এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। তিনি স্পষ্টতই উপলব্ধি করেছিলেন যে, একমাত্র শিক্ষাই পারে যুগ-যুগান্তর ধরে সঞ্চিত কুসংস্কারের মূলে আঘাত হেনে নারী সমাজকে আধুনিকতার আলোকে উদ্ভাসিত করতে।
নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রাথমিক উদ্যোগ –
স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল 1849 খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (বর্তমান বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা। এ ছাড়াও তাঁদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’। নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনমত গঠনের জন্য তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় নিয়মিত লেখনী ধারণ করেন।
বিদ্যালয় পরিদর্শকরূপে ভূমিকা –
সরকারের অধীনে বিশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকাকালীন (1857 – 58 খ্রিস্টাব্দ) তিনি বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় মোট 35 টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় সহস্রাধিক নারী এইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ পায়। নিজের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে মাতা ভগবতী দেবীর স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভগবতী বিদ্যালয়’।

ব্যক্তিগত উদ্যোগ –
বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলি সরকারি অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হলে তিনি শেষপর্যন্ত সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং বিদ্যালয়গুলির যাবতীয় ব্যয়ভার নিজে বহন করেন। এই উদ্দেশ্যে ‘নারীশিক্ষা ভাণ্ডার’ নামে একটি তহবিল গড়ে তোলেন। 1884 খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রমুখী বসু মেয়েদের মধ্যে প্রথম এম. এ. পাশ করলে তিনি তাঁকে একখণ্ড শেক্সপিয়ারের রচনাবলি উপহার দেন।
মন্তব্য –
স্বামী বিবেকানন্দ একদা বলেছিলেন – ‘রামকৃষ্ণদেবের পর আমি বিদ্যাসাগরকে অনুসরণ করি।’ বাস্তবিকই বিদ্যাসাগর দেশবাসীর কাছে এক অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে ছিলেন?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ এবং নারীশিক্ষার একজন অগ্রণী সমর্থক। তিনি একজন শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং লেখক হিসেবে খ্যাতিমান।
নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের প্রথম উদ্যোগ কী ছিল?
নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল ১৮৪৯ সালে ডেভিড হেয়ার ও জন ইলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সহযোগিতায় কলকাতায় ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (বর্তমানে বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করা।
বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসারে কীভাবে জনমত গঠন করেছিলেন?
তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখির মাধ্যমে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনমত গঠন করেছিলেন।
বিদ্যাসাগর সরকারি পদে থাকাকালীন কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?
সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে (1847-58) তিনি বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রায় সহস্রাধিক নারীকে শিক্ষার সুযোগ দেন।
বিদ্যাসাগর নিজের জন্মস্থানে কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
তিনি নিজের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে মাতা ভগবতী দেবীর স্মৃতিতে ‘ভগবতী বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদ্যাসাগর সরকারি পদ থেকে কেন ইস্তফা দেন?
তিনি প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলি সরকারি অনুমোদন না পেলে এবং নারীশিক্ষার প্রতি সরকারের উদাসীনতা দেখে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর তিনি স্কুলগুলির যাবতীয় ব্যয়ভার নিজে বহন করেন।
নারীশিক্ষা ভাণ্ডার কী?
বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসারে একটি তহবিল গড়ে তোলেন, যার নাম ছিল ‘নারীশিক্ষা ভাণ্ডার’। এই তহবিল থেকে তিনি স্কুলগুলির ব্যয়ভার বহন করতেন।
চন্দ্রমুখী বসু সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কী ছিল?
চন্দ্রমুখী বসু মেয়েদের মধ্যে প্রথম এম.এ. পাশ করলে বিদ্যাসাগর তাঁকে শেক্সপিয়ারের রচনাবলি উপহার দেন। এটি নারীশিক্ষার প্রতি তাঁর সমর্থন ও উৎসাহের প্রতীক।
স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যাসাগর সম্পর্কে কী বলেছিলেন?
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “রামকৃষ্ণদেবের পর আমি বিদ্যাসাগরকে অনুসরণ করি।” এটি বিদ্যাসাগরের মহান ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সংস্কারে তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নারীশিক্ষা প্রসারে অবদানকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার মাধ্যমে সমাজের কুসংস্কার দূর করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অবদান নারীশিক্ষার প্রসার ও নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার পথিকৃৎ এবং সমাজ সংস্কারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।