এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, ‘অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)’ অধ্যায়ের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা
Contents Show

ষোড়শ মহাজনপদের আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?

অথবা, এযুগের কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসাবাণিজ্যের বিবরণ দাও।

কৃষিকাজ – ষোড়শ মহাজনপদ আমলের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। উর্বরতার ভিত্তিতে জমিকে নানা ভাগে ভাগ করা হত। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসল ফলানো হত। ঋতু অনুযায়ী ফসলগুলির আলাদা নাম ছিল। কৃষিতে প্রধান ফসল ছিল ধান, এর মধ্যে সেরা ছিল শালী ধান। মগধে এই ধানের প্রচুর চাষ হত। এছাড়া অন্যান্য কৃষিজ ফসল ছিল গম, যব ও আখ।

ষোড়শ মহাজনপদের আমলের অর্থনৈতিক অবস্থা

  1. জমিতে অধিকার – এই সময় সমাজের সামান্য সংখ্যক মানুষ জমির অধিকার ভোগ করত, আর কিছু মানুষ ছিলেন ভূমিহীন কৃষক।
  2. জমির পরিমাণ – প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়ের দা, কুড়ুল বা কুঠার এবং কিছু লাঙলের ফলাও পেয়েছেন। লোহার কুড়ুল বা কুঠার দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানো সহজ ছিল।
  3. বাণিজ্য – কৃষির পাশাপাশি, এই সময়ে বাণিজ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। গোরুর বা ঘোড়ার গাড়ি বোঝাই করে দূরদূরান্তে বাণিজ্য চলত। উত্তর ভারতে স্থলপথে এবং নদীপথে বাণিজ্য চলত। তবে, সমুদ্রবাণিজ্য ছিল কম।
  4. ব্যবসা – এ যুগে ব্যবসা চলত ধার দেওয়া ও নেওয়ার মাধ্যমে। জৈন ও বৌদ্ধধর্মে ধার নিলে শোধ করা উচিত বলে উল্লেখ আছে।
  5. বিনিময়ের মাধ্যম – এ যুগে ব্যবসাবাণিজ্যে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে “কার্যাপণ” নামে এক বহুল প্রচলিত মুদ্রা চালু ছিল। এছাড়া, ষোড়শ মহাজনপদের আমলে গোল ও চৌকো আকৃতির অনেক রুপোর মুদ্রা পাওয়া গেছে।

মৌর্য আমলে ভারতের অর্থনৈতিক জীবন কেমন ছিল?

মৌর্য আমলে ভারতবর্ষে শান্তি ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য বজায় থাকার ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি হয়েছিল, আর অর্থনৈতিক জীবনেও অনেক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। সেগুলি হল –

মৌর্য আমলের অর্থনৈতিক জীবন

  1. কৃষি – মৌর্য আমলে কৃষি ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা। গাঙ্গেয় উপত্যকায় জমি উর্বর ছিল, তাই এখানে খাজনার পরিমাণ বেশি ছিল। জমিতে জলসেচের জন্য আলাদা বিভাগ ছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে জলসেচের জন্য জল করের কথা বলা হয়েছে। এ যুগে খাল ও কূপ খনন করে জলসেচ করা হত। এখানে গম, যব, তৈলবীজ, আখ ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হত।
  2. শিল্প – এ যুগে শিল্পক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছিল। বস্ত্রশিল্প, কাঠের আসবাবপত্র, চর্মশিল্প, ধাতুশিল্প, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। শিল্পী ও কারিগররা সমাজে সম্মানিত হলেও তারা শূদ্র বলে পরিচিত ছিল। বৃত্তিমূলক শিল্পগুলির মধ্যে ছিল – কাঠ, হাতির দাঁত, চামড়া, যন্ত্র, বস্ত্র, ধাতু, স্থাপত্য ইত্যাদি। ভারতীয় বস্ত্রের চাহিদা দেশ-বিদেশে অনেক ছিল। জন মার্শাল শিল্পীদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে এক বিরাট অট্টালিকা আবিষ্কার করেন।
  3. অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য – এ যুগে প্রধানত নদীপথে বাণিজ্য চলত। গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী ও সিন্ধু নদ ছিল প্রধান জলপথ। স্থলপথেও বাণিজ্য চলত। গোরুর গাড়ি ও উটের পিঠে মালামাল আসত ও যেত।
  4. বৈদেশিক বাণিজ্য – এ যুগে বৈদেশিক বাণিজ্যও উন্নত ছিল। স্থলপথ ও জলপথে বাণিজ্য চলত। এই সময় চিন, গ্রিস, সিংহল প্রভৃতি দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। মৌর্য রাজারা পশ্চিম এশিয়া থেকে মিষ্টি, মদ ও শুকনো ডুমুর আমদানি করতেন।
  5. ধনতন্ত্রবাদের উদ্ভব – বুদ্ধের সময় থেকে ভারতে ধনতন্ত্রবাদের শুরু হয়। এই সময়ে বণিক ও ব্যবসায়ীরা খুব ধনী ছিলেন। অর্থসম্পদ জমানোর আগ্রহ ছিল। সাঁচি লিপিতে ধনী বণিকদের দানের কথা উল্লেখ আছে।

এ থেকে বলা যায়, মৌর্য আমলে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধি ছিল, তবে এই সমৃদ্ধি সবার মধ্যে সমানভাবে বিতরণ হয়নি।

মেগাস্থিনিসের বিবরণ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ সম্পর্কে কী বর্ণনা পাওয়া যায়?

গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তাঁর ইন্ডিকা গ্রন্থে পাটলিপুত্র নগরের শাসন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। মেগাস্থিনিসের মতে:

  1. ভারতীয় সমাজ সাতটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। যেমন – ব্রাহ্মণ, কৃষক, পশুপালক ও শিকারি, শিল্পী ও ব্যবসায়ী, যোদ্ধা, গুপ্তচর এবং সচিব।
  2. ভারতবাসী কখনো অন্য কোনো জাতিকে আক্রমণ করত না। অপর জাতিরাও ভারতবাসীদের আক্রমণ করত না। আলেকজান্ডারই একমাত্র যিনি ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন।
  3. নগরে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল না।
  4. অধিকাংশ জনগণ ছিল নগরবাসী।
  5. পাটলিপুত্র ছিল একটি সমৃদ্ধশালী নগর।
  6. ভারতে কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল?

প্রাচীন ভারতে সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পরিবার ও সমাজে নারীদের অবস্থান ছিল পুরুষের পরে। এই পর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের অবস্থা ছিল নিম্নরূপ:

উপমহাদেশে নারীদের অবস্থা

  1. নারীদের শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পেয়েছিল। যদিও উচ্চস্তরের গৃহী মহিলারা অনেকে শিক্ষিতা ছিলেন।
  2. বালিকা বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
  3. মৌর্য আমলে ঘরকন্নার কাজের বাইরেও নারীরা কয়েকটি পেশায় যোগদান করতে পারত, যেমন – গুপ্তচর, রাজকর্মচারী।
  4. স্ত্রীধনের অস্তিত্ব ছিল না।
  5. প্রাচীন ভারতে নারীদের ধর্মাচারণের পূর্ণ অধিকার ছিল, তবে তারা পুরোহিতের কাজ করতে পারত না।
  6. প্রাচীন ভারতীয় সমাজে গণিকাবৃত্তি ছিল নগরজীবনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

গুপ্ত যুগে নারীজাতির অবস্থা কেমন ছিল?

গুপ্ত যুগে রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও লেখামালায় গুপ্ত যুগের নারীজাতির অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

নারীজাতির অবস্থা – মনুস্মৃতি, যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতি, মহাকাব্যদ্বয় ও বাৎস্যায়নের কামসূত্র থেকে সমাজে নারীর মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের কথা জানা যায়।

  1. স্ত্রীকে রক্ষা করা স্বামীর কর্তব্য, পরিবারের মঙ্গলের জন্য।
  2. নারীকে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত, নারী সম্মানিত হলে দেবতা সন্তুষ্ট হন, সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রভৃতি কথা সমকালীন সাহিত্যে থাকলেও বাস্তবে নারী এত সম্মানের অধিকারী ছিল না।
  3. সেযুগে নারীদের অমর্যাদাও কম ছিল না। যেমন:
    • ওই যুগে সমাজে দেবদাসীপ্রথা ছিল।
    • সতীদাহপ্রথার অস্তিত্ব ছিল।
    • স্বামীরা স্ত্রীর ওপর অকথ্য নির্যাতন করত। এমনকি স্ত্রীরা পরিত্যাগ পর্যন্ত হতো।
    • মেয়েদের কম বয়সে বিবাহ দেওয়া হত।
    • এই সময় মেয়েরা বিয়ের সময় স্ত্রীধন নামে সম্পদ পেত। এই সম্পদ একমাত্র মেয়েরা তাদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারত। তবে এই প্রথা সব বর্ণের মধ্যে চালু ছিল না।

গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর আমলের ব্যবসাবাণিজ্য ও মুদ্রাব্যবস্থা কেমন ছিল?

গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর আমলে ব্যবসাবাণিজ্যের ধারা অব্যাহত ছিল। মুদ্রাব্যবস্থা ব্যবসাবাণিজ্যের অগ্রগতির পরিচায়ক। গুপ্ত আমলে সোনা ও রুপোর মুদ্রা প্রচলিত ছিল। অন্যদিকে বণিকগণ গড়ে তুলেছিল ব্যবসায়ী সংগঠন তথা গিল্ড সংঘ।

ব্যবসাবাণিজ্য – গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের অবস্থা প্রায় আগের মতোই ছিল। তবে এ সময় দূরপাল্লার বাণিজ্যে কিছুটা ঘাটতি দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ ছিল হুন আক্রমণ। এর ফলে রোম-ভারত বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। তবে এ যুগে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের বাণিজ্য চলত। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বন্দরগুলি হল পূর্ব উপকূলের তাম্রলিপ্ত এবং তামিলনাড়ুর কাবেরীপট্টিনম। বিশেষ করে পূর্ব উপকূলের তাম্রলিপ্ত বন্দরের গুরুত্ব এই সময় আরও বৃদ্ধি পায় এবং দূরপাল্লার বাণিজ্যের জন্য কাবেরীপট্টিনম বন্দরের গুরুত্ব ছিল বেশি।

মুদ্রাব্যবস্থা – গুপ্ত যুগে সোনার ও রুপোর দু-ধরনের মুদ্রার প্রচলন ছিল। গুপ্ত আমলে প্রচলিত সোনার মুদ্রাকে বলা হত দিনার ও সুবর্ণ। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে সর্বপ্রথম রুপোর মুদ্রা প্রচলন হয়। এই মুদ্রাকে বলা হয় রূপক। এ ছাড়া এ যুগে তামার মুদ্রাও প্রচলিত ছিল। তবে বাকাটক শাসকরা কোনো মুদ্রার প্রচলন করেননি। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের সব জায়গায় লেনদেন সমানভাবে ছিল না।

গুপ্ত যুগে মুদ্রা
গুপ্ত যুগে মুদ্রা

সুদর্শন হ্রদের পরিচয় দাও

প্রাচীন ভারতে রাজা বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি একটি জলসেচ ব্যবস্থার উদাহরণ হল সুদর্শন হ্রদ। এই হ্রদ-সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –

  1. নির্মাতা – সুদর্শন হ্রদ নির্মাণ করেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। এটি গুজরাটের কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলে নির্মিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত কৃষকরা এই হ্রদ ব্যবহার করেছিল।
  2. উদ্দেশ্য – এই হ্রদ খননের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় এলাকার কৃষিজমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করা, যাতে কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারে। কারণ সরকার বুঝেছিল, কৃষির উন্নতি না হলে রাজকোষ পূর্ণ হবে না এবং খাদ্য সমস্যারও সমাধান হবে না।
  3. পুনর্গঠন – সম্রাট অশোক এই সেচ প্রকল্পের সঙ্গে কিছু সেচ খাল যোগ করেছিলেন। সম্ভবত শকরাজ রুদ্রদামন আনুমানিক 150 খ্রিস্টাব্দে এই হ্রদের সংস্কার করেছিলেন। তার খরচ কৃষকদের ওপর দেওয়া হয়নি। জুনাগড় লিপিতে এ বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের শাসনের প্রথম বছরেই আবার হ্রদটি মেরামত করতে হয়েছিল (455/456 খ্রিস্টাব্দ)।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পর ভারতীয় উপমহাদেশে কেন এবং কীভাবে চাষবাসের শ্রীবৃদ্ধি হয় বলে মনে কর?

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পর ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন কারণে চাষবাসের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল। যেমন –

  1. ষোড়শ মহাজনপদের যুগে ভারতীয় রাজারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভূমিরাজস্ব আদায় করতেন। এ কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়ে বেশি জমি চাষ করতে শুরু করেছিল। এর ফলে চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  2. গঙ্গা-যমুনা বিধৌত সমভূমিতে ধানের চাষ এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। কারণ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ এখানকার কৃষকরা লোহার লাঙলের ফলা ব্যবহার শুরু করেছিল এবং ধান চাষে পুনঃরোপণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল।
  3. অন্যদিকে পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং আশেপাশের শুষ্ক অঞ্চলে কৃষকরা লাঙলের বদলে লোহার কোদাল ব্যবহার করে শুষ্ক জমিতে ভালো ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছিল।

এ ছাড়া, মৌর্য যুগে চাষের জমিতে কৃত্রিমভাবে খাল, কূপ ও জলাধার খনন করে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য কী ছিল?

মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য –

মৌর্য আমলের মুদ্রাগুপ্ত আমলের মুদ্রা
1. মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলি ছিল ছাপযুক্ত।গুপ্ত আমলের মুদ্রাগুলি ছিল ছাঁচে ধাতব তরল ঢুকিয়ে ঢালাই করা মুদ্রা।
2. মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলির ধাতু ছিল মূলত রুপো।কিন্তু গুপ্ত আমলের রৌপ্যমুদ্রা ছাড়াও স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
3. মৌর্য আমলের রৌপ্যমুদ্রার মান অনুযায়ী নাম ছিল পন, অর্ধপন, পদ, অষ্টভাগ ইত্যাদি।গুপ্ত আমলের স্বর্ণমুদ্রার নাম ছিল সুবর্ণ ও দিনার।
4. মৌর্য আমলের মুদ্রায় গাছ, মানুষ, পাহাড়ের প্রতিকৃতি-সহ বিভিন্ন চিহ্ন, যেমন – বৃত্ত, গোলচিহ্ন, সূর্য, বিভিন্ন জ্যামিতির আকার ইত্যাদি ছাপানো হত।গুপ্ত আমলের মুদ্রায় বিভিন্ন দেব-দেবী, যেমন – কার্তিক, লক্ষ্মী, বিন্নু-সহ গুপ্ত রাজাদের প্রতিকৃতি খোদাই করা হত।
5. মৌর্য যুগের মুদ্রাগুলি বিভিন্ন আকারের ছিল, সেগুলি দেখতেও খুব ভালো ছিল না।গুপ্ত যুগের মুদ্রাগুলি দেখতে ভালো ছিল, সেগুলি মূলত গোলাকৃতি ছিল।

কারিগর ও ব্যবসায়ীদের সংঘ কেন গড়ে উঠেছিল? তৎকালীন অর্থনীতিতে তার প্রভাব কী পড়েছিল?

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বণিক (ব্যবসায়ী) এবং কারিগররা নিজেদের আলাদা সংঘ বা সংগঠন গড়ে তুলেছিল। বণিকদের সংগঠনকে বলা হত গিল্ড বা শ্রেণি।

উদ্দেশ্য – এই ধরনের সংঘ গড়ে তোলার পেছনে বণিক ও কারিগরদের কিছু উদ্দেশ্য ছিল। যেমন –

  • ধনী বণিকদের থেকে কারিগরদের (যেমন – স্বর্ণশিল্পী, কর্মকার, ভাস্কর) রক্ষা করা।
  • পণ্যের ওজন ও গুণ ঠিক রাখা।
  • ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা।

প্রভাব – মৌর্যোত্তর যুগে এমন 18টি সংঘ ছিল। গুপ্তযুগে এগুলির কাজ ছিল – ব্যবসা পরিচালনা, অর্থ জমা রাখা ইত্যাদি। তারা নিজেদের মুদ্রাসিলমোহর ব্যবহার করত। যারা তাদের কাছে টাকা জমা রাখত, তাদের টাকা তারা সুদ দিয়ে দিত। জমাকৃত অর্থ তারা ভালো কাজে ব্যবহার করত, যেমন—অর্থ বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজে বিনিয়োগ করত। এইভাবে ভারতের শিল্প ও ব্যবসা বাড়ত।

গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের অর্থনীতি – গুপ্ত এবং গুপ্ত পরবর্তী যুগের অর্থনীতি সম্পর্কে নানা শিলালিপি ও পুরনো গ্রন্থ থেকে জানা যায়। যেমন:

  • কৃষি – ভারতের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করত। জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা ছিল। তারা ধান, আখ, তুলো, নীল, এবং বিভিন্ন তৈলবীজ চাষ করত। রাজা জমি থেকে কর আদায় করত।
  • রাজস্ব – দক্ষিণ ভারতে রাজারা যেমন রাষ্ট্রকূট ও চোলরাজারা ফসলের 1/4 বা 1/3 অংশ রাজস্ব হিসেবে নিত। গুপ্ত যুগে সাধারণত 1/6 অংশ রাজস্ব আদায় করা হত। এছাড়া, রাজারা বিভিন্ন ধরনের করও আদায় করত।
  • ব্যবসা-বাণিজ্য – গুপ্ত যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো ছিল। তাম্রলিপ্ত ও ব্রোচ ছিল বড় বন্দর। চোল রাজারা ব্যবসা করে অনেক টাকা আয় করত। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বন্দর ছিল—কারিকল, মহাবলীপুরম ইত্যাদি।
  • মানুষের অন্যান্য কাজ – কৃষির পাশাপাশি অনেক মানুষ বিভিন্ন শিল্পে কাজ করত। এই শিল্পগুলো ছিল—বস্ত্রশিল্প, কারিগরি শিল্প, নৌ-শিল্প, আসবাব শিল্প, ধাতুশিল্প ইত্যাদি।

গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের অর্থনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

বিভিন্ন শিলালিপি ও সমকালের গ্রন্থ থেকে গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের অর্থনীতির কথা জানা যায়, যেমন –

  • কৃষি – ভারতের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কৃষিতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হত। জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা ছিল। উৎপন্ন ফসলের তালিকায় ছিল – ধান, আখ, তুলো, নীল, বিভিন্ন তৈলবীজ প্রভৃতি। রাজারা জমি থেকে রাজস্ববাবদ প্রচুর কর আদায় করতেন।
  • রাজস্ব – দক্ষিণ ভারতে রাষ্ট্রকূট ও চোলরাজারা উৎপন্ন ফসলের 1/4 ও 1/3 অংশ রাজস্ব আদায় করতেন। গুপ্ত যুগে সাধারণত উৎপন্ন ফসলের 1/6 অংশ রাজস্ব আদায় করা হত। এছাড়া গুপ্ত রাজারা কর, উপরিকর আদায় করতেন। এইভাবে রাজাদের রাজকোষ ভরে থাকত।
  • ব্যাবসাবাণিজ্য – গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে ব্যাবসাবাণিজ্য ভালোই হত। তাম্রলিপ্ত, ব্রোচ ছিল সেযুগের উল্লেখযোগ্য বন্দর। এই বন্দর থেকে গুপ্ত রাজাদের ভালো আয় হত। চোল রাজারা ব্যাবসাবাণিজ্য করে দারুণ আর্থিক উন্নতি করেছিল। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বন্দরগুলির তালিকায় ছিল – কারিকল, মহাবলীপুরম প্রভৃতি।
  • মানুষের অন্যান্য পেশা – কৃষিকাজ ছাড়াও বহু মানুষ বিভিন্ন শিল্পে নিযুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করত। এই শিল্পগুলি ছিল – বস্ত্রশিল্প, কারিগরি শিল্প, নৌ-শিল্প, রঞ্জন শিল্প, আসবাব শিল্প, ধাতুশিল্প প্রভৃতি।

গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী আমলের সমাজব্যবস্থায় সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

অথবা, গুপ্ত শাসনকালে ভারতের সমাজবিন্যাস কেমন ছিল?

গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের ভারতের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন লেখ ও সাহিত্য থেকে অনেক তথ্য জানা যায়, যেমন –

  • গুপ্তযুগে সমাজ – গুপ্তযুগে বর্ণপ্রথার প্রচলন ছিল, তবে পূর্বের মতো কঠোর ছিল না। মানুষ যে কোনো পেশা গ্রহণ করতে পারত। ফলে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতাও কমে যায়। এর ফলে বিভিন্ন শ্রেণি ও জাতির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠত। তবে সমাজে চণ্ডালদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারা ছিল অপাংক্তেয়, তাদের ছোঁয়া যেত না এবং উচ্চবর্ণের মানুষরা তাদের ওপর অত্যাচার করত।
  • নারীমর্যাদা – নারীদের বেদচর্চা করার অধিকার ছিল। সমাজে কুমারী মেয়েরা দেবদাসী হত। তারা শাসনকাজে অংশগ্রহণ করতে পারত। নারীরা নিজেদের স্বামী বাছাই করতে পারত। তবে সেসময়ে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হত। এ যুগে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল।
  • গুপ্ত পরবর্তী যুগে সমাজ – গুপ্ত পরবর্তী যুগে দক্ষিণ ভারতে জাতিভেদ প্রথা আরও কঠোর হয়ে উঠেছিল। ব্রাহ্মণরা ছিলেন সমাজের প্রধান কর্তৃপক্ষ। সেখানে শূদ্রদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সাধারণত সমাজ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল – ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণ। সি-ইউ-কি থেকে জানা যায়, তখন ভারতে জাতিপ্রথার প্রচলন ছিল এবং অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ ছিল না। রাজপুত যুগে একটি নতুন শ্রেণি উদ্ভূত হয়, যারা ছিল কায়স্থ এবং তাদের কাজ ছিল কেরানি।
  • নারীর অবস্থা – এ সময় সমাজে সহমরণ প্রথার প্রচলন ছিল। উচ্চবর্ণের নারীরা পর্দানশিন থাকতেন।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের বিবর্তন চিহ্নিত করো।

প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন সাহিত্য, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়কালের ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়, যেমন –

  • ষোড়শ মহাজনের সময় – ষোড়শ মহাজনপদের যুগে ভারতে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। পালি সাহিত্যে বাণিজ্য শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে যুগে স্বার্থবাহ নামে ভ্রাম্যমাণ বণিকদের কথা জানা যায়। অষ্টাধ্যায়িতে গো-বাণিজ্য-এর উল্লেখ আছে। সেযুগে ধাতু মুদ্রা দিয়ে দ্রব্য কেনাবেচা হত।
  • মৌর্য যুগে বাণিজ্য – মৌর্য যুগে জলপথ ও স্থলপথে দেশবিদেশে বাণিজ্য চলত। এ যুগের বিখ্যাত বন্দর ছিল: সোপারা, ব্রোচ, তাম্রলিপ্ত ইত্যাদি। বাণিজ্য ছিল মূলত দ্রব্য বিনিময় দ্বারা। পাটলিপুত্রে বাণিজ্য তদারকির জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়। এটি পণ্যের মান ও ওজন দেখভাল করত এবং বিদেশি বণিকদের দেখাশোনা করত।
  • কুষাণ যুগে বাণিজ্য – কুষাণ যুগে মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন হত। এ যুগেই প্রথম স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ঘটে, যা বাণিজ্যের পথকে সহজ করে। সেযুগে রেশম পথ তৈরি হয়, যেখান থেকে কুষাণ রাজারা প্রচুর কর আদায় করত। তখন তাম্রলিপ্ত ছিল পূর্ব ভারতের প্রধান সমুদ্র বন্দর।
  • গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে বাণিজ্য – গুপ্ত যুগের শেষে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে রোম-ভারত বাণিজ্যে। তবে গুপ্ত পরবর্তী যুগে দক্ষিণ ভারতে চোল রাজাদের রাজত্বকালে বহির্বাণিজ্যের বৃদ্ধি ঘটে। চালুক্য ও রাষ্ট্রকূটদের সঙ্গে আরবদের ভালো ব্যবসাবাণিজ্য হত। চোলদের রাজত্বে মহাবলীপুরম ও কারিকল ছিল ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর।

সাতবাহন আমলে দক্ষিণ ভারতের গ্রামীণ জীবন কেমন ছিল?

হাল নামে সাতবাহন রাজ্যের এক রাজা ছিলেন। তিনি প্রাকৃত ভাষায় “গাথা সপ্তশতী” নামে একটি বই লিখেছিলেন। এই গ্রন্থ থেকে সমকালীন (প্রথম-দ্বিতীয় শতক) দক্ষিণ ভারতের গ্রাম-জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।

যেমন – গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষিজীবী। তারা ধান, তেলের বীজ, কার্পাস, শণ ইত্যাদি চাষ করত। বাড়িগুলি খড় দিয়ে ছাওয়া হত এবং তার চারপাশে থাকত পাঁচিল। গ্রামগুলিতে পুকুর, ফুলবাগান, বটগাছ ইত্যাদি থাকত। গ্রামের মানুষ নানা গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করত। বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তাগুলি কাদায় ভরে থাকত। গ্রামের শাসন ছিল গ্রামণীর হাতে। চোর-ডাকাতের ভয়ে মানুষ টাকা-পয়সা মাটিতে পুঁতে রাখত। গ্রামের মানুষ ছবি আঁকত, উৎসবের সময় নাচ, গান-বাজনায় মেতে উঠত। গ্রাম্য মন্দিরগুলিতে সাধারণত সূর্য ও অগ্নিদেবের পূজা হত। তবে সেখানে বৌদ্ধধর্মের ভালো প্রসার ছিল।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন