এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুটি জলীয় দ্রবণের একটি ফেরিক ক্লোরাইড ও অপরটি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড। অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সাহায্যে কীভাবে ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণটি শনাক্ত করবে? সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ উত্তর দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দুটি জলীয় দ্রবণের একটি ফেরিক ক্লোরাইড ও অপরটি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড। অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সাহায্যে কীভাবে ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণটি শনাক্ত করবে? সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ উত্তর দাও।
প্রদত্ত দ্রবণ দুটির প্রতিটিতে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ তথা অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH₄OH) যোগ করলে একটির ক্ষেত্রে বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপ পড়ে এবং অপরটির ক্ষেত্রে জিলেটিনের মতো সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ পড়ে। বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপটি হল ফেরিক হাইড্রক্সাইড [Fe(OH)₃] ও জিলেটিনের মতো সাদা আঠালো অধঃক্ষেপটি হল অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড [Al(OH)₃]। যে জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপ পড়ে, সেটি হল ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণ।
FeCl₃ + 3NH₄OH → Fe(OH)₃↓ + 3NH₄Cl
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH₄OH) দ্রবণ ব্যবহার করে Fe³⁺ আয়ন এবং Al³⁺ আয়ন শনাক্ত করার পদ্ধতিটি কী?
Fe³⁺ (ফেরিক) এবং Al³⁺ (অ্যালুমিনিয়াম) আয়ন শনাক্ত করতে তাদের দ্রবণে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH₄OH) যোগ করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই হাইড্রক্সাইডের অধঃক্ষেপ পড়ে, কিন্তু তাদের রং ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এদের আলাদা করা যায়।
1. Fe³⁺ আয়নের ক্ষেত্রে – বাদামি বর্ণের (Gelatinous) অধঃক্ষেপ পড়ে। এটি হল ফেরিক হাইড্রক্সাইড [Fe(OH)₃]।
2. Al³⁺ আয়নের ক্ষেত্রে – জিলেটিনের মতো সাদা ও আঠালো অধঃক্ষেপ পড়ে। এটি হল অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড [Al(OH)₃]।
রাসায়নিক সমীকরণ –FeCl₃(aq) + 3NH₄OH(aq) → Fe(OH)₃(s)↓ (বাদামি) + 3NH₄Cl(aq)
AlCl₃(aq) + 3NH₄OH(aq) → Al(OH)₃(s)↓ (সাদা আঠালো) + 3NH₄Cl(aq)
Fe(OH)₃ এর অধঃক্ষেপ বাদামি রংয়ের হয় কেন?
Fe(OH)₃ এর স্ফটিক কাঠামো এবং এর মধ্যে উপস্থিত ফেরিক আয়ন (Fe³⁺) -এর কারণে এটি আলোকে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শোষণ করে। ফলে প্রতিফলিত আলোর রং আমাদের চোখে বাদামি দেখায়। এটি লৌহ যৌগগুলোর একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।
অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড [Al(OH)₃] অধঃক্ষেপটি জিলেটিনের মতো বা আঠালো দেখায় কেন?
Al(OH)₃ একটি অ্যামোর্ফাস (Amorphous) যৌগ, অর্থাৎ এর সুনির্দিষ্ট স্ফটিকাকার গঠন নেই। এটি জলে অদ্রবণীয়, এবং জেল-সদৃশ ভর হিসেবে অধঃক্ষিপ্ত হয়। এই জেলাটিনাস বা আঠালো প্রকৃতির কারণেই এটি সাদা এবং জিলেটিনের মতো দেখায়।
Al(OH)₃ অধঃক্ষেপের বৈশিষ্ট্য কী?
Al(OH)₃ অধঃক্ষেপটি জিলেটিনের মতো সাদা ও আঠালো হয়।
কোন ধাতুর ক্লোরাইডের দ্রবণে অ্যামোনিয়া যোগ করলে বাদামি অধঃক্ষেপ পড়ে?
আয়রন (Fe³⁺) বা ফেরিক আয়নযুক্ত লবণ (যেমন – FeCl₃) এর দ্রবণে অ্যামোনিয়া যোগ করলে বাদামি বর্ণের Fe(OH)₃ অধঃক্ষেপ পড়ে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুটি জলীয় দ্রবণের একটি ফেরিক ক্লোরাইড ও অপরটি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড। অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সাহায্যে কীভাবে ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণটি শনাক্ত করবে? সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ উত্তর দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন