এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।
গান্ধি পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারটি কর্মসূচিভুক্ত হওয়ায় ভারতীয় কৃষক সম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে শামিল হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের সর্ব ভারতীয় অংশগ্রহণ
আইন অমান্য আন্দোলনে উত্তর প্রদেশের কৃষক সমাজ –
আইন অমান্য আন্দোলন সূত্রে 1931 খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশে কৃষক বিদ্রোহ এক জঙ্গিরূপ ধারণ করে। কৃষকরা এখানে সরকারি খাজনা বন্ধের হুমকি দেয়। রায়বেরিলি, আগ্রা, বারাবাঁকি, লক্ষ্ণৌ, প্রতাপগড় সহ যুক্তপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষক অভ্যুত্থান ঘটে।
আইন অমান্য আন্দোলনে বিহারের কৃষক সমাজ –
আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাবে স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী বিহারে কৃষক স্বার্থরক্ষায় গড়ে তোলে ‘বিহার কিষান সভা’। বিহারে কৃষক আন্দোলন মূলত অহিংস পথে চললেও মুঙ্গের ও মুজাঃ ফরপুর থানা আক্রমণের মতো সহিংস ঘটনাও ঘটে। ইতিহাসের এই পর্বে ‘বকাস্ত’ আন্দোলন কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজিত করে।
আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার কৃষক সমাজ –
জমিদার, জোতদারদের বিরুদ্ধে মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ও মহিষাদলে কৃষকরা গণআন্দোলনে অংশ নেয়। এছাড়া রাজশাহী, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, নোয়াখালি, কুমিল্লা প্রভৃতি স্থানেও বাজার লুট ও খাজনা বন্ধের মতো হিংসাত্মক কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনে গুজরাটের কৃষক সমাজ –
গুজরাটের সুরাট, বারদৌলি প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালিয়ে যায়। পুলিশের অত্যাচার সত্ত্বেও বহু স্থানের কৃষকরা অন্তত 1933 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খাজনা দেওয়া বন্ধ রাখে।
আইন অমান্য আন্দোলনে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষক সমাজ –
ইতিহাসের এই পর্বে এন. জি. রঙ্গ অন্ধ্রপ্রদেশে গড়ে তোলেন ‘রায়ত সভা’। অধ্যাপক সুমিত সরকারের মতে, রঙ্গের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন সমগ্র দক্ষিণ ভারতে প্রসারিত হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনে পাঞ্জাবের কৃষক সমাজ –
আইন-অমান্য আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাঞ্জাবের অমৃতসর, হুশিয়ারপুর, জলন্ধর প্রভৃতি জেলায় সক্রিয় কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। কৃষকরা সেচ কর বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানায় এবং খাজনার হার পুনর্বিন্যাসের দাবি তোলে।
আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের মন্তব্য –
আইন অমান্য আন্দোলন সূত্রে প্রকৃতিগত ভাবে কৃষক আন্দোলন আরও তীব্র রূপ পায়। জাতীয় কংগ্রেস এই সমস্ত কৃষক আন্দোলনকে কখনও সমর্থন করেছে, আবার, কখনও করেনি। তৎসত্ত্বেও ইতিহাসের এই পর্বে ‘কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট দল’, ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি’, ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রভৃতির সমন্বয়ে এক সংগঠিত কৃষক আন্দোলন আছড়ে পড়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বুকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকরা কেন যোগ দিয়েছিল?
গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার দাবি যুক্ত হওয়ায় তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। খাজনা বৃদ্ধি, জমিদার-জোতদারদের অত্যাচার ও ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা কীভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল?
1931 সালে যুক্তপ্রদেশে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) কৃষকরা খাজনা বন্ধের ডাক দেয় এবং রায়বেরিলি, আগ্রা, লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহ সংঘটিত করে।
আইন অমান্য আন্দোলনে বিহারে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে কে ছিলেন?
স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী বিহারে ‘বিহার কিষান সভা’ গঠন করেন। এখানে অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি মুঙ্গের ও মুজাফফরপুরে কিছু সহিংস ঘটনাও ঘটে।
বাংলার কৃষকরা কীভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে?
মেদিনীপুরের কাঁথি ও মহিষাদলে জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকরা গণআন্দোলন গড়ে তোলে। রাজশাহী, ময়মনসিংহ, নোয়াখালিতে খাজনা বন্ধ ও বাজার লুটের মতো ঘটনা ঘটে।
আইন অমান্য আন্দোলনে গুজরাটে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
সুরাট ও বারদৌলিতে কৃষকরা দীর্ঘদিন খাজনা দেওয়া বন্ধ রাখে এবং সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালায়, যা 1933 সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনে অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন কে?
এন. জি. রঙ্গ ‘রায়ত সভা’ গঠন করে দক্ষিণ ভারতে কৃষক আন্দোলন প্রসারিত করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে পাঞ্জাবে কৃষকরা কী দাবি তুলেছিল?
পাঞ্জাবের অমৃতসর, জলন্ধর প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষকরা সেচ কর বৃদ্ধি ও খাজনার হার পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলন করে।
আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়?
এই আন্দোলন কৃষকদের সংগঠিত করে তোলে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি করে। যদিও কংগ্রেস কখনও সমর্থন দিয়েছে, কখনও দূরে থাকলেও কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলি কৃষকদের সংঘর্ষকে তীব্রতর করে।
আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব কী ছিল?
এটি ব্রিটিশ রাজস্ব নীতি ও জমিদারি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং পরবর্তীতে ভারতের কৃষি সংস্কার আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন