এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কীরূপ অবদান ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কীরূপ অবদান ছিল?
বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ এক অবিস্মরণীয় নাম।
মুদ্রণ শিল্পে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান –
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাফটোন ব্লক তৈরি –
আধুনিক হাফটোন ব্লকের সৌজন্যে বাংলা গ্রন্থচিত্রণে যুগান্তর আনেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন উপেন্দ্রকিশোর দেশীয় গবেষণায় নানা প্রকার ডায়াফর্ম সৃষ্টি, রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র নির্মাণ, ডুয়োটাইপ পদ্ধতি উদ্ভাবনে কৃতিত্ব দেখান। বিলেত থেকে যন্ত্রপাতি ও বইপত্র আনিয়ে হাফটোন ব্লক তৈরির বিদ্যা নিজেই আয়ত্ত করেন।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ –
ছাপাখানার ইতিহাসে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সব থেকে বড়ো অবদান ছিল 1895 খ্রিস্টাব্দে ‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ প্রতিষ্ঠা। ছাপাখানা বিষয়ে তাঁর লেখা ইংল্যান্ডের ‘পেনরোজ অ্যানুয়াল’ নামক বিখ্যাত জার্নালে নিয়মিত ছাপা হত।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্টুডিয়ো –
উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানার সঙ্গে ছবি আঁকার একটি স্টুডিও খোলেন। এখানে তিনি আধুনিক ফটোগ্রাফি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। শুধু তাই নয়, আধুনিক ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠান।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রকাশনা –
‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ থেকে প্রকাশিত প্রথম বইটি ছিল টুনটুনির বই (1910) খ্রিস্টাব্দ। হাফটোন ব্লকের ব্যবহারে তাঁর নৈপুণ্য পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও তাঁর লেখা ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রভৃতি শিশু পাঠ্য গ্রন্থে তিনি হাফটোনের যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। তাঁর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত কিশোর পাঠ্য ‘সন্দেশ’ পত্রিকার পাতায় চিত্রকর এবং মুদ্রাকর উপেন্দ্রকিশোরের নৈপুণ্যের স্বাক্ষর মেলে।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মন্তব্য –
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উপেন্দ্রকিশোর ছাপাখানার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স’ মুদ্রণ শিল্পের নৈপুণ্যে শুধু ভারতে নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছাপাখানার মর্যাদা লাভ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কে ছিলেন?
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ ও মুদ্রণ শিল্পের পথিকৃৎ। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্য ও মুদ্রণ প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটান।
বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের উন্নয়নে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রধান অবদান কী ছিল?
তিনি আধুনিক হাফটোন ব্লক প্রযুক্তি বাংলায় প্রবর্তন করেন, “ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স” প্রতিষ্ঠা করেন এবং উচ্চমানের চিত্রসহ বই ও পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে মুদ্রণ শিল্পকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যান।
হাফটোন ব্লক কী? উপেন্দ্রকিশোর কীভাবে এটি বাংলায় নিয়ে এলেন?
হাফটোন ব্লক হলো ফটোগ্রাফিক ইমেজকে মুদ্রণযোগ্য করে তোলার একটি প্রযুক্তি। উপেন্দ্রকিশোর বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও জ্ঞান সংগ্রহ করে নিজেই এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করেন এবং বাংলা বইয়ে প্রয়োগ করেন।
উপেন্দ্রকিশোরের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলি কী কী?
উপেন্দ্রকিশোরের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলি হল –
1. রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র,
2. ডুয়োটাইপ পদ্ধতি,
3. হাফটোন ব্লকের উন্নত ব্যবহার।
‘ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স’ কী এবং এটি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?
এটি উপেন্দ্রকিশোর প্রতিষ্ঠিত একটি অত্যাধুনিক মুদ্রণ সংস্থা, যা 1895 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলার প্রথম শ্রেণীর ছাপাখানা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
উপেন্দ্রকিশোরের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই ও পত্রিকা কোনগুলি?
1. টুনটুনির বই (1910),
2. ছেলেদের মহাভারত ও ছেলেদের রামায়ণ,
3. সন্দেশ পত্রিকা (পরবর্তীতে তাঁর পুত্র সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন)।
উপেন্দ্রকিশোরের স্টুডিওর ভূমিকা কী ছিল?
তিনি মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ফটোগ্রাফি ও চিত্রাঙ্কনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো।
সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠানোর পিছনে কারণ কী?
মুদ্রণ ও ফটোগ্রাফিতে আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য উপেন্দ্রকিশোর তাঁর পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠান, যা পরবর্তীতে বাংলার মুদ্রণ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে।
বাংলার মুদ্রণ শিল্পে উপেন্দ্রকিশোরের প্রভাব কতটা স্থায়ী হয়েছিল?
তাঁর প্রতিষ্ঠান ও উদ্ভাবনগুলি বাংলায় উচ্চমানের মুদ্রণ সংস্কৃতি গড়ে তোলে এবং “সন্দেশ”-এর মতো প্রকাশনাগুলি আজও স্মরণীয়।
উপেন্দ্রকিশোরকে কেন মুদ্রণ শিল্পের পথিকৃৎ বলা হয়?
কারণ তিনিই প্রথম বাংলায় হাফটোন ব্লক ও আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তি প্রবর্তন করে বই ও পত্রিকায় চিত্রসংবলিত প্রকাশনার নতুন দিগন্ত খুলে দেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কীরূপ অবদান ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন