ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – অধ্যায় সারসংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, ‘ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)’ অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)

প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, চিন সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা, পারসিক সাম্রাজ্য এবং রোমান সভ্যতার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল বিভিন্ন পথের মাধ্যমে।

প্রাচীন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতা

মেসোপটেমিয়া সত্যতা

টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মাঝখানে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা সুমেরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছিল। কিউনিফর্ম লিপি, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা যে আবিষ্কারগুলি করেছিল তা আরও বিস্তার লাভ করেছিল অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। এই সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল –

  • ক. কিউনিফর্ম লিপি,
  • খ. কাঠের চাকার ব্যবহার,
  • গ. হামুরাবি লিখিত আইন।

মিশরীয় সভ্যতা

উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাসের মতে, এই সভ্যতা ছিল ‘নীলনদের দান’। মিশরীয় সভ্যতায় রাজাদের বলা হত ফ্যারাও। মৃতদেহ সংরক্ষিত করার জন্য পিরামিড বানানো হত। এখানে প্যাপিরাস গাছের ছালে লেখা শুরু হয়। এই প্যাপিরাস থেকে পেপারের উৎপত্তি হয়েছে। মিশরীয় সভ্যতায় হায়ারোগ্লিফ লিপি এর সৃষ্টি হয়।

চিন সভ্যতা

হোয়াংহো ও ইয়াংসিকিয়াং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা। বহিঃশত্রুর আক্রমণ রুখতে চিনের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল।

গ্রিক সত্যতা

প্রাচীন গ্রিসে পলিসের উৎপত্তি হয়েছিল। এথেন্স ও স্পার্টা ছিল গ্রিসের বিখ্যাত নগররাষ্ট্র বা পলিস। এখানে হেরোডোটাস, থুকিডাইডিস, টলেমি প্রমুখ বিখ্যাত ঐতিহাসিকের জন্ম হয়। এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের কথা গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডিস-এর লেখায় লক্ষ করা যায়। এই সভ্যতায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিতের চর্চা হত। এখানে ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে তত্ত্বেরও সৃষ্টি হয়।

পারসিক সাম্রাজ্য

পারস্য উপসাগরের উত্তরে এই সাম্রাজ্যের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে পারসিক সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। কুরুষ ও প্রথম দরায়বৌষ ছিলেন দুজন বিখ্যাত পারসিক সম্রাট।

রোমান সভ্যতা

বিশ্বের ইতিহাসে ঘটনাবহুল সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত রোমান সাম্রাজ্য। ভূমধ্যসাগরের ইটালির উপকূলে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। এই সাম্রাজ্য থেকে রাজনীতি, আইন, শিল্প ও স্থাপত্যের ছাপ সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক জিশুখ্রিস্টকে জেরুজালেমে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল রোমের রাজকর্মচারীর নির্দেশে।

ভারত ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম

ভারত ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ছিল হিমালয় পর্বতশ্রেণি এিবং সমুদ্র। এই পথে ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ঘটত। এই পথগুলি দিয়ে বৈদেশিক জাতি ভারতে এসে ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে মিশে গেছে। ‘সিন্ধব’ অঞ্চল নামটি যেমন গ্রিক ঐতিহাসিকদের রচনা থেকে জানা গেছে, অপরদিকে ‘হিন্ধব’ বা ‘হিন্দু’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে পারসিক ঐতিহাসিকদের রচনা থেকে।

রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম

ভৌগোলিক কারণে উত্তর-পশ্চিম অংশের স্থলপথ দিয়ে বেশিরভাগ বিদেশি জাতি ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল।

  • পারস্যের সঙ্গে সম্পর্ক – উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশের গন্ধারের মধ্য দিয়ে পারসিক সাম্রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের দ্বিতীয়ভাগে পারস্যের হখামনীষীয় শাসকরা গন্ধার অভিযান চালায়। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন প্রথম দরায়বৌষ। তাঁর একটি লেখতে ‘হিদুষ’ শব্দটি পাওয়া যায়, যার উৎপত্তি হয়েছে সিন্ধুনদ থেকে। নিম্ন সিন্ধু এলাকাও তাঁর শাসনের মধ্যে ছিল।
  • গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্ক – আলেকজান্ডারের আক্রমণের পথ ধরে একাধিক গ্রিক ঐতিহাসিক ভারতে এসেছেন। হেরোডোটাস, থুকিডাইডিস বা থুকিদিদিস, টলেমি, প্লিনি প্রমুখ ঐতিহাসিকের রচনা থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, ভূগোল এবং গ্রিক সভ্যতার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের কথা জানা যায়।
  • মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক – মৌর্য রাজবংশের আমল থেকে ব্যাকট্রীয়-গ্রিক, শক প্রভৃতি জাতির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ইন্দো-গ্রিক রাজাদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত মিনান্দারের নাম উল্লেখযোগ্য। মিলিন্দপঞহো বা মিলিন্দপ্রশ্ন বই থেকে মিনান্দারের রাজ্যের কথা জানা যায়।

অর্থনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাইরের দেশের সঙ্গে উপমহাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। স্থলপথ ও জলপথে এই বাণিজ্যিক যোগাযোগ চলত। রেশম ছিল স্থলপথগুলির প্রধান বাণিজ্যিক দ্রব্য। রেশম পথের একটি শাখা ছিল কুষাণদের দখলে। ফলে রেশম বাণিজ্য থেকে কুষাণ শাসকরা প্রচুর শুল্ক আদায় করতেন। জনৈক গ্রিক নাবিকের লেখা পেরিপ্লাস অব্ দি ইরিথ্রিয়ান সি গ্রন্থটি থেকে ভারতের মৌসুমি বায়ু, সমুদ্রের গতিপ্রকৃতি, বিভিন্ন বন্দর, বাণিজ্যিক দ্রব্য প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের কাছাকাছি তাম্রলিপ্ত বন্দরের অবস্থান। খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতক পর্যন্ত এই বন্দরের কাজকর্ম চালু ছিল। বিদেশি লেখকদের রচনা থেকে এই বন্দরের কথা জানা যায়।

সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম

শক, কুষাণ প্রভৃতি শক্তির আক্রমণের ফলে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চল বিদেশি শক্তির দখলে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের শাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সাংস্কৃতিক ভাবের আদানপ্রদান, ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রিস, মিশর, ব্যাবিলন প্রভৃতি সভ্যতায় যে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল তা পরবর্তী সময়ে ভারতের শিল্পচর্চায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। ব্রহ্মাণ্ড, গ্রহ-নক্ষত্র, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে ভারত-সহ অন্যান্য সভ্যতাগুলি যে আবিষ্কার করেছিল তা কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বৌদ্ধ ধর্মচর্চা বিস্তারলাভ করেছিল। চিনের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মচর্চার আদানপ্রদান ঘটতে থাকে। নালন্দা, বিক্রমশীল, তক্ষশিল মহাবিহারে চিন থেকে অনেক পণ্ডিত ধর্ম ও শিক্ষালাভ করতে আসতেন। ফাসিয়ান (ফা-হিয়েন), সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ), ইৎ-সিং প্রমুখ পর্যটক ভারতে এসেছিলেন বৌদ্ধ ধর্মচর্চা করতে। বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চিনে প্রসারিত করার জন্য কুমারজীব সেখানে গিয়েছিলেন।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, “ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)” অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Sample Questions with Answers)

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Model Question)

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ