আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা বাংলার কুটিরশিল্প প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় বাংলার কুটিরশিল্প প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা যায়। এই রচনাটি প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায় এবং একবার মুখস্ত করলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।
ভূমিকা –
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঙালির গৌরব। বাউলের গানে, মেয়েদের ব্রতকথায়, ভাদু-টুসুর পরবে, আরও অজস্রভাবে এই যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ঢাকাই মসলিন, বাঁকুড়ার টেরাকোটা, মেদিনীপুরের মাদুর কিংবা কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল। সংস্কৃতি যাদি হয় জাতির প্রাণময়তার উৎস, তাহলে সেই শিকড়ের সন্ধানে বাংলার কুটিরশিল্পের কাছে আমাদের যেতেই হবে।
কুটিরশিল্প কাকে বলে?
একজন কারিগর নিজে, পরিবারের লোকজন বা মুষ্টিমেয় দু-একজনকে নিয়ে যদি কোনো শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করেন তাকে কুটিরশিল্প বলা হয়। কুটিরশিল্প সম্পূর্ণ গৃহকেন্দ্রিক। গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা যেমন ছিল কৃষিভিত্তিক, ঠিক তেমনই ছিল কুটিরশিল্প-নির্ভরও। এই শিল্পকে কেন্দ্র করেই সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছিল, যেমন — তাঁতি, কুমোর, কামার, শাঁখারি ইত্যাদি। অনেক সময়েই দেখা যেত এক-একটি এলাকা একটি বিশেষ দ্রব্য উৎপাদনে খ্যাতি অর্জন করেছে, ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবারই যুক্ত থেকেছে সেই বিশেষ শিল্পের সঙ্গে। শিল্পীদের দক্ষতা উৎপন্ন দ্রব্যকে পৌঁছে দিয়েছে উৎকর্ষের শিখরে। তৈরি হয়েছে কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য।
বাংলার কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য –
বাংলার কুটিরশিল্পের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা শিল্পের কথা। বাঁকুড়ার মাটির ঘোড়া পৃথিবী জুড়ে প্রসিদ্ধি পেয়েছে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষ্ণনগরে মৃৎশিল্প প্রসার লাভ করেছিল। শুধু মাটির পুতুল নয়, পণ্ডিতসভা, চড়ক উৎসব ইত্যাদি সামাজিক বিষয়কে মৃৎশিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর ইত্যাদি অঞ্চলে ডোকরা শিল্প গড়ে উঠেছে। ধাতু দিয়ে মূর্তি, অলংকার ইত্যাদি তৈরি হলে তাকে বলে ডোকরা শিল্প। দেব-দেবীর মূর্তি থেকে অলংকার-ডোকরায় সবই তৈরি হয়। শান্তিনিকেতনে গড়ে ওঠে চর্ম শিল্পের নিজস্ব ঘরানা, মেদিনীপুরের মাদুর শিল্পের খ্যাতিও জগৎবিখ্যাত। চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ আছে ঢাকাই মসলিনের। রোম, গ্রিস, মিশর, ইংল্যান্ডে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। মোগল আমলে এই মসলিন রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায়। মসলিনের শ্রেষ্ঠ রূপ ‘মলমল খাস’, যেখানে একটা গোটা শাড়ি আংটির ভিতর দিয়ে চলাচল করতে পারে। বাঙালি কারিগরের প্রতিভার বিস্ময়কর সৃষ্টি ছিল এই মসলিন। এ ছাড়াও ফুলিয়া এবং শান্তিপুরের তাঁত, বিষ্ণুপুরের বালুচরি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বাংলার কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য বহুদূর বিস্তৃতি লাভ করেছে।
কুটিরশিল্পের বর্তমান অবস্থা –
বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বাংলার কুটিরশিল্পের স্বর্ণযুগ এখন অস্তমিত। ইংরেজের চক্রান্তে বাংলার তাঁত শিল্পের যে সর্বনাশ ঘটেছিল, কৃত্রিম তন্তু থেকে তৈরি শাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে সেই সংকট থেকে তাঁত বা মসলিন শিল্প বেরোনোর পথ পায়নি। একদিকে বাজার ছোটো হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে শিক্ষিত নতুন প্রজন্মের কারিগরি পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সংকটের মূল কারণ। এর সঙ্গে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি তো আছেই। বিদেশের বাজারে চাহিদা থাকলেও বাংলার কুটিরশিল্প তাই আজ সংকটে।
উপসংহার –
সরকারি স্তরে কুটিরশিল্প পুনরুজ্জীবনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, কাঁচামালে ভরতুকির ব্যবস্থা করা, শিল্পীর উৎপাদিত পণ্য সরকারি সাহায্যে বাজারজাত করা, নতুন প্রজন্মের কাছে তাকে আকর্ষণীয় করে তোলা-এসবের মধ্য দিয়ে কুটিরশিল্পের হৃত গরিমা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলার সংস্কৃতির এই গৌরবোজ্জ্বল দিকটিকে উপেক্ষার অর্থ নিজের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
বাংলার কুটিরশিল্প আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই শিল্পগুলি কেবল আমাদের জীবনে সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য বয়ে আনে না, বরং অসংখ্য মানুষের জীবিকার মাধ্যমও সরবরাহ করে।
মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষাগুলিতে এই বিষয়টির উপর প্রশ্ন প্রায়শই দেখা যায়। তাই, এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করা আপনাদের জন্য ক্লাস 6 থেকে 12 পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়ক হতে পারে।