিক সমাজে দুটি প্রথা প্রচলিত ছিল সেগুলি হল –

  • বর্ণপ্রথা – আদি বৈদিক যুগে পেশার ওপর নির্ভর করে বর্ণপ্রথা গড়ে উঠেছিল। তাই নানান পেশা বা জীবিকা অনুযায়ী আর্য-সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল, যথা – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। যদিও বর্ণপ্রথা তখন বংশানুক্রমিকভাবে গড়ে ওঠেনি।
  • জাতিপ্রথা – পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথা বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে। সমাজে উচ্চ ও নীচের ভেদাভেদ শুরু হয়। এর থেকে জন্ম নেয় জাতিপ্রথা।

বৈদিক যুগের শিক্ষা কেমন ছিল?

বৈদিক যুগে শিক্ষা পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপ –

  • শ্রুতি লিখন – বৈদিক যুগে ছাত্রকে শুনে শুনে মুখস্থ করতে হত। সে কারণে বেদের অপর নাম ছিল শ্রুতি।
  • ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক – এই সময় গুরু ও ছাত্রের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। গুরু গৃহে থেকে ছাত্রকে সদাচারের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে হত। ছাত্ররা সর্বদা মনে রাখত ‘গুরু আজ্ঞা শিরোধার্য’।
  • উপনয়ন ও সমাবর্তন – উপনয়ন নামক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ছাত্রজীবনের যাত্রা শুরু হত। আর লেখাপড়া শেষ হত সমাবর্তন নামক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে।

বৈদিক শিক্ষায় কোন্ কোন্ বিষয়ে পাঠদান করা হত?

বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষনীয় বিষয় কীভাবে এবং কখন পড়ানো হবে, তার সবটাই নির্ভর করত গুরুর ওপর। বৈদিক শিক্ষায় বেদ, গণিত, ব্যাকরণ, চিকিৎসা, ধনুর্বিদ্যা, নাচগান, অস্ত্রচালনা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত। পুস্তকনির্ভর বিদ্যার তুলনায় । বাস্তবনির্ভর শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হত।

বৈদিক সাহিত্যে রাজনীতি সম্পর্কিত তথ্য কীভাবে পাওয়া যায়?

বৈদিক সাহিত্য ধর্মীয় সাহিত্য হলেও তা থেকে রাজনীতির কথাও জানা যায়। তবে বেদে সরাসরি রাজনীতির কথা বলা | হয়নি। নানা প্রসঙ্গে রাজা-রাজাদের যুদ্ধ, (যেমন – দশরাজার যুদ্ধ) শাসনব্যবস্থা প্রভৃতির কথা বৈদিক সাহিত্য থেকে জানা যায়। বৈদিক সাহিত্যে রাজার কর্তব্য ও তাঁর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুটা আভাস পাওয়া যায়।

আদি বৈদিক যুগের বাণিজ্য কেমন ছিল?

আদি বৈদিক যুগে ব্যাবসাবাণিজ্যের বিশেষ চল ছিল না। ঋগ্বেদে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের কোনো উল্লেখ নেই। তবে পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে ব্যাবসাবাণিজ্যের বেশি উল্লেখ পাওয়া যায়। এযুগে জিনিসপত্র বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ক্রয়বিক্রয় করা হত। নির্দিষ্ট কোনো মুদ্রার প্রচলন এ যুগে না-থাকলেও নিষ্ক, শতমান প্রভৃতিকে অনেকে মুদ্রা রূপেই মনে করেছেন।

পরবর্তী বৈদিক যুগে নানা জাতির কীরূপ অবস্থা হয়?

পরবর্তী বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের অস্তিত্ব ছিল। তবে বৈদিক যুগের সমাজে বৈশ্য ও শূদ্রদের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এ যুগের সাহিত্যে বৈশ্যদের হেয় করে দেখানো হয়েছে। তবে এ সময় সবচাইতে খারাপ অবস্থা হয়েছিল শূদ্রদের। তারা কোনো সামাজিক সুযোগসুবিধা পেত না।

বৈদিক সাহিত্য – টীকা লেখো।

‘বেদ’ শব্দটি এসেছে ‘বিদ’ শব্দ থেকে। যার অর্থ জ্ঞান। পুরো বৈদিক সাহিত্য চার ভাগে বিভক্ত-সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। চারটি সংহিতা হল – ঋক, সাম, যজুঃ ও অর্থব। এইসব সাহিত্য বৈদিক সাহিত্য হিসেবে পরিচিত হয়। ঋগ্বেদ থেকে আদি বৈদিক সভ্যতা এবং অন্যান্য বেদ থেকে পরবর্তী বৈদিক সভ্যতার কথা জানা যায়। এ ছাড়া বৈদিক সাহিত্যের মূলতত্ত্ব নির্ভুলভাবে বোঝাতে সূত্র সাহিত্য রচিত হয়। এর দুটি ভাগ হল বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শন।

জেনে রাখো – বেদাঙ্গগুলি হল – শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ, কল্প। ষড়দর্শনগুলি হল – কপিলের সাংখ্য, পতঞ্জলির যোগদর্শন, গৌতমের ন্যায় দর্শন, কণাদের বৈশেষিক দর্শন, জৈমিনীর পূর্ব মীমাংসা, বেদব্যাসের উত্তর মীমাংসা।

বেদ থেকে ভূগোলের কী কী তথ্য জানা যায়?

বেদ তথা বৈদিক সাহিত্য থেকে পৃথিবীর নানা স্থান, পর্বত ও নদীর কথা জানা যায়। ঋগবেদে হিমালয় ও কাশ্মীরের মূজবন্ত শৃঙ্গের উল্লেখ আছে। ঋগবেদে সিন্ধু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদীরূপে উল্লেখিত হয়েছে। এতে গঙ্গা ও যমুনা নদীর খুব কম উল্লেখ পাওয়া যায়।

ঋগবেদে রাজাকে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?

ঋগবেদে নানাভাবে ‘রাজা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ যুগের রাজা ‘বিশপতি’ বা গোষ্ঠীর প্রধান রূপে পরিচিত হতেন। তিনি আবার ‘গোপতি’ বা গবাদি পশুর প্রভু বলেও পরিচিত হতেন। পরে অবশ্য রাজা পরিচিত হতেন ‘ভূপতি’ বা জমির মালিক রূপে। এ যুগে রাজার অন্য নাম ছিল ‘মহীপতি’ অর্থাৎ পৃথিবীর রাজা। তিনি ‘নরপতি’ রূপেও অভিহিত হতেন।

লোহার আবিষ্কার বৈদিক সভ্যতায় কী প্রভাব ফেলেছিল?

পরবর্তী বৈদিক যুগে লোহা আবিষ্কৃত হয়। এর ফলে –

  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত লাঙলের ফলা ও অন্যান্য লোহার যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • জঙ্গল কেটে বসতি নির্মাণ ও জমি উদ্ধারে বিশেষ সুবিধা হয়।
  • সমাজে ক্ষত্রিয়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।
  • ধাতুশিল্প ও কারিগরের উদ্ভব হয়।

বৈদিক সমাজের কারিগরি শিল্পের পরিচয় দাও।

বৈদিক যুগে কারিগরি শিল্পীদের মধ্যে ছিল –

  • কাঠের কারিগর – বৈদিক যুগে আসবাবপত্র, বাড়িঘর, রথ তৈরি করার জন্য কাঠের কারিগরের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
  • চামড়া শিল্পের কারিগর – চামড়া দিয়ে থলি, ঘোড়ার লাগাম তৈরি হত। ভেড়ার লোম থেকে পোশাক বানানোর জন্য চামড়া শিল্পের কারিগর ছিল বলে জানা যায়।
  • বস্ত্র শিল্পের কারিগর – বৈদিক যুগে কাপড় বোনার জন্য বস্ত্রশিল্পের কারিগর ছিল।
  • ধাতুর কারিগর – তামা, ব্রোঞ্জ এবং লোহা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করার জন্য ধাতু শিল্পের কারিগর ছিল।
চামড়ার থলি ও ঘোড়ার লাগাম
চামড়ার থলি ও ঘোড়ার লাগাম

সংহিতা বলতে কী বোঝো?

ভারতের আদি সাহিত্য বেদ চারভাগে বিভক্ত, যথা – ঋগবেদ, সামবেদ, যজুবেদ ও অথর্ববেদ। আবার প্রতিটি বেদ চারভাগে বিভক্ত। এগুলির প্রথম ভাগকে বলা হয় সংহিতা।

বেদাঙ্গ কী? বেদাঙ্গ সংখ্যায় কয়টি ছিল?

বেদ-এর মূল তত্ত্ব সংক্ষেপিত হয়েছে সূত্র-সাহিত্যে। যথা – বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শন। আবার এই বেদাঙ্গ ছয়টি ভাগে বিভক্ত, যথা – শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ ও কল্প। বেদাঙ্গ রচনার উদ্দেশ্য ছিল বৈদিক সাহিত্যগুলি সঠিকভাবে উচ্চারণ করা ও পড়া।

দশ রাজার যুদ্ধের বিবরণ দাও।

বৈদিক যুগে আর্য সমাজ কতকগুলি উপজাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল।

  • এদের মধ্যে গবাদি পশু ও তার চারণভূমি নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত এবং যুদ্ধ হত।
  • এরূপ একটি দ্বন্দ্বের উল্লেখ আছে ঋগ্বেদের নবমমণ্ডলে। জানা যায় ভরতগোষ্ঠীর রাজা দিবদাসের পুত্র সুদাস তাঁর কুলোপুরোহিত বিশ্বামিত্রকে সরিয়ে বশিষ্ঠ মুনিকে স্থাপন করলে বিশ্বামিত্র ক্ষুদ্ধ হন। তিনি 10 জন রাজা বা গোষ্ঠীকে যদু, পুরু, অনু, দুহা, অলিকা, শিব) সংঘবদ্ধভাবে সুদাসের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। এই যুদ্ধই ইতিহাসে 10 রাজার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
  • এই যুদ্ধে সুদাস জয়ী হন।

মেগালিথ – টীকা লেখো।

অথবা, মেগালিথ সম্বন্ধে যা জানো লেখো।

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে মধ্য ও দক্ষিণভারতে মৃতদেহ সৎকার করার জন্য বড়ো বড়ো পাথর দিয়ে যে কবরস্থল নির্মাণ করা হত, সেগুলিকে মেগালিথ বলা হয়।

  • ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এরূপ মেগালিথ খুঁজে পাওয়া গেছে, যেমন – বুরজাহোম (কাশ্মীর), ভরতপুর (রাজস্থান), ইনামগাঁও (মহারাষ্ট্র)। তবে মেগালিথগুলি বেশি দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতে।
  • এইসব মেগালিথ বা কবরগুলিতে পাওয়া গেছে মৃতদেহের কঙ্কাল। মৃতদেহগুলি সমাহিত করার সময় তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দেওয়া হত, যেমন – বাসনপত্র, সোনা-ব্রোঞ্জের তৈরি অলংকার, পোড়ামাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র ও বিভিন্ন জীবজন্তু।
  • এই সমস্ত মেগালিথগুলি নানা ধরনের ছিল। যেমন – পাথরের ওপর পাথর দিয়ে সাজানো মেগালিথ ও পাথর কেটে গুহার মতো মেগালিথ।
  • মেগালিথগুলিতে প্রাপ্ত জিনিসপত্রের নমুনা দেখে বোঝা যায় যে, সেযুগে সমাজে ধনী দরিদ্রের তফাৎ ছিল। এমন কিছু মোগালিথের পরিচয় পাওয়া যায়, যেখানে পরিবারের সকল সদস্যকে একজায়গায় সমাহিত করা হয়েছে।

ঋবৈদিক যুগে মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-অলংকার সম্পর্কে কী জানো?

বিভিন্ন ঋকবৈদিক সাহিত্যে সেযুগের মানুষের খাদ্য-বস্ত্র- অলংকার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, যেমন – এযুগে আর্যরা আমিষ ও নিরামিষ দুধরনের খাদ্য গ্রহণ করত। এছাড়া খাদ্যের তালিকায় ছিল – ভাত, রুটি, দুধ, ঘি, ছানা, মাছ, মাংস, ডিম, ফলমূল ইত্যাদি। পুরোডাশ বা পিঠা তাদের খুব প্রিয় ছিল। উৎসবের সময় তারা সোমরস নামক এক উত্তেজক তরল পান করত। আর্যরা সুতি ও পশমের পোশাক পরত। পোশাকের তিনটি অংশ ছিল, যথা – নিবি, বাস ও অধিবাস। নারী-পুরুষরা পাগড়ি পরত। শয্যায় হরিণের চামড়া ব্যবহার করা হত। মেয়েরা স্বর্ণালঙ্কার পরিধান করত। সোনা, রুপো, তামা ও দামি পাথরের তৈরি অলংকারের তালিকায় ছিল-বাজু, বলয়, নূপুর ইত্যাদি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, “ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন