এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্সিনের ‘আলোক অবলুপ্তি’ বলতে কী বোঝো? কলম সৃষ্টিতে অক্সিনের ভূমিকা কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অক্সিনের ‘আলোক অবলুপ্তি’ বলতে কী বোঝো?
উদ্ভিদের যে অংশগুলিতে অধিক আলো এসে পড়ে সেই অংশগুলিতে অক্সিনের ঘনত্ব কম হয় কারণ, অক্সিন আলোর বিপরীত দিকে অধিক সঞ্চিত হয়, একেই অক্সিনের ‘আলোক অবলুপ্তি’ বলে।
কলম সৃষ্টিতে অক্সিনের ভূমিকা কী?
কলম সৃষ্টিতে অক্সিনের ভূমিকা – কিছু উদ্ভিদ যেমন – গোলাপ, জবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে উদ্ভিদের শাখা কেটে নিয়ে কিছু সময় ধরে অক্সিনের দ্রবণে রেখে দেওয়া হয়, সেই কাটা অংশ থেকে কিছু অস্থানিক মূল নির্গত হয় এবং নতুন চারাগাছে আবির্ভাব হয়। আবার জোড়কলমের ক্ষেত্রে স্টক ও সিয়নে জোড়া লাগানো অংশটিতে অক্সিন প্রয়োগ করে ক্যামবিয়ামে সক্রিয়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অক্সিন কী?
অক্সিন হল এক ধরনের উদ্ভিদ হরমোন যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি, কোষ প্রসারণ ও বিভিন্ন বিকাশমূলক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগে তৈরি হয়।
অক্সিনের আলোক অবলুপ্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এটি উদ্ভিদের আলোকপ্রবণতা (Phototropism) নিয়ন্ত্রণ করে। আলোর দিকে কান্ডের বেঁকে যাওয়া এবং আলোর বিপরীতে মূলের বৃদ্ধি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। এটি উদ্ভিদকে সূর্যালোকের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
অক্সিনের প্রয়োগে কলম তৈরি ছাড়া আর কী কী কাজে লাগে?
1. ফলহীন ফল ধারণে (ফলের সংখ্যা বাড়াতে)।
2. আগাছানাশক হিসাবে (সিনথেটিক অক্সিন যেমন ২,৪-ডি)।
3. অঙ্কুরোদগমে বাধা দূর করতে।
4. কৃত্রিমভাবে ফল তৈরি করতে (পার্থেনোকার্পি)।
অক্সিন আলোক অবলুপ্তির মাধ্যমে কীভাবে আলোকপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করে?
উদ্ভিদের যে পাশে আলো পড়ে, সেই পাশে অক্সিনের ঘনত্ব কমে যায় এবং ছায়াযুক্ত পাশে অক্সিন জমা হয়। কোষ প্রসারণের ফলে ছায়াযুক্ত পাশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে কান্ড আলোর দিকে বেঁকে যায়।
জোড় কলমে অক্সিনের স্পষ্ট ভূমিকা কী?
জোড় কলমে স্টক ও সায়নের সংযোগস্থলে অক্সিন প্রয়োগ করলে –
1. ক্যাম্বিয়াম কোষের বিভাজন বাড়ে।
2. কলাস টিস্যু গঠন ত্বরান্বিত হয়।
3. দুটি অংশের মাঝে দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে।
অক্সিনের অত্যধিক প্রয়োগের ক্ষতিকর প্রভাব কী?
অতিরিক্ত অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে, এমনকি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এটি কখনও কখনও অ্যাবসিসিক অ্যাসিডের মতো প্রতিষেধক হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে।
অক্সিনের আলোক অবলুপ্তি প্রক্রিয়াটি কোথায় ঘটে?
এটি প্রধানত ঘটে কান্ডের অগ্রভাগ বা কুঁড়িতে, যেখানে অক্সিন সংশ্লেষিত হয় এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীল প্রোটিনের মাধ্যমে এর বণ্টন নিয়ন্ত্রিত হয়।
অক্সিনের “আলোক অবলুপ্তি” ও “মাধ্যাকর্ষণ অবলুপ্তি” এর মধ্যে পার্থক্য কী?
অক্সিনের “আলোক অবলুপ্তি” ও “মাধ্যাকর্ষণ অবলুপ্তি” এর মধ্যে পার্থক্য –
1. আলোক অবলুপ্তি – আলোর প্রভাবে অক্সিনের পার্শ্বীয় স্থানান্তর।
2. মাধ্যাকর্ষণ অবলুপ্তি – মাধ্যাকর্ষণ শনাক্ত করে অক্সিনের নিচের দিকে জমা হওয়া (মূলের ধনাত্মক ও কান্ডের ঋণাত্মক গ্রাভিট্রপিজমে ভূমিকা রাখে)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অক্সিনের ‘আলোক অবলুপ্তি’ বলতে কী বোঝো? কলম সৃষ্টিতে অক্সিনের ভূমিকা কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন