এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আয়নীয় এবং সমযোজী বন্ধনের মধ্যে তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আয়নীয় এবং সমযোজী বন্ধনের মধ্যে তুলনা করো।
আয়নীয় এবং সমযোজী বন্ধনের তুলনা –
আয়নীয় বন্ধন | সমযোজী বন্ধন |
তড়িৎ-ধনাত্মক মৌলের ইলেকট্রন বর্জন এবং তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌলের ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়। | দুটি পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষ থেকে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন এসে ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করলে সেই ইলেকট্রন জোড় পরমাণু দুটির নিউক্লিয়াস দ্বারা সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। |
ভিন্ন মৌলের পরমাণু দ্বারা আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়। | একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু দ্বারা সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। |
ভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব বেশি হলে আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়। | একই বা ভিন্ন মৌলের তড়িৎ-ঋণাত্মকতা সমান বা প্রায় সমান হলে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। |
দুই বিপরীত তড়িৎধর্মী আয়নের মধ্যে স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বলের দ্বারা আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়। | সৃষ্ট ইলেকট্রন জোড়, দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস দ্বারা আকৃষ্ট হয় ও সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। |
আয়নীয় বন্ধন অদৃঢ়, দিকহীন এবং সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে না। | সমযোজী বন্ধন দৃঢ়, দিকযুক্ত এবং সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে। |
স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে আয়নগুলি সঞ্চরণশীল হয় বলে আয়নীয় বন্ধন দুর্বল প্রকৃতির। | ইলেকট্রন জোড় সহজে পৃথক হয় না, এজন্য সমযোজী বন্ধন শক্তিশালী হয়। |
আয়নীয় বন্ধন ধ্রুবীয় প্রকৃতির। | পরমাণুর মধ্যে তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য শূন্য বা খুব কম হলে সমযোজী বন্ধন অধ্রুবীয় প্রকৃতির হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আয়নীয় বন্ধন এবং সমযোজী বন্ধনের মূল পার্থক্য কী?
আয়নীয় বন্ধন এবং সমযোজী বন্ধনের মূল পার্থক্যটি বন্ধন গঠনের প্রক্রিয়ায়।
1. আয়নীয় বন্ধনে এক পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে ইলেকট্রন স্থানান্তর হয়, ফলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সৃষ্টি হয় এবং তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
2. সমযোজী বন্ধনে পরমাণুগুলি ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগি করে।
কোন শর্তে আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়?
আয়নীয় বন্ধন গঠনের প্রধান শর্ত হলো দুটি মৌলের পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব বেশি (সাধারণত 1.7 বা তার বেশি) হওয়া। যেমন – একটি ধাতু (তড়িৎ-ধনাত্মক) ও একটি অধাতু (তড়িৎ-ঋণাত্মক) পরমাণুর মধ্যে।
সমযোজী বন্ধন কীভাবে গঠিত হয়?
দুটি পরমাণুর এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগির মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। এই ভাগাভাগিকৃত ইলেকট্রন জোড় উভয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস দ্বারা আকৃষ্ট হয়, যা তাদেরকে একত্রে ধরে রাখে।
আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত জলে দ্রবণীয় হয় কেন?
জলে একটি ধ্রুবীয় (polar) দ্রাবক। আয়নীয় যৌগের আয়নগুলি পানির মেরু অণু দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে (hydration)। এর ফলে আয়নগুলির মধ্যকার আকর্ষণ বল দুর্বল হয়ে যায় এবং তারা দ্রবীভূত হয়।
সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত বিদ্যুতের কুপরিবাহী হয় কেন?
সমযোজী যৌগগুলিতে আয়ন বা মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না (সাধারণ অবস্থায়)। বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় মুক্ত আধানবাহীর অনুপস্থিতির কারণে এগুলি বিদ্যুতের কুপরিবাহী। তবে, কিছু সমযোজী যৌগ (যেমন – গ্রাফাইট) বিদ্যুৎ পরিবাহিতা প্রদর্শন করে।
আয়নীয় বন্ধনকে ‘দুর্বল’ এবং সমযোজী বন্ধনকে ‘শক্তিশালী’ বলা হয়েছে, কিন্তু আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক উচ্চ হয় কেন?
আয়নীয় বন্ধনকে ‘দুর্বল’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে আয়নীয় বন্ধন তাপ বা দ্রাবকের প্রভাবে সহজেই ভাঙতে পারে। আসলে আয়নীয় বন্ধন দুর্বল নয়। কঠিন অবস্থায় আয়নগুলির মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল অত্যন্ত শক্তিশালী থাকে, এজন্য আয়নীয় যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি হয়।
সমযোজী বন্ধন ‘দিকযুক্ত’ হয় কীভাবে?
সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় যখন দুটি পরমাণুর পারমাণবিক কক্ষক (orbital) নির্দিষ্ট দিকে ওভারল্যাপ করে। এই ওভারল্যাপের দিকই বন্ধনের দিক নির্ধারণ করে এবং অণুর আকৃতি (geometry) নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
‘ধ্রুবীয়’ ও ‘অধ্রুবীয়’ সমযোজী বন্ধন বলতে কী বোঝায়?
এটি নির্ভর করে দুটি পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্যের উপর।
ধ্রুবীয় সমযোজী বন্ধন – যদি ভিন্ন মৌলের পরমাণুর মধ্যে তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য থাকে (কিন্তু 1.7 -এর কম), তবে ভাগাভাগিকৃত ইলেকট্রন জোড় বেশি তড়িৎ-ঋণাত্মক পরমাণুর দিকে সরে যায়। ফলে অণুর এক প্রান্ত আংশিক ধনাত্মক এবং অন্য প্রান্ত আংশিক ঋণাত্মক হয় (যেমন – H₂O)।
অধ্রুবীয় সমযোজী বন্ধন – যদি একই মৌল বা প্রায় সমান তড়িৎ-ঋণাত্মকতাযুক্ত মৌলের মধ্যে বন্ধন গঠিত হয়, তবে ইলেকট্রন জোড় সমানভাবে ভাগ হয়। ফলে কোনো মেরুতা তৈরি হয় না (যেমন – Cl₂, CH₄)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আয়নীয় এবং সমযোজী বন্ধনের মধ্যে তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন