আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায়, ‘প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)’ অধ্যায়ের কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
গুরুকুল ব্যবস্থা কাকে বলে?
বৈদিক যুগে ছাত্রকে গুরুর গৃহে গিয়ে পড়াশোনা করতে হত। গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় গুরুকুল ব্যবস্থা।
উপাধ্যায় কাকে বলে?
বৈদিক যুগে যে-শিক্ষক ছাত্রের কাছ থেকে বেতন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট বিষয় পড়াতেন তাকে উপাধ্যায় বলা হত।
আচার্য কাকে বলে?
বৈদিক যুগে শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্ররা বিনা বেতনে শিক্ষালাভ করত সেই শিক্ষককে আচার্য বলা হত।
প্রাচীন ভারতের দুটি শিক্ষাকেন্দ্রের নাম লেখো।
প্রাচীন ভারতের দুটি শিক্ষাকেন্দ্রের নাম হল নালন্দা মহাবিহার ও তক্ষশিলা মহাবিহার।
নালন্দার শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
নালন্দা মহাবিহারে বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের ছাত্ররা পড়াশোনা জয় করত। সেখানে ভরতি হতে গেলে কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হত। এই মহাবিহারে পরীক্ষার সুবন্দোবস্ত ছিল। চিন, তিব্বত, কোরিয়া, সুমাত্রা, জাভা থেকে ছাত্ররা নালন্দায় পড়তে আসত।
মহাবিহার কাকে বলা হত?
কিছু কিছু বৌদ্ধবিহারকে মহাবিহার বলা হত। সেখানে দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসত।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি কোন্ রাজাদের আমলে গড়ে ওঠে? এখানে কী কী পড়ানো হত?
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি গুপ্ত রাজাদের আমলে গড়ে ওঠে। এখানে বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হত, যেমন – ব্যাকরণ, ধর্মশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি।
‘বিদ্যারম্ভ’ অনুষ্ঠান বলতে কী বোঝো?
গুপ্ত যুগের পরবর্তীকালে শিশুর পাঁচ বছর বয়সে আধুনিক সময়ের হাতেখড়ির মতো একটি অক্ষর পরিচয়ের অনুষ্ঠান হত। একেই বলা হয় বিদ্যারম্ভ।
প্রাকৃত ও পালি ভাষা কাকে বলে?
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে একই ভাষা নানাভাবে উচ্চারিত হত। এগুলিকে বলা হয় প্রাকৃত ভাষা। অন্যদিকে ঋগ্বেদের ভাষা ছান্দস বা ছন্দস ভেঙে ভেঙে তৈরি হয় যে ভাষা তাকে বলা হয় পালি ভাষা।
জান কি? – অশোকের শিলালিপির দুটি ভাগ। যথা – শিলালিপি বা পর্বতলিপি এবং স্তম্ভলিপি। শিলালিপিগু লি আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-প্রধান শিলালিপি, ‘অপ্রধান শিলালিপি ও গুহালেখ। অনুরূপভাবে স্তম্ভলিপিগুলিও তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল, যথা-প্রধান স্তম্ভলেখ, অপ্রধান স্তম্ভলেখ ও সাধারণ স্তম্ভলেখ। ক. অশোকের প্রধান শিলালিপিগুলির 14টি সেট ভারতের 1টি জায়গায় পাওয়া গেছে, যেমন – গিরনার লিপি, সোপারা লিপি, শাহবাজগড়ী, মনসেরা, কালসি, যৌগড়া, ধৌলি প্রভৃতি। খ. বহু অপ্রধান পর্বতলিপি পাওয়া গেছে, যেমন – গবীমঠ, মাক্সিক, ব্রহ্মগিরি, এড়ড়গুড়ি প্রভৃতি। গ. এ ছাড়া অশোকের 37টি স্তম্ভলেখ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে সারনাথ, লুম্বিনী, এলাহাবাদের স্তম্ভলেখ ছিল। উল্লেখযোগ্য। ঘ. অশোকের গুহালেখ পাওয়া গেছে বিহারের বরাবর পাহাড়ে।
কোন্ সময় এবং কেন সমাজে বৈশ্যদের মর্যাদা বাড়ে?
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটলে বৈশ্যরা ধনী হয়ে ওঠে। সে কারণেই সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
কাদের লেখা থেকে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের কথা জানা যায়?
ফাসিয়ান ও সুয়ান জাং -এর লেখা থেকে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের কথা জানা যায়।
জেনে রাখো – আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের একটি বৌদ্ধ মহাবিহার ছিল মোগলমারির মহাবিহারটি। এটি আবিষ্কার করেন প্রত্নতাত্ত্বিক ড. অশোক দত্ত। যদিও এই প্রাচীন মহাবিহারটির প্রকৃত নাম কী তা জানা যায়নি। অনেকের মত যে, সুবর্ণরেখা নদী একসময় এই বিহারটির খুব কাছ দিয়ে বয়ে যেত এবং মগধ থেকে তাম্রলিপ্ত বন্দর যাওয়ায় পথের মধ্যে এই বিহারটির অবস্থান ছিল।
দেবনাগরী লিপি কী?
ব্রাহ্মী লিপি থেকে দেবনাগরী লিপির সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় কাজে বা দেবতার কাজে নগরের ব্রাহ্মণরা ওই লিপির ব্যবহার করতেন। তাই তার নাম দেবনাগরী লিপি।
জান কি? – ব্রাহ্মী লিপি লেখা হত বাঁ দিক থেকে ডান দিকে। খরোষ্ঠী লিপি লেখা হত ডান দিক থেকে বাঁ দিকে।
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে যে দুরকম লিপির চল ছিল তার নাম লেখো।
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে যে দুরকম লিপির চল ছিল তার নাম ব্রাহ্মী লিপি ও খরোষ্ঠী লিপি।
প্রাচীন ভারতের দুটি মহাকাব্যের নাম লেখো।
প্রাচীন ভারতের দুটি মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত।
টুকরো কথা – বিশ্বের প্রাচীনতম মহাকাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম। রামায়ণ ও মহাভারত। মূল রামায়ণ রচনা করেছেন মহাকবি বাল্মীকি। এটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এটি সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। এতে মোট শ্লোক আছে 24 হাজার। রামায়ণ সৃষ্টি নিয়ে মতভেদ আছে। এটি নানা সময় পরিমার্জিত ও সংকলিত হয়েছে। তাই এর সময়কাল ধরা হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে। মহাকাব্যের মূল চরিত্রে আছেন রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, রাবণ প্রমুখ। মূল গল্পটি গড়ে উঠেছে রাম-রাবণের যুদ্ধকে ঘিরে। মহাভারত রচনা করেছেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। এই মহাকাব্যটিও সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে কৌরব-পাণ্ডবের স্বন্দ্বকে ঘিরে। যে-দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যা 18 দিন ধরে চলেছিল। তাতে পাণ্ডবরা জয়ী হয়। মহাভারতের আদিনাম ছিল জয়কাব্য। তখন এর শ্লোকসংখ্যা ছিল 8800টি। মূল মহাভারতের মোট সর্গ ছিল 18টি এবং পর্ব ছিল 100টি। বৈশম্পায়ন তাতে আরও শ্লোক যোগ করে এর নাম রাখলেন ভারত। সৌতি তাতে আরও শ্লোক জুড়ে করলেন মহাভারত। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, মহাভারত একজন ব্যক্তির লেখা নয় বা কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে লেখা হয়নি। তাই এর রচনাকাল ধরা হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যে।
মহাভারতের আদি নাম কী? কে মহাভারত নামকরণ করেন?
মহাভারতের আদি নাম জয়কাব্য। মহাভারত নামকরণ করেন সৌতি।
মহাভারতকে পঞ্চমবেদ বলা হয়েছে কেন?
অথবা, পঞ্চমবেদ কাকে বলা হয়? এরূপ বলার কারণ কী?
প্রাচীন ভারতের ঋষিরা বলতেন যে, মহাভারতের চর্চা করলে বেদচর্চার মতোই সুফল হবে। তাই মহাভারতকে বলা হয় পঞ্চমবেদ।
তামিল সাহিত্যকে সঙ্গম সাহিত্য বলা হয় কেন?
খ্রিস্টপূর্ব 200 থেকে খ্রিস্টীয় 300 অব্দের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের মাদুরাই নগরীতে তিনটি সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। এই সম্মেলনগুলি সঙ্গম নামে পরিচিত। তাই তামিল সাহিত্যকে সঙ্গম সাহিত্য বলা হয়।
মৃচ্ছকটিকম বলতে কী বোঝো? এটি কে লেখেন?
অথবা, মৃচ্ছকটিকম কার লেখা? মৃচ্ছকটিকম কথার অর্থ কী?
মৃচ্ছকটিকম নাটকটি লেখেন শূদ্রক। মৃচ্ছকটিকম কথার অর্থ বোঝায় মাটির তৈরি ছোটো গাড়ি।
জেনে রাখো – মৃচ্ছকটিকম কথাটির অর্থ হল মাটির তৈরি ছোটো গাড়ি। ‘মৃৎ’ মানে মাটি আর ‘শকটিকা’ মানে ছোটো শকট বা গাড়ি।
বিশাখদত্তের নাটকদ্বয়ের নাম বিষয়বস্তুসহ লেখো।
অথবা, মুদ্রারাক্ষস নাটকের বিষয়বস্তু কী?
অথবা, বিশাখদত্তের লেখা দুটি বিখ্যাত নাটকের নাম লেখো।
বিশাখদত্তের লেখা নাটকদ্বয়ের নাম হল মুদ্রারাক্ষস ও দেবীচন্দ্রগুপ্তম। মুদ্রারাক্ষস – এর বিষয়বস্তু নন্দরাজ ধননন্দকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন আরোহণ। অন্যদিকে দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকে গুপ্তবংশীয় রাজা রামগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে শকরাজার যুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে।
তামিল সাহিত্যে মহাকাব্য কাকে বলা হত? দুটি তামিল মহাকাব্যের নাম লেখো।
তামিল ভাষাতে লেখা দীর্ঘ কবিতাগুলিকে তামিল সাহিত্যে মহাকাব্য বলা হত। দুটি তামিল মহাকাব্যের নাম শিলপ্পাদিকারম ও মণিমেখলাই।
মহাকবি কালিদাসের লেখা দুটি কাব্য ও দুটি নাটকের নাম লেখো।
মহাকবি কালিদাসের লেখা দুটি কাব্য হল মেঘদূতম ও কুমারসম্ভবম। দুটি নাটকের নাম অভিজ্ঞান শকুন্তলম ও মালবিকাগ্নিমিত্রম।
হর্ষবর্ধনের লেখা তিনটি নাটকের নাম লেখো।
রাজা হর্ষবর্ধনের লেখা তিনটি নাটকের নাম হল – নাগানন্দ, রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শিকা।
প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা বিষয়ক দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা বিষয়ক দুটি গ্রন্থের নাম চরক সংহিতা ও শুশ্রুত সংহিতা।
সংখ্যায়ন কী? সূর্যসিদ্ধান্ত বইটি কার লেখা?
পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি মিলিয়ে বৌদ্ধদের গণিতবিজ্ঞান তৈরি হয়েছিল। সেই গণিতবিজ্ঞানকে জৈনরা সংখ্যায়ন বলত। সূর্যসিদ্ধান্ত বইটি আর্যভট্টের লেখা।
আর্যভট্ট কী জন্য স্মরণীয়?
গুপ্ত যুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ ছিলেন আর্যভট্ট। তিনিই প্রথম শূন্যের ব্যবহার করেন এবং দশমিকের ধারণা তৈরি করেন। তাঁর মতে, পৃথিবী গোলাকার ও নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে বরাহমিহিরের অবদান উল্লেখ করো।
গুপ্ত যুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন বরাহমিহির। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল পঞ্চসিদ্ধান্তিকা। তিনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তার আগাম লক্ষণ, ভূমিকম্পের বিভিন্ন প্রাকৃতিক লক্ষণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রাচীন ভারতে স্থাপত্য কর্মগুলি কী কারণে তৈরি করা হত? অথবা, এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
প্রাচীন ভারতে অসংখ্য স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল। ভারতের নানা স্থানে এর অজস্র উদাহরণ রয়েছে। আসলে এগুলি নির্মাণের মধ্যদিয়ে শাসকরা তাঁদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব জাহির করতেন। এ ছাড়া ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য অথবা, কোনো ক্ষেত্রে জনকল্যাণের জন্যও শাসকরা এরূপ স্থাপত্য নির্মাণ করতেন।
প্রাচীন সমাজে স্থাপত্যগুলি মূলত কত রকমের এবং কী কী কাজের জন্য বানানো হত?
প্রাচীন সমাজে স্থাপত্যগুলি মূলত দু-রকমের কাজের জন্য বানানো হত। এই স্থাপত্যগুলি একদিকে যেমন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য বানানো হত অন্যদিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনেও স্থাপত্য নির্মিত হত।
গুপ্ত যুগে ধাতু শিল্প কীরূপ ছিল?
অথবা, গুপ্ত যুগে ধাতুবিজ্ঞান কেমন ছিল?
গুপ্ত যুগে ধাতুশিল্প যে-খুব উন্নত ছিল, তার সাক্ষ্য বহন করে সেযুগে নির্মিত মেহরৌলির স্তম্ভ। এটি লোহা দিয়ে তৈরি। এখনও এটি দিল্লির কুতুবমিনারের পাশে অক্ষত অবস্থায় আছে। তাতে এখনও মরচে ধরেনি। এটিই প্রমাণ করে সেযুগে ধাতু শিল্প কতটা উন্নত ছিল।
গুহাবাস কাকে বলে?
অথবা, অশোক ও তাঁর পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের থাকার কোন্ ব্যবস্থা করেছিলেন?
অশোক ও তাঁর পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের জন্য পাহাড় কেটে কৃত্রিম গুহা বানাত। সেই গুহাগুলির ভিতরে সন্ন্যাসীরা থাকতেন বলে সেগুলিকে গুহাবাস বলা হত।
গন্ধার শিল্প বলতে কী বোঝো?
কুষাণ যুগে গ্রিক, রোম ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে এক নতুন ভাস্কর্য শিল্পরীতির জন্ম হয়। বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধধর্ম এই দুই শিল্পরীতির সংমিশ্রণ হল গন্ধার শিল্পরীতি। এই শিল্প গড়ে ওঠে গন্ধার অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। এজন্য এই নতুন শিল্প তথা শিল্পরীতিকে বলা হয় গন্ধার শিল্প।
গন্ধার শিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
গন্ধার শিল্পের একাধিক বৈশিষ্ট্য ছিল। তার মধ্যে অন্যতম দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- এই শিল্পরীতিতে গৌতম বুদ্ধের মূর্তিগুলি নির্মিত হয়েছিল গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে।
- এই শিল্পের বিষয়বস্তু ছিল বৌদ্ধধর্ম তথা বুদ্ধের মূর্তি।
মথুরা শিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
মথুরা শিল্পের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল –
- এই শিল্পরীতি ছিল সম্পূর্ণ ভারতীয়।
- এই শিল্পরীতিতে বুদ্ধমূর্তি বা ভারতীয় দেবদেবীর অবয়ব-গুলি বিশালাকারে তৈরি হত।
স্তূপ কী? একটি উদাহরণ দাও।
গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিতে ইট ও পাথর দিয়ে নির্মিত স্থাপত্যকেই বলা হয় স্তূপ।। একটি স্তূপের উদাহরণ হল সাঁচি স্তূপ।
গন্ধার ভাস্কর্যে কোন্ দেশের প্রভাব লক্ষ করা যায়? মথুরা রীতির ভাস্কর্যে কোন্ পাথর বেশি ব্যবহার হত?
গন্ধার ভাস্কর্যে গ্রিক ও রোমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মথুরা রীতির ভাস্কর্যে লাল চুনাপাথরের বেশি ব্যবহার হত।
তোরণ কী?
বৌদ্ধ স্তূপের চারদিকে চারটি বড়ো বড়ো দরজা থাকত। এই দরজাগুলিকে তোরণ বলা হয়। তোরণগুলিতে ভাস্কর্য খোদাই করা হত।
চৈত্য কাকে বলে?
সরাসরি পাহাড় কেটে যে-সমস্ত গুহাবাস তৈরি করা হত সেগুলিকে বলা হয় চৈত্য। চৈত্যের আকার হয় সাধারণত লম্বাটে ধরনের এবং এর শেষ প্রান্তে উপাসনার জন্য একটি স্তূপ থাকত। যেমন – নাগার্জুনী পাহাড়ের চৈত্য।
গুপ্ত যুগের দুটি চৈত্যগুহার নাম লেখো।
গুপ্ত যুগের দুটি উল্লেখযোগ্য চৈত্যগুহা হল অজন্তা ও ইলোরা।
বিহার বা সংঘারাম কেন তৈরি করা হত?
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার ও পড়াশোনার জন্যই বিহারগুলি তৈরি হত। এগুলি ছিল গুহার সমষ্টি। গুহাবাস হিসেবেও ব্যবহার করা হত।
বিহার ও স্তূপের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।
স্তূপ হল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপাসনাস্থল। অপরদিকে বিহার হল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার ও পড়াশোনা করার স্থান।
পল্লব শিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
পল্লব শিল্পের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল –
- মহেন্দ্ররীতি – এই রীতিতে একটি মাত্র পাহাড় কেটে মন্দিরগুলি তৈরি হত।
- মহামল্ল রীতি – এই রীতিতে মন্দিরগুলি তৈরি হত রথের আদলে।
অজন্তা গুহাচিত্র সম্পর্কে যা জানো লেখো।
অজন্তা গুহায় গুপ্তযুগের অনেকগুলি গুহাচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এই চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম – মাতা ও পুত্র, হরিণ চতুষ্টয়, বোধিসত্ত্ব চক্রপানি ইত্যাদি। পার্শি ব্রাউন এই চিত্রগুলিকে ফ্রেসকোধর্মী বা দেওয়াল চিত্র বলে মনে করেন। চিত্রগুলি ভাব ও বঞ্চনায় ছিল অতুলনীয়।
সপ্ত প্যাগোডা কী?
দক্ষিণ ভারতের মহাবলিপুরমে পল্লব রাজারা পাহাড় কেটে রথের আদলে 7টি মন্দির নির্মাণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – পঞ্চপাণ্ডব রথ, দ্রৌপদী রথ। এই মন্দিরগুলিকেই একত্রে বলা হয় সপ্ত প্যাগোডা।
প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্রকে উপবেদ বলা হত কেন?
প্রাচীন যুগে ভারতীয় সমাজে চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটে। এই সময় একাধিক চিকিৎসাশাস্ত্র লেখা হয়। এর ফলে বেদ – এর মতো চিকিৎসাশাস্ত্রের মর্যাদা ও গুরুত্ব বাড়ে। সে জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রকে তখন বলা হত উপবেদ।
চন্দ্রকেতুগড় – টীকা লেখো।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় প্রাচীন বাংলার প্রত্নকেন্দ্র চন্দ্রকেতুগড়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে মৌর্য আমলের আগে থেকে শুরু করে পাল-সেন যুগের নানান প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে মাটির পাত্র, সিলমোহর, মূর্তি ইত্যাদি। একসময় এটি ছিল প্রাচীন বাংলার এক উন্নত বাণিজ্যকেন্দ্র তথা সমৃদ্ধ জনপদ।
বৌদ্ধবিহারগুলিতে ধর্মীয় বিষয়গুলি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও পড়াশোনা হত বিশ্লেষণ করো।
প্রাচীন ভারতের বৌদ্ধবিহারগুলিতে ধর্মগ্রন্থ পাঠ সহ অন্যান্য বিষয়ে চর্চা হত। এসব তালিকায় ছিল-ছন্দ, কাব্য, ব্যাকরণ। এছাড়া ছাত্ররা তির ও তরবারি চালানো, কুস্তি ও অন্যান্য খেলাধুলার চর্চা করত। আবার শ্রমণ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সুতোকাটা ও কাপড় বোনায় তালিম নিত।
কোন্ কোন্ দেশ থেকে নালন্দায় ছাত্ররা পড়তে আসত?
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন, তিব্বত, জাভা প্রভৃতি দেশ থেকে ছাত্ররা লেখাপড়া করতে আসত।
বিঘ্নশর্মার পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটির গুরুত্ব কী?
পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটি রচনা করেন বিষ্ণুশর্মা। এটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এটি নীতিমূলক লোককথা বা লোকসাহিত্য। সম্ভবত খ্রিস্টীয় প্রথম বা দ্বিতীয় শতক। নাগাদ এর গল্পগুলি সংকলন করা হয়েছিল।
কিছু বৌদ্ধবিহারকে কী বলা হত? গুপ্ত রাজারা কী দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সাহায্য করতেন?
কিছু বৌদ্ধবিহারকে মহাবিহার বলা হত। এই বৌদ্ধবিহারগুলিতে ছাত্রদের নানা ধরনের শিক্ষা দেওয়া হত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি গুপ্ত রাজাদের প্রত্যক্ষ দানে (যেমন – অর্থ সাহায্য ও জমিদান) গড়ে উঠত।
অশ্বঘোষ কে ছিলেন? তাঁর বিখ্যাত রচনা কোনটি?
অশ্বঘোষ ছিলেন কুষাণরাজ কণিষ্কের সভাকবি তথা বৌদ্ধ দার্শনিক। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থটি হল বুদ্ধচরিত।
দশকুমার চরিত কার লেখা? এটি কোন্ ভাষায় লেখা?
দশকুমার চরিত রচনা করেন দন্ডী। এটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা।
গাথা সপ্তশতী কার লেখা? এটি কোন্ ভাষায় লেখা?
গাথা সপ্তশতী সাতবাহন রাজ হালের লেখা। এটি প্রাকৃত ভাষায় লেখা।
পুরাণ কী? ভারতে পুরাণের সংখ্যা কটি?
প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনি যে ঐতিহাসিক উপাদানগুলিতে তুলে ধরা হয় তাকে বলা হয় পুরাণ। ভারতে পুরাণের সংখ্যা আঠারোটি।
অষ্টাধ্যায়ী কী? এটির রচয়িতা কে?
অষ্টাধ্যায়ী হল একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ। এটি রচনা করেন পাণিনি।
জীবক কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে তিনটি বাক্য লেখো।
অথবা, জীবক সম্পর্কে লেখো।
জীবক ছিলেন গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক একজন বৌদ্ধপন্ডিত ও চিকিৎসক। জীবক তক্ষশিলায় গিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে শিক্ষক আত্রেয়র নিকট ভেষজ বিদ্যা লাভ করেন। পরে তিনি মগধরাজ বিম্বিসার ও গৌতম বুদ্ধের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হন।
নাগার্জুন কী জন্য বিখ্যাত?
নাগার্জুন ছিলেন কুষাণ যুগের বিজ্ঞানচর্চার জনক। অন্যদিকে তিনি ছিলেন বৌদ্ধ দার্শনিক ও গণিতবিদ। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ লেখেন। এরূপ একটি গ্রন্থ হল মাধ্যমিক সূত্র।
গুপ্তযুগে শিল্পচর্চার দুটি দিক লেখো।
গুপ্তযুগের শিল্পচর্চার দুটি দিক ছিল স্থাপত্য শিল্প, চিত্রশিল্প। এযুগে অনেক মন্দির স্থাপত্য, যেমন – তিগোয়ার বিষ্ণুমন্দির এবং চিত্রশিল্প বা গুহা চিত্রশিল্প, যেমন – মাতা ও পুত্র, বোধিসত্ত্ব চক্রপাণি তৈরি হয়।
গুপ্তযুগের দুটি চিত্রশিল্পের উদাহরণ দাও।
গুপ্তযুগের দুটি চিত্রশিল্পের উদাহরণ হল অজন্তা গুহার মাতা ও পুত্র এবং বোধিসত্ত্ব চক্রপাণি চিত্র।
গুপ্তযুগের চিত্রশিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
গুপ্তযুগের চিত্রশিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- এগুলি ছিল ফ্রেসকোধর্মী বা দেয়াল চিত্র।
- চিত্রগুলি ছিল ধর্মকেন্দ্রিক (উদাহরণ – বোধিসত্ত্ব চক্রপাণি)
বিশল্যকরণীর বিবরণ দাও।
রামায়ণে রাম-রাবণের যুদ্ধে রাবণের শক্তিশেলের আঘাতে লক্ষ্মণ গুরুতর আহত হন। তখন সুষেণ নামে এক বৈদ্য-বিশাল্যকরণী নামে একটি ঔষধি গাছের কথা বলেন। হনুমান সেই গাছ নিয়ে এলে তিনি লক্ষ্মণকে সুস্থ করে তোলেন। এখানে মনে রাখতে হবে, বিশল্যকরণী মানে বিশেষরূপে শল্যকরণ বা অস্ত্রোপচারের পর যে ঔষধি গাছ ব্যবহার করা হয়।
শুশ্রুত কে ছিলেন?
শুশ্রুত ছিলেন প্রাচীন ভারতের খ্যাতনামা শল্য চিকিৎসক। এ বিষয়ে তাঁর লেখা গ্রন্থটি হল শুশ্রুত সংহিতা। তিনি এই গ্রন্থে কারিগরদের হাতের কাজকে প্রশংসা করেছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!