Filtration Theory বা ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি বা চুঁইয়ে পড়া নীতি কি? তার গুরুত্ব

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “filtration theory বা ‘ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি’ বলতে কী বোঝো? চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “filtration theory বা ‘ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি’ বলতে কী বোঝো? চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

filtration theory বা 'ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি' বলতে কী বোঝো? চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো।

filtration theory বা ‘ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি’ বলতে কী বোঝো?

লর্ড বেন্টিঙ্কের আইন সচিব ও খ্যাতনামা পন্ডিত টমাস ব্যাবিংটন মেকলে 1835 খ্রিস্টাব্দে তার বিখ্যাত ‘মিনিটস্’ বা প্রতিবেদনে বলেন যে, প্রথমে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তৃত হবে এবং তারপর ধীরে ধীরে তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। ফিলটার বা জল পরিস্তুতকরণ যন্ত্রের জল যেমন নীচে চুঁইয়ে পড়ে, তেমনি পাশ্চাত্য শিক্ষাও ক্রমশঃ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এটিই ‘filtration theory‘ নামে পরিচিত।

চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো।

ভূমিকা – উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো ডাউনওয়ার্ড ফিলট্রেশন থিওরি বা চুঁইয়ে পড়া নীতি। জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে এই চুঁইয়ে পড়া নীতির কথা ঘোষণা করেছিলেন।

পটভূমি – 1813 খ্রিস্টাব্দ সনদ আইনে বলা হয় যে ভারতীয় শিক্ষাখাতে অন্তত 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে কিন্তু এই 1 লক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। টমাস ব্যাবিংটন মেকলে এই সমস্যার সমাধান স্বরূপ বরাদ্দ 1 লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য শিষ্যখাতে ব্যয় করার কথা ঘোষণা করেন।

চুঁইয়ে পড়া নীতি বা ডাউনওয়ার্ড ফিল্মেশন থিওরি – মেকলের বক্তব্য অনুসারে, সমাজের উচ্চবর্গের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাজের নিম্ন স্তরে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজের নীচের স্তরের মানুষরাও শিক্ষিত হবে। শিক্ষাবিস্তারের এই তত্ত্বই ডাউনওয়ার্ড ফিলট্রেশন থিওরি বা চুঁইয়ে পড়া নীতি নামে পরিচিত।

চুঁইয়ে পড়া নীতির গুরুত্ব – চুঁইয়ে পড়া নীতির গুরুত্বগুলি হল নিম্নরূপ –

  • এই নীতির ফলে কম খরচে শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভবপর হবে।
  • এই তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভবপর হবে।

মূল্যায়ন – ডাউনওয়ার্ড ফিলট্রেশন থিওরি বাস্তবে কার্যকর করা সম্ভবপর হয়নি। বরং এই তত্ত্ব সমাজের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ব্যবধানকে আরও প্রকট করে তুলতে সাহায্য করেছিল।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

চুঁইয়ে পড়া নীতির পটভূমি কী?

1813 সালের সনদ আইনে ভারতীয় শিক্ষা খাতে অন্তত ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। টমাস ব্যাবিংটন মেকলে এই সমস্যার সমাধান হিসেবে পাশ্চাত্য শিক্ষা খাতে এই টাকা ব্যয় করার প্রস্তাব দেন এবং চুঁইয়ে পড়া নীতির ধারণা উপস্থাপন করেন।

চুঁইয়ে পড়া নীতির গুরুত্ব কী?

চুঁইয়ে পড়া নীতির গুরুত্বগুলি হল –
1. এটি কম খরচে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।
2. এই তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
3. এটি সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার ব্যবধান কমাতে সাহায্য করার কথা ছিল।

চুঁইয়ে পড়া নীতি কি সফল হয়েছিল?

না, চুঁইয়ে পড়া নীতি বাস্তবে সফল হয়নি। বরং এই তত্ত্ব সমাজের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ব্যবধানকে আরও প্রকট করে তুলেছিল। উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষরা শিক্ষার সুযোগ পেলেও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

ফিলট্রেশন থিওরির সমালোচনা কী?

ফিলট্রেশন থিওরির প্রধান সমালোচনা হল যে এটি সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার ব্যবধানকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও, এই তত্ত্বটি নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিল এবং শিক্ষার প্রসারকে সীমিত করেছিল।

মেকলের ‘মিনিটস্’ বা প্রতিবেদন কী?

মেকলের ‘মিনিটস্’ বা প্রতিবেদন হল 1835 সালে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে লিখিত একটি প্রতিবেদন, যেখানে তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। এই প্রতিবেদনে তিনি চুঁইয়ে পড়া নীতির ধারণা উপস্থাপন করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় সমাজের উন্নয়নের কথা বলেন।

ফিলট্রেশন থিওরি কি শুধু ভারতের জন্য প্রযোজ্য?

না, ফিলট্রেশন থিওরি শুধু ভারতের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি একটি সাধারণ শিক্ষা বিস্তারের তত্ত্ব, যা যেকোনো সমাজে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ভারতে এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে আলোচিত হয় কারণ এটি ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা হয়েছিল।

ফিলট্রেশন থিওরির বিকল্প কী?

ফিলট্রেশন থিওরির বিকল্প হিসেবে সরাসরি নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে করে সমাজের সব স্তরের মানুষ সমানভাবে শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং শিক্ষার ব্যবধান কমবে।

ফিলট্রেশন থিওরি কি বর্তমান সময়ে প্রাসঙ্গিক?

বর্তমান সময়ে ফিলট্রেশন থিওরি ততটা প্রাসঙ্গিক নয়, কারণ এখন শিক্ষার প্রসার ও সুযোগ বৃদ্ধির জন্য সরাসরি নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে এই তত্ত্বটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষা বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে বিবেচিত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “filtration theory বা ‘ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি’ বলতে কী বোঝো? চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “filtration theory বা ‘ক্রমনিম্ন পরিস্তুত নীতি’ বলতে কী বোঝো? চুঁইয়ে পড়া নীতি বলতে কি বোঝো ও তার গুরুত্ব লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুটি বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় একটি ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাস উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন গ্যাসটি লঘু HCl -এ সিক্ত কাচদণ্ডের সংস্পর্শে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। গ্যাস তিনটিকে শনাক্ত করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

অ্যামোনিয়ার প্রধান ভৌত ধর্মগুলি লেখো। অ্যামোনিয়ার ব্যবহার উল্লেখ করো।