এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।
এদেশে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে আইন-অমান্য আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ দিক চিহ্ন হিসেবে প্রতিভাত হয়। গান্ধিজীর আইন অমান্যের আহ্বানে শ্রমিক শ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়।
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের সর্ব ভারতীয় প্রকাল্প
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনে মহারাষ্ট্র –
1930 খ্রিস্টাব্দের 4 ফেব্রুয়ারি স্বরাজের দাবিকে সামনে রেখে বোম্বাইয়ের প্রায় 20 হাজার শ্রমিক আন্দোলন শুরু করে, যার অধিকাংশই ছিল রেল শ্রমিক। 1930 খ্রিস্টাব্দের 6 এপ্রিল, অর্থাৎ আইন অমান্য আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনার দিনেই বোম্বাইয়ের G.I.P. রেলওয়ের ‘mens union’ -এর শ্রমিকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। শ্রমিকরা দলে দলে উত্তর বোম্বাই শহরতলির রেল লাইনের ওপর শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পুলিশ লাইন পরিস্কার করতে গুলি চালায় ও ব্যাপক দমননীতি অবলম্বন করে। ব্যাপক গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেস 6 জুলাই, 1930 খ্রিস্টাব্দে গান্ধি দিবস পালন করে। সেদিন প্রায় 50 হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেয় এবং 49টি কারখানার শ্রমিকরা কার্যস্থলে হাজির হলেও কর্মবিরতি পালন করে। মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে। বামপন্থা প্রভাবিত এই শ্রমিকরা শোলাপুরে সরকারি প্রশাসনকে নিশ্চিহ্ন করে সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলে।
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনে বাংলা –
ইতিহাসের এই পর্বে বালি চটকলের শ্রমিকরা ও হাওড়া রেলস্টেশনের কুলিরা ধর্মঘটে শামিল হয়।
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনে অন্যান্য রাজ্য –
করাচি বন্দরের শ্রমিকরা আইন অমান্য আন্দোলনের কালপর্বে ধর্মঘট করে বন্দর অচল করে দেয়। মাদ্রাজের শিল্প শ্রমিকরাও এইসময় ব্রিটিশ বিরোধী ধর্মঘটে শামিল হয়।
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা –
ইতিহাসের এই পর্বে কমিউনিস্টরা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে শ্রমিক আন্দোলনের রাশ ধরেন। 1931 খ্রিস্টাব্দে তারা Red Trade Union Congress প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রমিক আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসেবে ইতিহাসের এই পর্বে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে ‘ভারতীয় জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন’, ‘নিখিল ভারত রেলওয়ে মেনস্ ফেডারেশন’ প্রভৃতি শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শ্রমিক ধর্মঘটের ধারা চলতে থাকে।
আইন অমান্য পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের মন্তব্য –
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সংঘবদ্ধ সামাজিক শ্রেণিরূপে তাদের উত্থানকে সূচিত করে এবং তারা ক্রমশ জাতীয় আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণের গুরুত্ব কী?
আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এটি শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাদের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করে।
আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?
গান্ধিজীর আহ্বানে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে ধর্মঘট, বিক্ষোভ ও সমান্তরাল প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
মহারাষ্ট্রে আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা কী ছিল?
মহারাষ্ট্রে আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা ছিল –
1. বোম্বাই – 1930 সালের 6 এপ্রিল G.I.P. রেলওয়ের শ্রমিকরা সত্যাগ্রহ শুরু করে এবং রেল লাইনে শুয়ে বিক্ষোভ করে। পুলিশ গুলি চালালে ব্যাপক দমননীতি শুরু হয়।
2. শোলাপুর – বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলে।
বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন কীভাবে সংগঠিত হয়েছিল?
বালি চটকলের শ্রমিকরা এবং হাওড়া রেলস্টেশনের কুলিরা ধর্মঘটে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
অন্যান্য রাজ্যে শ্রমিক আন্দোলন কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল?
1. করাচি – বন্দর শ্রমিকরা ধর্মঘট করে বন্দর অচল করে দেয়।
2. মাদ্রাজ – শিল্প শ্রমিকরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়।
কমিউনিস্টরা আইন অমান্য আন্দোলনে কী ভূমিকা পালন করেছিল?
1. 1931 সালে Red Trade Union Congress গঠন করে শ্রমিক সংগঠনকে শক্তিশালী করে।
2. ভারতীয় জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ও নিখিল ভারত রেলওয়ে মেনস্ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে শ্রমিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
এই আন্দোলন শ্রমিক শ্রেণিকে একটি সংঘবদ্ধ সামাজিক শক্তিতে পরিণত করে এবং তাদেরকে জাতীয় আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন