এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুটি কঠিন পদার্থ ‘A’ ও ‘B’ -এর ঘন জলীয় দ্রবণ উত্তপ্ত করলে একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাসীয় পদার্থ ‘C’ ও জল উৎপন্ন হয়। একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি ‘C’ গ্যাসের মধ্যে প্রবেশ করালে তা নিভে যায়। একটি ম্যাগনেসিয়াম ফিতা ‘C’ গ্যাসে প্রবেশ করালে তা জ্বলতে থাকে এবং একটি সাদা অবশেষ ‘D’ উৎপন্ন হয়। ‘D’ ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে। A, B, C ও D -কে শনাক্ত করো ও সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার সমীত সমীকরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দুটি কঠিন পদার্থ ‘A’ ও ‘B’ -এর ঘন জলীয় দ্রবণ উত্তপ্ত করলে একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাসীয় পদার্থ ‘C’ ও জল উৎপন্ন হয়। একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি ‘C’ গ্যাসের মধ্যে প্রবেশ করালে তা নিভে যায়। একটি ম্যাগনেসিয়াম ফিতা ‘C’ গ্যাসে প্রবেশ করালে তা জ্বলতে থাকে এবং একটি সাদা অবশেষ ‘D’ উৎপন্ন হয়। ‘D’ ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে। A, B, C ও D -কে শনাক্ত করো ও সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার সমীত সমীকরণ দাও।
‘D’ ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে। সুতরাং, D একটি ধাতব নাইট্রাইড। আবার ‘C’ -এর সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় ‘D’ উৎপন্ন হয়; সুতরাং, D ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড (Mg₃N₂)। অতএব, A ও B -এর মধ্যে একটি অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) ও অপরটি সোডিয়াম নাইট্রাইট (NaNO₂)।
‘C’ = নাইট্রোজেন (N₂)।
বিক্রিয়ার সমীকরণ –
NH₄Cl + NaNO₂ → NH₄NO₂ + NaCl
NH₄NO₂ → N₂↑ + 2H₂O
3Mg + N₂↑ → Mg₃N₂
Mg₃N₂ + 6H₂O → 3Mg(OH)₂ + 2NH₃↑
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) নাইট্রোজেন গ্যাসের (N₂) মধ্যে জ্বলে কেন, অথচ পাটকাঠি নিভে যায়?
এটি বিক্রিয়াকারী ধাতুর সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে। নাইট্রোজেন সাধারণত নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলেও কিছু অত্যন্ত সক্রিয় ধাতুর (যেমন – ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম) সাথে উচ্চ তাপমাত্রায় সরাসরি বিক্রিয়া করে ধাতব নাইট্রাইড গঠন করে। ম্যাগনেসিয়াম ফিতা জ্বালিয়ে নাইট্রোজেনের মধ্যে নিলে এটি প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে, যা এই বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। অন্যদিকে, পাটকাঠি (মূলত কার্বন) নাইট্রোজেনের সাথে কোনো বিক্রিয়া করে না, বরং অক্সিজেনের অভাবে নিভে যায়।
সমীকরণ – 3Mg + N₂ → Mg₃N₂
অ্যামোনিয়া গ্যাস (NH₃) শনাক্ত করার একটি সাধারণ পরীক্ষা কী?
অ্যামোনিয়া গ্যাস শনাক্ত করার একটি সহজ ও জনপ্রিয় পরীক্ষা হল লিটমাস পেপার পরীক্ষা। অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষারকীয় অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH₄OH) তৈরি করে। তাই যখন একটি লাল লিটমাস পেপার (অম্লীয় নির্দেশক) অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংস্পর্শে আনা হয়, তখন এটি নীল বর্ণে পরিবর্তিত হয়।
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) এবং সোডিয়াম নাইট্রাইট (NaNO₂) ছাড়া অন্য কোন রাসায়নিক যৌগ জোড়া থেকে নাইট্রোজেন গ্যাস তৈরি হতে পারে?
হ্যাঁ, অন্য উদাহরণও রয়েছে। যেমন – অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং সোডিয়াম নাইট্রাইটের বিক্রিয়ায়ও নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। মূল নীতি হল, একটি অ্যামোনিয়াম লবণ (NH₄⁺ আয়নযুক্ত) এবং একটি নাইট্রাইট লবণ (NO₂⁻ আয়নযুক্ত) এর মধ্যে বিক্রিয়া ঘটানো।
সমীকরণ – (NH₄)₂SO₄ + 2NaNO₂ → 2N₂ + Na₂SO₄ + 4H₂O
কেন ‘নাইট্রোজেন (N₂)’ গ্যাসের মধ্যে জ্বলন্ত পাটকাঠি নিভে যায়?
‘C’ গ্যাসটি নাইট্রোজেন (N₂)। নাইট্রোজেন একটি নিরুদক (non-supporter of combustion) গ্যাস। এটি জ্বলনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অনুপস্থিতি তৈরি করে। জ্বলন্ত পাটকাঠি যখন নাইট্রোজেন গ্যাসের মধ্যে প্রবেশ করে, তখন অক্সিজেনের অভাবে তার জ্বলন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি নিভে যায়।
ফুটন্ত জলের সাথে ‘নাইট্রাইড’ পদার্থটির বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস কেন তৈরি হয়?
ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড (Mg₃N₂) জলের সাথে বিক্রিয়া করে (হাইড্রোলাইসিস) ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুটি কঠিন পদার্থ ‘A’ ও ‘B’ -এর ঘন জলীয় দ্রবণ উত্তপ্ত করলে একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাসীয় পদার্থ ‘C’ ও জল উৎপন্ন হয়। একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি ‘C’ গ্যাসের মধ্যে প্রবেশ করালে তা নিভে যায়। একটি ম্যাগনেসিয়াম ফিতা ‘C’ গ্যাসে প্রবেশ করালে তা জ্বলতে থাকে এবং একটি সাদা অবশেষ ‘D’ উৎপন্ন হয়। ‘D’ ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে। A, B, C ও D -কে শনাক্ত করো ও সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার সমীত সমীকরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন