আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, ‘সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)’ অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
সাম্রাজ্য – টীকা লেখো।
অথবা, সাম্রাজ্য বলতে কী বোঝো?
সাম্রাজ্য হল একটি বিরাট অঞ্চল। যেখানে কয়েক লক্ষ জনগণ বাস করে। অনেকগুলি রাজ্য মিলে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। সাম্রাজ্য যিনি শাসন করতেন তাকে বলা হত সম্রাট। তিনি ‘রাজাধিরাজ নামেও পরিচিত হতেন।
সাম্রাজ্য গঠন – এই ধরনের সাম্রাজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্য দখল করে গঠিত হত। তার ফলে তৈরি হত এক বড়ো শাসন এলাকা। এই এলাকার শাসক অর্থাৎ সম্রাট যজ্ঞ করতেন ও বড়ো উপাধি গ্রহণ করতেন।
জেনে রাখো – সৌর্যোত্তর যুগে ভারতবর্ষে শাসনকারী রাজবংশের তালিকা –
বংশ | রাজাগণ |
ক. শুঙ্গ | পুষ্যমিত্র, অগ্নিমিত্র, বসুজ্যেষ্ঠ, বসুমিত্র, দেবতুমি |
খ. কাম্ব | ভূমিমিত্র, নারায়ণ, সুশর্মন |
গ. চেদি | খারবেল |
ঘ. ইন্দো-গ্রিক | ডিমিট্রিয়াস, মিনান্দার |
ঙ. শক | মোয়েস বা ময়েস, নহপান, রুদ্রদামন |
চ. পত্নব | গন্ডোফারনেস |
ছ. কুষাণ | কুজুল কদফিসেস, বিম কদফিসেস, কনিষ্ক, ছুবিষ্ক |
মগধে কীভাবে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়?
শিশুনাগ বংশের পর মগধে রাজত্ব শুরু করে নন্দ রাজারা। এই নন্দ রাজারা ছিলেন অত্যাচারী। তাই জনগণের কাছে তাঁরা অপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে ধননন্দ ছিলেন খুবই অত্যাচারী শাসক। এই অবস্থায় মৌর্য বংশীয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। চাণক্যকে সঙ্গে নিয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং যুদ্ধে নন্দরাজের সেনাপতি ভদ্রশালককে পরাজিত করে মগধে মৌর্য রাজবংশ তথা মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
মৌর্য শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখো।
অথবা, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনব্যবস্থা ও মৌর্য সাম্রাজ্য চালানোর নানা দিক সম্পর্কে বিবরণ দাও।
অর্থশাস্ত্র, ইন্ডিকা ও অশোকের বিভিন্ন লিপি থেকে মৌর্য শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। সাধারণভাবে মৌর্য শাসনব্যবস্থা বলতে বোঝায় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থাকেই।
- কেন্দ্রীয় শাসন – মৌর্য শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা। তাঁকে সাহায্য করতেন একটি মন্ত্রীপরিষদ। অমাত্যরা শাসন পরিচালনা করতেন। এঁরা ছিলেন – মন্ত্রিণ, সমাহর্তা, সন্নিধাতা প্রভৃতি। এ ছাড়া 32 জন অধ্যক্ষের নাম পাওয়া যায়।
- প্রাদেশিক শাসন – সমগ্র সাম্রাজ্য কতকগুলি প্রদেশে ভাগ ছিল, প্রদেশগুলি জেলা এবং জেলাগুলি গ্রামে বিভক্ত ছিল। জেলা ও গ্রামের শাসককে বলা হত প্রাদেশিক ও গোপ। নগরগুলিতে ছিল পৌরশাসন। 30 জন সদস্য নিয়ে গঠিত হত পৌরবোর্ড।
- অন্যান্য – মৌর্য বাহিনীর ছয়টি ভাগ ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – পদাতিক, অশ্বারোহী, রথারোহী, হস্তীবাহিনী প্রভৃতি। সম্রাট স্বয়ং সর্বোচ্চ বিচারক ছিলেন। বিচারকার্য চালাতেন মহামাত্র ও রাজকগণ। সেসময় 18 রকম শাস্তি ছিল। জানা যায়, তখন প্রজাদের কাছ থেকে ভূমিরাজস্ব হিসেবে উ অংশ ফসল নেওয়া হত।
অশোক যখন কলিঙ্গ আক্রমণ করেন, তখন কলিঙ্গের রাজা কে ছিলেন? এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল?
দুঃখের বিষয় প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের অভাবহেতু কলিঙ্গ । যুদ্ধের সময় কলিঙ্গের রাজা কে ছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না।
কলিঙ্গ যুদ্ধের ফল – কলিঙ্গ যুদ্ধের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী যেমন –
- কলিঙ্গ রাজ্যটি যুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ায় তার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল অপরিসীম।
- কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক যুদ্ধবিজয় নীতি ত্যাগ করেন এবং ধর্মবিজয় নীতি দ্বারা মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করতে এগিয়ে আসেন।
- তিনি যুদ্ধের পর থেকে জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োগ করেন।
জেনে রাখো – কলিঙ্গ রাজ্য ও কলিঙ্গ যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুকথা –
ক. কলিঙ্গের অবস্থান – | সুবর্ণরেখা নদী ও গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল |
খ. কলিঙ্গের রাজধানী – | তোষালি |
গ. কলিঙ্গের রাজা – | নাম জানা যায় না |
ঘ. যে নদীর তীরে যুদ্ধ হয় – | তার নাম দয়া নদী |
ঙ. কলিঙ্গের শ্রেষ্ঠ রাজা – | খারবেল |
কলিঙ্গ যুদ্ধ অশোকের জীবনে কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল?
মৌর্য সম্রাট অশোক সারা জীবনে কেবলমাত্র একটি যুদ্ধ করেন সেটি হল কলিঙ্গ যুদ্ধ। কলিঙ্গ যুদ্ধে বহু মানুষ মারা যায়, যা অশোককে গভীরভাবে ব্যথিত করে। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা মৌর্য সম্রাট অশোককে এতটাই প্রভাবিত করে যে তিনি যুদ্ধনীতি ত্যাগ করে মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করার জন্য ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্তের নিকট বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন। পাশাপাশি তিনি পশুহত্যা নিষিদ্ধ করেন এবং সব মানুষ যাতে ভালোভাবে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করেন।
অশোকের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের পরিধি সম্পর্কে কী জানো?
কলহনের রাজতরঙ্গিণী থেকে জানা যায় যে, উত্তরে। কাশ্মীর অশোকের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। শাহবাজগাঢ়ি (পেশোয়া) ও মানসেরা (পাকিস্তান) শিলালিপি প্রমাণ করে যে, উত্তর – পশ্চিমে অশোকের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য আফগানিস্তান ও সিন্ধুদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণে তাঁর সাম্রাজ্য মহীশূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমে অশোকের সাম্রাজ্য সৌরাষ্ট্র ও আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সীমানা নির্দেশকারী গিরনার লিপি ও সোপারা লিপি-এর সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু পূর্বদিকে অশোকের কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হয় যে, পূর্বদিকে সমতট ও কর্ণসুবর্ণ পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
সম্রাট অশোকের লেখগুলির গুরুত্ব কী?
অশোকের লেখগুলির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, যেমন – অশোকের স্তম্ভলেখগুলি প্রাচীন ভারতের শিল্পচেতনার এক অনন্য নমুনা। আমরা জেনেছি যে, অশোকের লিপিতে ব্যবহৃত ব্রাহ্মী অক্ষরমালা এবং প্রাকৃত ভাষা থেকে ভারতের অধিকাংশ আঞ্চলিক বর্ণ ও ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত শিলালিপিগুলি থেকে অশোকের সাম্রাজ্য কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তা জানা যায়।
জেনে রাখো – অশোকের লিপি সংক্রান্ত তথ্য –
ক. লিপির ধরন – | পর্বত লিপি, স্তম্ভলিপি |
খ. লিপির ভাষা – | প্রাকৃত |
গ. লিপির বর্ণ – | ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠি |
ঘ. কে পাঠোদ্ধার করেন – | স্যার প্রিন্সেপ, ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে |
মৌর্য শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল?
মৌর্য শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত। এই শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে ওপরে ছিলেন সম্রাট নিজে। সম্রাটই ছিলেন শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। বিচারব্যবস্থাতেও সম্রাটের কর্তৃত্ব ছিল সর্বোচ্চ। মৌর্য আমলে অনেকগুলো প্রধান শাসন এলাকা গড়ে উঠেছিল, যা রাজ্যশাসন এলাকা নামে পরিচিত ছিল।
রাজকর্মচারীরা সম্রাটের শাসনকাজে সাহায্য করতেন। তাদেরকে অমাত্য বলা হতো। এছাড়া, শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় মন্ত্রী পরিষদও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। অমাত্যদের মধ্যে তিন ধরনের পদ ছিল।
সম্রাট অশোকের শাসনব্যবস্থা ছিল বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। তার শাসনব্যবস্থায় মহামাত্রদের (বিশেষ কর্মকর্তারা) ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, মেয়েদেরও মহামাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো। শাসনকাজে সেনাবাহিনী ও গুপ্তচররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।
মৌর্য শাসনব্যবস্থায় সম্রাট অশোক কী কী পরিবর্তন এনেছিলেন?
সম্রাট অশোকের শাসনব্যবস্থা মৌর্য শাসনব্যবস্থাকে আরও জনমুখী করে তুলেছিল। তিনি কিছু বিশেষ পরিবর্তন করেছিলেন –
- পিতৃতান্ত্রিক রাজাদর্শ – মৌর্য শাসনব্যবস্থা ছিল স্বৈরতান্ত্রিক, তবে অশোক পিতৃতান্ত্রিক রাজাদর্শ (এমন শাসনব্যবস্থা যেখানে রাজা নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন) যুক্ত করেন। এর মাধ্যমে তিনি সম্রাটের প্রতি মানুষের আনুগত্য এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করেছিলেন।
- বিচারব্যবস্থা – অশোক তার বিচারব্যবস্থায় দণ্ড সমতা (অর্থাৎ অপরাধীদের জন্য সমান শাস্তি) এবং ব্যবহার সমতা নীতি প্রয়োগ করেন। তিনি মৃত্যুদণ্ড তুলে দেন এবং বিভিন্ন ধরণের শাস্তির পরিবর্তে পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা চালু করেন।
- রাজবন্দিদের মুক্তি – অশোক প্রতি অভিষেক বার্ষিকীতে রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে থাকতেন, যাতে জনগণের মধ্যে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়।
- রাজকর্মচারী নিয়োগ – অশোক নতুন কিছু রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন, যেমন – ধর্মমহামাত্র, স্ত্রীমহামাত্র, ব্রজভূমিক ইত্যাদি।
ভারতের ইতিহাসে ইন্ডিকা গ্রন্থটির গুরুত্ব কী?
ইন্ডিকা গ্রন্থ – টীকা লেখো
ম্যাসিডনের রাজা সেলিউকাসের দূত হিসেবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দরবারে আসেন মেগাস্থিনিস। তিনি ভারতবর্ষ সম্পর্কে একটি গ্রন্থ লেখেন যার নাম ছিল ইন্ডিকা। এই গ্রন্থ থেকে আমরা মৌর্যযুগ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারি।
ইন্ডিকা গ্রন্থের গুরুত্ব –
- রাজধানী পাটলিপুত্র – ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৌর্যদের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র, যা ছিল একটি সমৃদ্ধশালী শহর।
- নৈতিক মানের উঁচু স্তর – এই যুগে মানুষের নৈতিক মান ছিল খুব উঁচু। সমাজে চুরি, ডাকাতি খুব কম ছিল এবং জনগণ সাধারণত সৎ ছিল।
- সমাজের শ্রেণি ব্যবস্থা – সমাজ ছিল ৭টি শ্রেণিতে বিভক্ত।
- ব্রাহ্মণদের প্রভাব – সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রভাব ছিল অত্যন্ত বড়। তারা ধর্মীয় এবং সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতেন।
- মেয়েদের স্বাধীনতা – তবে, এই সময়ে মেয়েদের স্বাধীনতা কমে গিয়েছিল এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সীমিত ছিল।
- কৃষি ও বাণিজ্য – কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা, তবে মৌর্য যুগে বাণিজ্যও অনেক উন্নতি করেছিল।
- রাজাই জমির প্রকৃত মালিক – সে যুগে রাজাই ছিলেন জমির প্রকৃত মালিক। রাজা রাজস্ব আদায় করতেন এবং জনগণের শস্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতেন।
মৌর্য আমলে রাজস্বব্যবস্থার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করো।
মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল বিরাট সাম্রাজ্য। এই বিশাল সাম্রাজ্যের খরচ চালানোর জন্য সম্রাটরা প্রজাদের কাছ থেকে কর নিতেন।
- কর বা রাজস্বের উৎস – মৌর্য আমলে রাজস্বের বেশিরভাগই আসত কৃষি রাজস্ব থেকে। ফসলের ভাগ প্রজাদের রাজস্ব হিসেবে দিতে হত।
- বলি ও ভাগ – বলি ও ভাগ নামের দু-রকম ভূমিরাজস্ব মৌর্য আমলে চালু ছিল।
- কর ছাড় – সম্রাট মনে করলে কর ছাড় দিতে পারতেন। যেমন – সম্রাট অশোক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী গ্রামে বলি নামে কর ছাড় দিয়েছিলেন।
- অন্যান্য কর – কারিগর, ব্যবসায়ী, বণিক সবার থেকে কর আদায় করা হত।
সম্রাট অশোক ‘ধম্ম’ কথাটি প্রথম কোন্ লেখাতে ব্যবহার করেন? তাঁর ধম্ম সম্পর্কে কী জানো?
অথবা, সম্রাট অশোকের ধম্মে উল্লেখিত সামাজিক আচরণ-গুলি লেখো।
সম্রাট অশোক ‘ধৰ্ম্ম’ বা ধর্ম কথাটি সর্বপ্রথম মাস্কি লেখাতে ব্যবহার করেন।
অশোকের ‘ধম্ম’ – অশোকের ‘ধম্ম’-এর মূল কথা ছিল অহিংসা ও শান্তি। তাঁর ধম্ম ছিল সরল ও ব্যবহারিক। ধম্ম বিষয়ে তিনি সপ্তম স্তম্ভ লেখাতে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল –
নীতি – সত্যবাদিতা, শুচিতা, ভদ্রতা, চারিত্রিক দোষ থেকে মুক্তি ইত্যাদি।
পালনীয় কর্তব্য – তাঁর ধম্মের পালনীয় কর্তব্যগুলি ছিল– প্রাণী হত্যা না করা, পিতামাতা, বয়স্ক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভৃত্যদের প্রতি উদারতা, অল্প ব্যয় ও অল্প সঞ্চয় ইত্যাদি।
কর্মচারী নিয়োগ – তিনি ধর্মপ্রচারের জন্য যুত, রাজুক, মহামাত্র, প্রাদেশিক প্রভৃতি শ্রেণির রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
ধর্মমহামাত্র নিয়োগ – প্রজাদের মঙ্গলসাধনের জন্য তিনি ধর্মমহামাত্র নামে এক শ্রেণির রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
সম্রাট অশোকের জীবপ্রেমের পরিচয় দাও।
অহিংসা ও শান্তির পূজারি ছিলেন সম্রাট অশোক। তাঁর চরিত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল পশুপ্রেম।
- তিনি তাঁর সাম্রাজ্যে পশু ও প্রাণী হত্যা বন্ধ করার জন্য ঘোষণা করেছিলেন – ‘অনারম্ভ প্রাণনাম’ (প্রাণী হত্যা না করা)।
- মানুষ যাতে প্রাণীর কোনো ক্ষতি না করে তার জন্য প্রচার করেন – ‘অভিহিশ ভূতানাম।’
- তিনি ঘোষণা করেন – এক প্রাণী অন্য প্রাণীর খাদ্য হতে পারে না। তাই তিনি পশুপাখিদের মারলে বনবাসীদের শাস্তির কথাও বলেছিলেন।
- তিনি স্বয়ং পশু শিকার অভিযান বন্ধ করেছিলেন।
- শুধু তাই নয় পশু চিকিৎসার জন্য তিনি চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন এবং তার জন্য বিদেশ থেকে ঔষধি, গাছগাছড়া নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করেছিলেন।
অশোকের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে কী জানো?
সম্রাট অশোকের অষ্টম শিলালেখতে ধর্মযাত্রা এবং ত্রয়োদশ শিলালেখতে ধর্মবিজয় নীতির উল্লেখ আছে।
- দূত বিনিময় – মহাবংশ থেকে জানা যায় যে, পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির পর তিনি বিদেশি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে দূত বিনিময় করেন।
- ধর্ম প্রচার – মগধের পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিংহলে তিনি নিজের কন্যা সংঘমিত্রা ও পুত্র মহেন্দ্রকে ধর্ম প্রচারের জন্য দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। জানা যায় সিংহলরাজ তিষ্য বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।
- ধর্মদূত প্রেরণ – এ ছাড়া তিনি আফ্রিকা, সিরিয়া, ইজিপ্ট, সাইরিন, গ্রিস (এপিরাস) প্রভৃতি দেশে ধর্মদূত প্রেরণ করেন। তিনি নেপালে অনেক বৌদ্ধমঠ নির্মাণ করেন। শেষ বয়সে তিনি তিব্বত ও নেপাল ভ্রমণ করেছিলেন।
কুষাণ কারা? ভারতে কীভাবে কুষাণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
কুষাণরা ছিল মধ্য এশিয়া থেকে আগত একটি যাযাবর জাতি, যারা আফগানিস্তান হয়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে আসে। এদের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শাখা ছিল কু-এই- ঘুয়াং। তারা ব্যাকট্রিয়া দখল করে। এরাই ভারতের ইতিহাসে কুষাণ নামে পরিচিত।
ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা – কুষাণ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ছিল কুজুল কদফিসেস-এর। কাবুল ও কাশ্মীর এলাকা তাঁর অধিকারে ছিল। তিনি খ্রিস্টপূর্ব 15-65 অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এরপর শাসক হন কুজুলের পুত্র বিম কদফিসেস। সিন্ধুনদের অববাহিকা অঞ্চলে বিম কদফিসেসের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সম্রাট প্রথম কনিষ্কের সিংহাসন আরোহণকাল নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে কী বিতর্ক রয়েছে তা আলোচনা করো।
কুষাণরাজ প্রথম কনিষ্কের সিংহাসন আরোহণকাল নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে বিতর্কের শেষ নেই, যেমন –
- ঐতিহাসিক ক্লিট ও কানিংহাম তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় ধরেছেন 58 অব্দ।
- মার্শাল, ড.স্মিথের মতে, এই সময় হল 125-128 অব্দের মধ্যে।
- ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, কনিষ্ক 248-249 অব্দের মধ্যে ক্ষমতায়অধিষ্ঠিত হন।
- ড. ভান্ডারকর 278 খ্রিস্টাব্দকে কনিষ্কের সিংহাসন আরোহণকাল চিহ্নিত করেছেন।
- ফার্গুসন ও র্যাপসনের মতে, এই সময় হল 78 অব্দ এবং কনিষ্ক শকাব্দ-। এর প্রচলন করেন। এই মতের সমর্থক ড. দীনেশচন্দ্র সরকার, ড. ব্রতীন্দ্রনাথ মুখার্জি প্রমুখ। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক 78 অব্দকেই কনিষ্কের সিংহাসনে আরোহণকাল বলে ধরে থাকেন।
কনিষ্ক – টীকা লেখো।
অথবা, কনিষ্ক ছিলেন কুষাণ যুগের শ্রেষ্ঠ রাজা-ব্যাখ্যা করো।
বিম কদফিসেস-এর ছেলে প্রথম কনিষ্ক ছিলেন কুষাণদের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি 78 খ্রিস্টাব্দে রাজা হন। অন্তত তেইশ বছর ধরে তিনি রাজত্ব করেন। তাঁর রাজা হওয়ার বছর থেকেই শকাব্দ গণনা করা হয়।
- সাম্রাজ্য বিস্তার – কনিষ্কের আমলে কুষাণ সাম্রাজ্য গঙ্গা উপত্যকার বিরাট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এসময় বর্তমান পাকিস্তানের প্রায় পুরোটাই কুষাণ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসময় মথুরা পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল কুষাণ সম্রাটের অধীনে আসে। তাঁর রাজধানী ছিল পুরুষপুর।
- ধর্ম – কনিষ্ক বৌদ্ধ ছিলেন। তাঁর আমলে চতুর্থ বৌদ্ধ ধর্মসংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আমলেই বুদ্ধের মূর্তিপূজার সূচনা হয়। তিনি চিনে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। এজন্য তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় অশোক বলা হয়।
কনিষ্কের মূর্তি – টীকা লেখো।
- কণিঙ্কের মূর্তি – ইতিহাসের পাতায় আমরা মাথা বিহীন দন্ডায়মান একটি পাথরের মূর্তি দেখতে পাই। এটি কুষাণরাজ প্রথম কনিষ্কের মূর্তি। মূর্তিটি 1911 খ্রিস্টাব্দে মথুরার একটি ধানখেতে পাওয়া গেছে। মূর্তিটির ডানহাতে একটি রাজদণ্ড আছে। বামহাতে কারুকার্য করা একটি তলোয়ারের বাঁট ধরা আছে। মূর্তিটির গায়ে একটি লম্বা জোব্বা বা আলখাল্লা রয়েছে। পায়ে রয়েছে বুট জুতো। কোমরে রয়েছে বেল্ট। মূর্তিটির শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হয় কুষাণ যুগের মথুরা শিল্পীরা এটি তৈরি করেছেন। মূর্তিটির নীচের দিকে ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা নাম দেখেই বোঝা যায় এটি কুষাণরাজ প্রথম কনিষ্কের মূর্তি।
- মন্তব্য – খুব সম্ভবত মূর্তিটি উদ্ধার করার সময় মাথার। অংশটুকু বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অথবা, এমনও হতে পারে মূর্তিটি লুণ্ঠিত হওয়ার সময় কোনোভাবে তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
হাতিগুম্ফা শিলালেখ – টীকা লেখো।
অথবা, কলিঙ্গরাজ খারবেল।
মৌর্য বংশের শাসনের পর কলিঙ্গে চেদি বংশের । শাসন শুরু হয়। চেদি শাসক খারবেল ছিলেন কলিঙ্গের প্রথম শক্তিশালী রাজা। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক নাগাদ খারবেল কলিঙ্গের শাসক ছিলেন। কলিঙ্গরাজখারবেল সম্পর্কে জানার নির্ভরযোগ্য উপাদান হল হাতিগুম্ফা শিলালেখ। এই লেখটি প্রাকৃত ভাষায় লেখা। এর বর্ণমালা ছিল ব্রাহ্মী। ওই শিলালেখতে গঙ্গা উপত্যকার একটি অংশ বোঝাতে ‘ভারতবর্ষ’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। হাতিগুম্ফা শিলালেখ থেকে জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের প্রথম দিকে কলিঙ্গে চেদি বংশীয়দের শাসনের অবসান ঘটে।
শক-সাতবাহনদের লড়াই সম্পর্কে যা জানো সংক্ষেপে লেখো। অথবা, শক-সাতবাহন দ্বন্দ্বের পিছনে কারণগুলি উল্লেখ করো।
সাতবাহনদের আমলে সবচাইতে বড়ো ঘটনা হল শক-সাতবাহনদের লড়াই।
- উদ্দেশ্য – শক-সাতবাহন লড়াইয়ের পিছনে নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। আসল যুদ্ধ ছিল এলাকা দখলের লড়াই। যেমন-পূর্ব মালবে কোসা এলাকায় ছিল একটি হিরের খনি। আবার পশ্চিম মালবের ওপর দিয়ে সমুদ্র-বাণিজ্য হত, তাই এইসব এলাকা দখল করার জন্য লড়াই হয়েছিল।
- যুদ্ধ – সাতবাহনদের সঙ্গে শক-ক্ষত্রপ নহপানের ও কাদর্মক বংশের রাজা চষ্টনের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সাতবাহনরাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
সাতবাহন শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল?
সাতবাহনদের শাসনব্যবস্থায় প্রধান ছিলেন রাজা। তিনি সেনাবাহিনীরও প্রধান ছিলেন।
- বিভিন্ন অঞ্চল – সাতবাহন শাসকরা শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বড়ো অঞ্চলকে ছোটো ছোটো প্রদেশে ভাগ করতেন।
- কর্মচারী – সাতবাহন আমলে অমাত্য নামক এক শ্রেণির কর্মচারীরা প্রদেশ শাসন করতেন।
- কর ব্যবস্থা – সাতবাহন আমলে বলি ও ভাগ নামক দুটি কর আদায় করা হত। উৎপন্ন ফসলের অংশ ভাগ হিসেবে নেওয়া হত।
সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবিস্তার সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, সমুদ্রগুপ্তের আমলে কতদূর পর্যন্ত গুপ্ত শাসকের অধিকার কায়েম হয়েছিল?
সমুদ্রগুপ্ত আনুমানিক 335 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তাঁর আমলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
- আর্যাবর্ত জয় – কৌটিল্যের আদর্শ ‘শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে এবং শত্রু নিপাত করবে’ যুদ্ধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসে প্রথমেই তিনি আর্যাবর্ত অভিযানে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানকার নয়জন রাজা (যথা – অচ্যুত, নাগসেন, মতিল প্রমুখ)-কে পরাজিত করেন।
- দাক্ষিণাত্য জয় – এরপর তিনি দক্ষিণ ভারত অভিযানে মনোনিবেশ করেন। এখানে তিনি মোট বারোজন রাজাকে পরাস্ত করেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন যেমন – কোশলের মহেন্দ্র, কোট্রুরের স্বামীদত্ত, এরন্ডপল্লের দমন প্রমুখ। এঁদের বশ্যতা আদায় করে তিনি তাঁদের রাজ্য ছেড়ে দেন। এই রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।
- অন্যান্য রাজ্য জয় – বিনাযুদ্ধে নেপাল, কর্তৃপুর, সমতট, দাভক ও কামরূপের নৃপতিগণ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এ ছাড়া তিনি নয়টি উপজাতীয় রাজ্য, (যেমন – কাক, আভীর, মদ্রক, মালব) প্রভৃতি জয় করেন।
সমুদ্রগুপ্তের দক্ষিণ ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি কীরূপ ছিল?
দূরদর্শী সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত উপলব্ধি করেছিলেন যে, সুদূর পাটলিপুত্র থেকে দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্যগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়। দক্ষিণ ভারতের বারোজন রাজাকে পরাজিত করে সেইসব রাজাদের আনুগত্য আদায় করে তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা উল্লেখ আছে হরিষেণের এলাহাবাদ প্রশস্তিতে। এই লেখতে ‘গ্রহণ-মোক্ষ-অনুগ্রহ’ কথার উল্লেখ আছে। সমুদ্রগুপ্ত ‘গ্রহণ’ নীতি দ্বারা শত্রু রাজাদের পরাজিত ও বন্দি করেন। তারপর তাঁদের ‘মোক্ষ’ বা মুক্তি দেন। সর্বশেষে ‘অনুগ্রহ’ নীতি দ্বারা তিনি পরাজিত রাজাদের বশ্যতা স্বীকার করিয়ে তাঁদের নিজ নিজ রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ করা যায়?
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি সমুদ্রগুপ্ত উন্মুল্য নীতি দ্বারা সরাসরি গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে তিনি তা করেননি। কারণ তিনি জানতেন সুদূর পাটলিপুত্রে বসে এই রাজ্যগুলির ওপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির জন্য ‘গ্রহণ ও পরিমোক্ষ এবং অনুগ্রহ নীতি’ গ্রহণ করেন।
- ‘গ্রহণ’ নীতি দ্বারা তিনি শত্রু রাজাদের পরাজিত ও বন্দি করেন।
- তারপর তাঁদের ‘মোক্ষ’ বা মুক্তি দেন।
- সর্বশেষে ‘অনুগ্রহ’ নীতি দ্বারা তিনি পরাজিত রাজাদের বশ্যতা স্বীকার করিয়ে তাঁদের নিজ নিজ রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই রাজ্যগুলি করদ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
এলাহাবাদ প্রশস্তি – টীকা লেখো।
এলাহাবাদ প্রশস্তি গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেণের রচনা। লেখাটি গুপ্তযুগের ব্রাহ্মীলিপিতে এবং সংস্কৃত ভাষায় খোদাই করা। এটি এলাহাবাদ দুর্গের ভিতরে সংরক্ষিত একটি শিলালেখ। পদ্য ও গদ্যে লেখা এলাহাবাদ প্রশস্তি-তে প্রকৃতপক্ষে গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের গুণকীর্তন করা হয়েছে। সম্রাট হিসেবে সমুদ্রগুপ্তের যুদ্ধ, রাজ্যজয় যুদ্ধবিস্তারনীতি প্রভৃতির কথা লেখটিতে বর্ণিত হয়েছে।
গুপ্ত যুগের শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল?
গুপ্ত রাজারা শুধু রাজ্য বিজেতা ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সুশাসক। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন –
- প্রদেশ – গুপ্ত সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশ বা ভুক্তিতে বিভক্ত ছিল। যেমন – মগধ ভুক্তি। এর শাসনকার্য দেখাশোনা করতেন গুপ্ত রাজপুত্রগণ।
- জেলা – প্রদেশগুলি কতকগুলি বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল। এর শাসনকর্তাদের বলা হত বিজয়পতি।
- গ্রাম – আবার বিষয়গুলি গ্রামে বিভক্ত ছিল। গ্রামের শাসনকর্তাদের বলা হত গ্রামিক। প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতেন কুমার অমাত্যগণ।
- অন্যান্য কর – কারিগর, বণিকদের কাছ থেকে, এমনকি । নুনের ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও কর আদায় করা হত।
‘নবরত্ন সভা’ সম্পর্কে যা জানো লেখো।
কিংবদন্তী বিক্রমাদিত্য এবং গুপ্তরাজ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যদি একই ব্যক্তি হন, তাহলে জানা যায় যে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্যের রাজসভা নয়জন রত্ন বা ‘নবরত্ন’ দ্বারা অলংকৃত ছিল। এই তথ্য পাওয়া যায় গুপ্ত-পরবর্তী যুগের জ্যোতির্বিদ্যাভরন নামক গ্রন্থ থেকে। ওই গ্রন্থের দ্বাবিংশতি অধ্যায়ে নয়জন রত্নের নামোল্লেখ আছে, যথা – ধন্বন্তরি, ক্ষপর্নক, অমর সিংহ, শঙ্কু, বেতালভট্ট, ঘটকর্পর, কালিদাস, বরাহমিহির এবং বররুচি।
কুতুবমিনারের কাছে উঁচু লোহার স্তম্ভলেখটি কোথায় অবস্থিত? এই লেখতে উল্লেখিত ‘চন্দ্র’ নামক রাজার পরিচয় উদ্ঘাটন করো।
অথবা, চন্দ্ররাজার স্তম্ভ – টীকা লেখো।
কুতুবমিনারের কাছে উঁচু লোহারস্তম্ভ লেখটি দিল্লিতে অবস্থিত, এই লেখটি বিষ্ণুধ্বজ নামেও পরিচিত।
এই লেখটিতে কোনো এক ‘চন্দ্র’ রাজার নাম উল্লেখ আছে, যিনি বঙ্গদেশের নৃপতিবর্গের এক মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং বাহিক দেশ (সম্ভবত ব্যাকট্রিয়া) জয় করেন। অনেকের মতে, বাহ্লিক বলতে সিন্ধু ও পাঞ্জাবকে বোঝানো হয়েছে। ড. ব্রতীন্দ্রনাথ মুখার্জি বাহিক বলতে সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলের উপজাতিদের বুঝিয়েছেন। তবে অনেকেই এই নীতি মেনে নিয়েছেন যে, ‘এই লেখস্তম্ভ’ – এ উল্লেখিত ‘চন্দ্র’ হলেন গুপ্তরাজ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, অন্য কোনো চন্দ্র বা শুশুনিয়া অঞ্চলের চন্দ্রবর্মন নন। কারণ চন্দ্রবর্মনের পক্ষে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে বাহিক দেশ জয় করা সম্ভবপর ছিল না।
সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তার সম্বন্ধে লেখো।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতবর্ষে যে-সমস্ত রাজশক্তির উদ্ভব হয় তাদের মধ্যে থানেশ্বরের পূষ্যভূতি বংশ ছিল অন্যতম। হর্ষবর্ধন ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট।
- রাজ্যজয় – হর্ষবর্ধন চালুক্য রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। আইহোল লেখ থেকে জানা যায় তিনি দ্বিতীয় পুলকেশির নিকট পরাজিত হন। ফলে দক্ষিণ দিকে তাঁর সাম্রাজ্য নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ প্রভৃতি অঞ্চল দখল করেন। পশ্চিম ভারতে তিনি বলভিরাজ দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেন এবং তাঁর কন্যাকে বিবাহ করেন। হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি সিন্ধু ও কাশ্মীরেও অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। ঐতিহাসিক ড. পানিক্কর এই মতের সমর্থক।
- রাজ্য সীমানা – এইভাবে তিনি সমগ্র উত্তর ভারতকে কনৌজের অধীনে আনতে সমর্থ হন এবং ‘সকলোত্তরপথনাথ’ উপাধিতে ভূষিত হন। বাণভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি পঞ্চ ভারতের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সাধারণভাবে এই পঞ্চ ভারত বলতে বোঝায় – পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা ও ওড়িশার কঙ্গোদ অঞ্চল।
জেনে রাখো –
নাম | কে প্রচলন করেন | কবে প্রচলিত হয় |
ক. শকাব্দ | কুষাণরাজ প্রথম কনিষ্ক | 78 খ্রিস্টাব্দে |
খ. গুপ্তাব্দ | প্রথম চন্দ্রগুপ্ত | 311-320 খ্রিস্টাব্দে |
গ. হর্ষাব্দ | হর্ষবর্ধন | 606 খ্রিস্টাব্দে |
বানভট্টের হর্ষচরিত – টীকা লেখো।
পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হর্ষবর্ধনকে নিয়ে রচিত কাব্য হল হর্ষচরিত। কাব্যটি হর্ষবর্ধনের সভাকবি বানভট্ট রচিত একটি প্রশস্তিমূলক কাব্য। এই কাব্যে হর্ষবর্ধনের গুণকীর্তনের পাশাপাশি পুষ্যভূতি বংশের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। হর্ষচরিত প্রকৃতপক্ষে হর্ষবর্ধনের আংশিক জীবনী। কারণ হর্ষবর্ধনের বোন রাজ্যশ্রীকে ফিরিয়ে আনার ঘটনার। বর্ণনার মাধ্যমে হর্ষচরিত শেষ হয়েছে। যদিও হর্ষচরিত-কে কখনই নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক উপাদান বলা যায় না।
হর্ষবর্ধনের বিভিন্ন গুণাবলির পরিচয় দাও।
হর্ষবর্ধন শুধুমাত্র একজন বীর যোদ্ধাই ছিলেন না, তাঁর মধ্যে ছিল বহু গুণ।
- হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন উদার ও প্রজাহিতৈষী সম্রাট। ধর্মীয় গোঁড়ামি তাঁর ছিল না। নিজে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও পরধর্ম সম্পর্কে তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ছিল। সুয়ান জাং – এর সি-ইউ-কি গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, 643 খ্রিস্টাব্দে তিনি কনৌজে একটি ধর্ম মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। প্রয়াগে হর্ষের মহাদানক্ষেত্র ও উৎসব নিয়েও লিখেছেন সুয়ান জাং।
- বিদ্যোৎসাহিতা ছিল তাঁর অপর একটি মহান গুণ। তাঁর সভাকবি ছিলেন বাণভট্ট, যিনি হর্ষচরিত রচনা করেন।। তিনি স্বয়ং নাগানন্দ, প্রিয়দর্শিকা ও রত্নাবলী নামক তিনটি নাটক লেখেন।
- তাঁরই প্রচেষ্টায় গুপ্তদের পর উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
- তিনি ছিলেন একজন পরম শিক্ষানুরাগী। শিক্ষার প্রচারের জন্য তিনি নালন্দা বিদ্যালয়ে অর্থসাহায্য করতেন।
মূল্যায়ন – এক কথায় সম্রাট অশোকের ন্যায় হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন পরম প্রজাহিতৈষী ও উদার সম্রাট। তাই ড. রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন, ‘হর্ষের মধ্যে অশোক ও সমুদ্রগুপ্তের গুণাবলির সমন্বয় লক্ষ করা যায়।’
মেগাস্থিনিসের লেখা থেকে পাটলিপুত্র নগরের শাসন পরিচালনার যে কথা জানা যায়, তা সংক্ষেপে লেখো।
মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ভারতে আসেন। তিনি ছিলেন গ্রিক পর্যটক তথা লেখক। ভারতে থাকাকালীন তিনি ইন্ডিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাতে পাটলিপুত্র নগর ও এই নগরের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কথা লেখা আছে।
নগর পরিচালনা – এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়, পাটলিপুত্র নগর পরিচালনা করার জন্য ছয়টি বিভাগ ছিল। প্রত্যেক বিভাগে পাঁচজন করে সদস্য ছিলেন। তারা একসাথে এই নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি দেখভাল করতেন। সেই তালিকায় ছিল মন্দির, বন্দর ও বাজার এলাকা। তারাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দরদাম ঠিক করতেন। তবে নগর সুরক্ষায় দায়িত্বে থাকত বিশাল সেনাবাহিনী।
মৌর্য সাম্রাটরা কীভাবে সাম্রাজ্য চালাতেন?
মৌর্য শাসনব্যবস্থায় সবার ওপরে ছিলেন সম্রাট। তাঁকে সাহায্য করতেন মন্ত্রীণ, সমাহর্তা, সন্নিধাতারা। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র সাম্রাজ্য কতগুলি দেশ বা প্রদেশ, সেগুলি। অঞ্চল বা জেলা এবং সেগুলি গ্রামে বিভক্ত ছিল। সাম্রাজ্যের। খবরাখবর নেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হত গুপ্তচরদের। সাম্রাজ্যের সুরক্ষা ও সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য গড়ে। তোলা হয়েছিল শক্তিশালী সেনাবাহিনী। সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য মৌর্য সম্রাটগণ জনগণের কাছ থেকে নানা ধরনের কর আদায় করতেন।
হর্ষবর্ধনের সঙ্গে শশাঙ্কের যুদ্ধের কারণ কী? এর ফল কী হয়েছিল?
- যুদ্ধের কারণ – হর্ষবর্ধনের সঙ্গে গৌড়রাজ শশাঙ্কের যুদ্ধের কারণ ছিল শশাঙ্ক চেয়েছিলেন থানেশ্বর দখল করতে। দ্বিতীয়ত এই প্রতিক্রিয়ার ফল হয়েছিল মারাত্মক। কারণ শশাঙ্ক হর্ষবর্ধনের দাদা রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেছিলেন। এই অবস্থায় হর্ষবর্ধন 606 খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের রাজা হন। সিংহাসনে বসেই তিনি ভ্রাতৃহন্তা শশাঙ্ককে সমুচিত শাস্তি দিতে গৌড় অভিযান করেন। তাতে দুপক্ষের যুদ্ধ হয়।
- যুদ্ধের ফল – যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। তাই এই যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিল তা জানা যায় না। তবে মনে করা হয় এই অভিযানে হর্ষবর্ধন সাফল্য পাননি।
কণিষ্কের ধর্ম কী ছিল? তাঁর ধর্মীয় আবেগের দিকটি তুলে ধরো।
‘সম্পট লিপি’ থেকে জানা যায় যে, কুষাণরাজ কনিষ্ক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তবে ধর্মের ব্যাপারে তাঁর কোনো গোঁড়ামি ছিল না। তিনি তাঁর নামের আগে ‘দৈবপুত্র’ উপাধি ধারণ করতেন। তিনি বহু চৈত, মঠ ও স্তূপ স্থাপন করেন। । তাঁর আমলে পুরুষপুরে (অথবা জলন্ধরে) চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি আহূত হয়। এখানেই বসুমিত্র ‘মহাবিভাষা’ রচনা করেন। কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে প্রথম বুদ্ধের মূর্তি পুজো শুরু হয়।
কাশ্যপ মাতঙ্গ ও ধর্মরত্নকে তিনি বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য চীনে প্রেরণ করেন। ধর্মপ্রচারের জন্য ড. স্মিথ তাঁকে ‘দ্বিতীয় অশোক’ বলে অভিহিত করেন। রোমান সম্রাট ট্রজানের (98-117 খ্রি.) সঙ্গেও তিনি দূত বিনিময় করেন।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত বংশের নাম মৌর্য হল কেন?
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের নাম মৌর্য হল কেন, তা নিয়ে পণ্ডিতমহলে নানান মতবাদ আছে, যেমন –
- কিংবদন্তী অনুসারে চন্দ্রগুপ্তের মা মুরা ছিলেন একজন শূদ্রবংশীয়। অনেকের মতে এই নাম থেকেই মৌর্য বংশের নামকরণ হয়েছে।
- কারোর মতে চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মৌরিয় ক্ষত্রিয় বংশীয় সন্তান। সেকারণে এই বংশের নাম হয় মৌর্য।
- আবার কারোর মতে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পূর্বপুরুষরা ময়ূর পুষতেন। সেকারণে এই বংশের নাম হয় মৌর্য।
সম্রাট কনিষ্কের সংস্কৃতিমনস্কতার পরিচয় দাও।
শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি কনিষ্কের গভীর অনুরাগ ছিল। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাথর এবং সাহিত্যিক অশ্বঘোষ ও বসুবন্ধু ছিলেন তাঁর রাজ্যসভার অন্যতম ব্যক্তিত্ব। অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরিত’ তাঁর আমলেই রচিত হয়। চরক ও সুশ্রুত ছিলেন সেযুগের বিখ্যাত ভেষজবিদ ও শল্যবিদ। বিজ্ঞানী নাগার্জুন রচনা করেন ‘প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র’। তাঁর আমলেই গ্রিক-রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে ভারতে গান্ধার শিল্প বিকাশ লাভ করে। তিনি বহু চৈত, বিহার ও স্তূপ নির্মাণ করেন। গ্রিক শিল্পী এজেসিলাস পুরুষপুরে ভগবান বুদ্ধের দেহাবশেষের ওপর একটি বিশাল চৈত নির্মাণ করেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, “সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!