এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ) – অধ্যায় সারসংক্ষেপ

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, ‘অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)’ অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণীর পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক

ষোড়শ মহাজনপদের আমল

বৌদ্ধ গ্রন্থ অঙ্গুত্তরনিকায়-এ ষোড়শ মহাজনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সময় অর্থাৎ মহাজনপদগুলির আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। জনপদ বলতে গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অঞ্চলগুলিকে বোঝানো হত। সুতরাং জনপদ ও মহাজনপদে মূলত কৃষিজীবী জনবসতি ছিল। মহাজনপদগুলিতে রাজকর্মচারী ও সৈনিকদের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় হত। কৃষি থেকে আগের মতো জমির ওপর সকল কৃষকের সমান অধিকার ছিল না। কিছু মানুষের হাতে অনেক জমির অধিকার ছিল। এর পাশাপাশি ভূমিহীন কৃষকদের পরিচয় পাওয়া যায়। এসময় কারিগরি শিল্প ও নানা পেশার উদ্ভব ঘটে।

কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি বাণিজ্যও ছিল এ যুগের অন্যতম প্রধান জীবিকা। এই সময় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কার্যাপণ নামক এক ধাতব মুদ্রা ব্যবহৃত হত।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম নগরায়ণ দেখা গিয়েছিল হরপ্পা সভ্যতায়। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ের নগরায়ণ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 600 অব্দ নাগাদ ষোড়শ মহাজনপদের আমলে।

শাসন ও ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রধানত নগরে বসবাস করত। এরা কেউই নিজেরা নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করত না। গ্রাম থেকে এদের খাদ্য উৎপাদিত হয়ে নগরে সরবরাহ হত।

পরিবার ও সমাজে নারীর অবস্থান ছিল পুরুষের পরে। নারীদের শিক্ষার সুযোগ ছিল কম। বাল্যবিবাহ এই সময় সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষভাগ থেকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের প্রথম ভাগ

মৌর্য আমল

মৌর্য আমলেও সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভেদাভেদ ছিল। মৌর্য আমলে নারীদের অবস্থা আগের মত থাকলেও তারা নানা পেশায় যুক্ত ছিল। মৌর্য আমলেও অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপরেই নির্ভরশীল ছিল। কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা।

এ যুগে কারিগর ও বণিকদের কাজের পুরোপুরি তদারকি করত রাষ্ট্র। খনি ও খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার ছিল। খনিগুলি রাজকর্মচারীরা দেখাশোনা করত।

এ যুগে সাম্রাজ্যের নানা অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ খুব ভালো ছিল। নিয়মিত রাজপথের দেখাশোনা করত রাজকর্মচারীরা। বর্তমান কালের মতো পথের পাশে দূরত্ব ও দিক বোঝানোর জন্য ফলক লাগানো হত।

মৌর্য আমলে মাটি, পাথর, ইট বা কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি প্রস্তুত করা হত।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত

কুষাণ আমল

কুষাণ আমলেও কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা। ধান, গম, যব, আখ, কার্পাস প্রভৃতি ছিল প্রধান উৎপাদিত ফসল। গোলমরিচ ছিল এ যুগের বিখ্যাত ফসল। লোহার লাঙল, কোদাল, কুঠার, দা প্রভৃতি ছিল কৃষিকাজের প্রধান উপকরণ।

এ যুগে বাণিজ্যেরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল। জলপথ ও স্থলপথে বাণিজ্য হত। মসলিন কাপড় এ যুগে জগৎ বিখ্যাত ছিল।

কুষাণ আমলে বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম প্রথা অত্যন্ত কঠোরভাবে জনগণকে মেনে চলতে হত।

পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বহু জাতির মানুষ এসময় ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল। পরবর্তীকালে তারা ভারতীয়দের সঙ্গে মিশে যায়।

কুষাণ যুগেও মৌর্য আমলের মতো নাচ, গান ও অভিনয়ের বেশ ভালোই প্রচলন ছিল। এর পাশাপাশি পাশাখেলা, শিকার, রথের দৌড়, কুস্তি প্রভৃতি ছিল ধনী মানুষদের বিনোদন এবং অবসর সময় কাটানোর উপায়।

এসময় সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। সমাজে পুরুষদের নীচে ছিল নারীরা। বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল।

আনুমানিক খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক থেকে সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত

গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী আমল

এ যুগের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষিই ছিল এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। আখ, তুলো, নীল, সরষে ও তৈলবীজ চাষ হলেও ধান ছিল এ যুগের প্রধান ফসল। গুপ্ত যুগে জমি কেনাবেচা এবং ব্রাহ্মণদের জমি দান করার কথা জানা যায়। যা অগ্রহার ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

এসময় লোহার তৈরি জিনিস ছিল খুবই উন্নত ধরনের। প্রমাণ স্বরূপ কুতুবমিনারের পাশে একটি লোহার স্তম্ভের (মেহরৌলি স্তম্ভ) কথা উল্লেখ করা যায়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, দীর্ঘকাল ধরে খোলা আবহাওয়ার মধ্যে থাকলেও এটিতে আজও পর্যন্ত মরচে পড়েনি।

গুপ্ত যুগে ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল স্থলপথ ও জলপথ। যদিও গুপ্ত আমলে দূরপাল্লার বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল হুন আক্রমণ। এই যুগে তাম্রলিপ্ত বন্দরের খ্যাতি বৃদ্ধি পেয়েছিল।

গুপ্ত আমলে বহু সোনা ও রুপোর মুদ্রার সন্ধান পাওয়া গেছে। গুপ্ত রাজাদের প্রবর্তিত সোনার মুদ্রাকে বলা হত দিনার ও সুবর্ণ। রূপক নামে রুপোর মুদ্রা প্রথম চালু হয় সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময়।

সমাজে বর্ণাশ্রমপ্রথা চালু ছিল। তবে সবসময় তা কঠোরভাবে মানা হত না। ব্রাহ্মণদের নীচু জাতির প্রতি ঘৃণ্য মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একই অপরাধের জন্য ব্রাহ্মণ ও শূদ্রদের পৃথক শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। গুপ্ত আমলের সমাজে পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান। মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হত। বিয়ের সময় যে উপহার পেত তা স্ত্রীধন নামে পরিচিত।

মৌর্য সমাজে বিভাজন ও শাসকগণ
মৌর্য সমাজে বিভাজন ও শাসকগণ

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন