আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, ‘অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)’ অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
নীচের বিবৃতিগুলির সঙ্গে কোন ব্যাখ্যাটি সব থেকে বেশি মানানসই বেছে বের করো
বিবৃতি – মৌর্য-পরবর্তী যুগে অনেকগুলি গিল্ড গড়ে উঠেছিল
- ব্যাখ্যা – 1. রাজারা ব্যাবসাবাণিজ্য বাড়ানোর জন্য গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
- ব্যাখ্যা – 2. কারিগর ও ব্যবসায়ীরা গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
- ব্যাখ্যা – 3. সাধারণ মানুষ টাকা লেনদেন ও গচ্ছিত রাখার জন্য গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
উত্তর – ব্যাখ্যা – 2. কারিগর ও ব্যবসায়ীরা গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
বিবৃতি – দাক্ষিণাত্যে ভালো তুলোর চাষ হত।
- ব্যাখ্যা – 1. দাক্ষিণাত্যের কালো মাটি তুলো চাষের পক্ষে উপযোগী ছিল।
- ব্যাখ্যা – 2. দাক্ষিণাত্যের সমস্ত কৃষক শুধু তুলোর চাষ করতেন।
- ব্যাখ্যা – 3. দাক্ষিণাত্যের মাটিতে অন্য ফসল হত না।
উত্তর – ব্যাখ্যা – 1. দাক্ষিণাত্যের কালো মাটি তুলো চাষের পক্ষে উপযোগী ছিল।
সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো
জনপদগুলি হল_____(কৃষিভিত্তিক / শিল্পভিত্তিক / শ্রমিকভিত্তিক) গ্রামীণ এলাকা।
উত্তর – কৃষিভিত্তিক
মৌর্য আমলে অর্থনীতি মূলত_____(শিল্পের/কৃষির/ ব্যাবসাবাণিজ্যের) ওপরে নির্ভর করত।
উত্তর – কৃষির
গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী আমলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে জমিদানকে বলা হয়_____(সামন্ত/বেগার/অগ্রহার) ব্যবস্থা।
উত্তর – অগ্রহার
নিজের ভাষায় ভেবে লেখো (তিন/চার লাইন)
প্রথম নগরায়ণ (হরপ্পা) এবং দ্বিতীয় নগরায়ণ (মহাজনপদ) -এর মধ্যে কোন্ ধরনের পার্থক্য তোমার চোখে পড়ে?
প্রথম নগরায়ণ (হরপ্পা) এবং দ্বিতীয় নগরায়ণ (মহাজনপদ) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
- কেন্দ্রস্থল – প্রাচীন ভারতের প্রথম নগরায়ণ শুরু হয়েছিল হরপ্পা সভ্যতাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ভারতে দ্বিতীয় নগরায়ণ শুরু হয়েছিল ষোড়শ মহাজনপদগুলিকে কেন্দ্র করে।
- সময়কাল – প্রাচীন ভারতের প্রথম নগরায়ণের সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব 3000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দের মধ্যে। কিন্তু ভারতে দ্বিতীয় নগরায়ণের সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব 600 থেকে 300 অব্দের মধ্যে।
- উপকরণ – ভারতের প্রথম নগরায়ণের উপকরণ ছিল পোড়ামাটির ইট। কিন্তু দ্বিতীয় নগরায়ণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত পোড়ামাটির ইট, পাথর ও মাটি।
- স্থান – ভারতে প্রথম নগরায়ণ দেখা দিয়েছিল মূলত সিন্ধু উপত্যকাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ভারতে দ্বিতীয় নগরায়ণের ক্ষেত্র ছিল মূলত গঙ্গা-যমুনা বিধৌত উপত্যকা।
প্রাচীন ভারতে জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল কেন? সে-যুগের জলসেচ ব্যবস্থার সঙ্গে আজকের দিনের জলসেচ ব্যবস্থার কোনো পার্থক্য তোমার চোখে পড়ে কি?
প্রাচীন ভারতে মানুষের জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল মূলত কৃষিকে কেন্দ্র করেই। তাছাড়া প্রাচীন ভারতের রাজন্যবর্গের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। সে কারণে কৃষির উন্নতি ছিল অত্যাবশ্যক। আর কৃষির উন্নতির জন্য অত্যাবশ্যক ছিল উন্নতমানের জলসেচ ব্যবস্থা। তাই প্রাচীনকালে ভারতীয় শাসকরা ও ধনী ব্যক্তিরা কৃষির উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে জলসেচ ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়। জানা যায় যে, মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জমিতে জলসেচের জন্য গুজরাটে সুদর্শন হ্রদ খনন করেন।
প্রাচীনকালের জলসেচ ব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমানের জলসেচ ব্যবস্থার পার্থক্য
- যন্ত্রের তারতম্য – প্রাচীন ভারতে পশুচালিত যন্ত্র দ্বারা জলসেচ করা হত। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত পাম্পিং মেশিন দ্বারা জমিতে জলসেচ করা হয়।
- বিভিন্ন প্রকল্প – প্রাচীন ভারতের শাসকরা জমিতে জলসেচ করার জন্য জলাধার বা জলপ্রকল্প (সেতু) গড়ে তুলতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকার জমিতে জলসেচের জন্য নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন জলসেচ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। যেমন – ডিভিসি।
- উপকৃত কৃষক – প্রাচীন ভারতের জলপ্রকল্প দ্বারা একটি নির্দিষ্ট এলাকার অল্পসংখ্যক কৃষক উপকৃত হতেন। কিন্তু বর্তমানে বড়ো বড়ো জলপ্রকল্পগুলি দ্বারা বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বহু সংখ্যক কৃষক উপকৃত হচ্ছে।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে কৃষির পদ্ধতি ও উৎপাদিত ফসলের মধ্যে কী কী তফাত দেখা যায়?
কৃষিপদ্ধতি ও উৎপাদিত ফসলের মধ্যে তফাতগুলি হল –
বিষয় | উত্তর ভারত | দক্ষিণ ভারত |
উৎপন্ন ফসল | উত্তর ভারতে গম, যব, আখ, ধান প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হত। | দক্ষিণ ভারতে কার্পাস, গোলমরিচ, সুপারি, নারকেল, নানা ধরনের মশলা, শণ প্রভৃতি উৎপন্ন হত। |
যন্ত্রপাতি | এখানে কৃষিকাজে লোহার তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও লাঙলের ফলা ব্যবহৃত হত। | দক্ষিণ ভারতে কৃষিকাজে লোহার তৈরি লাঙলের ফলা ব্যবহৃত হত না। |
জমির প্রকৃতি | উত্তর ভারতের গঙ্গা-যমুনা বিধৌত সমভূমির মাটি ছিল উর্বর। তাই সেখানে ভালো ধান উৎপাদন হত। বিশেষ করে শালি ধান। | দক্ষিণ ভারতের মাটি ছিল কৃষ্ণ মৃত্তিকা। তাই সেখানে উন্নতমানের তুলো উৎপন্ন হত। |
হাতেকলমে করো
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়ে কোন্ কোন্ পেশার মানুষদের কথা তুমি জানতে পারলে, তার তালিকা তৈরি করো। তার মধ্যে কোন্ কোন্ পেশা আজও দেখা যায়? বৈদিক সমাজে চালু জীবিকাগুলির সঙ্গে এই সময়ের পেশাগুলির কী কী মিল-অমিল দেখা যায়?
বিভিন্ন পেশায় মানুষ
কৃষক | কৃষিকাজ করত |
পশুপালক | পশুপালন করত |
বণিক | বাণিজ্য করত |
কুমোর | মাটির পাত্র তৈরি করত |
ধোপা | কাপড় কাচত |
নাপিত | চুল কাটত |
চিকিৎসক (বৈদ্য) | চিকিৎসা করত |
কৃষিশ্রমিক | চাষের জমিতে কাজ করত |
ছুতোর | কাঠের কাজ করত |
কামার | লোহার জিনিসপত্র তৈরি করত |
সুবর্ণকার | সোনার গয়না বানাত |
তাঁতি | কাপড় বুনত |
এই তালিকার সব পেশাই বর্তমানকালে দেখা যায়। বৈদিক সমাজে প্রচলিত পেশার সংখ্যা ছিল কম। তা পরে অনেকটাই বেড়ে যায়। পেশা বর্ণভিত্তিক না-হয়ে কর্মভিত্তিক হয়ে পড়ে। আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সমষ্টিগত উদ্যোগও নজর কাড়ে। পোশাককে কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকার সংস্থান ঘটে। যদিও একথা বলতেই হয় যে, বর্তমানে বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির কারণে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বহু পেশার উদ্ভব ঘটেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষকে অনেক নতুন পেশার সন্ধান দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত পেশার সঙ্গে বৈদিক যুগের পেশার কোনো মিল নেই।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!