এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?
বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজের বীরত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করে 1932 খ্রিস্টাব্দের 24 সেপ্টেম্বর শহিদের মৃত্যু বরণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। কুমিল্লার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিফেন্সকে হত্যা করেন শান্তি ও সুনীতি নামের দুই স্কুল ছাত্রী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে অত্যাচারী গর্ভনর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার প্রচেষ্টা চালান বীনা দাস। 1934 খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং এর লেবং-এ বাংলার গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন উজ্জ্বলা নামে অপর এক তরুণী।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।
ভূমিকা –
বিংশ শতকে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে বিভিন্ন নারীও যুক্ত হয়ে পড়েন। দীপালী সংঘের বিভিন্ন সদস্যা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, বীণা দাস বঙ্গনারী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
দীপালী সংঘ –
বাংলার নারীদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী লীলা নাগ (রায়) 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায়’দিপালী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শঙ্খের সদস্যাদের লাঠি খেলা, শরীর চর্চা, অস্ত্র চালনা প্রভৃতি শিক্ষা দেয়া হতো।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন –
1930 খ্রিস্টাব্দে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ঘটনায় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংসের কাজে অংশ নেন এবং জালালাবাদের পাহাড়ের যুদ্ধে প্রবল বিক্রমে লড়াই করে পালাতে সক্ষম হন।
ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ –
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ বিপ্লবী 1932 খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
কল্পনা দত্তের বিভিন্ন কার্যকলাপ –
সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র সদস্য বিপ্লবী কল্পনা দত্ত জেলের অন্যান্য বিপ্লবীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। পরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর সঙ্গে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমের দায়িত্ব নেন। তবে আক্রমণের আগেই তিনি ধরা পড়ে যান।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?
বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধ, গুপ্তহত্যা, অস্ত্র সরবরাহ, তথ্য আদান-প্রদান এবং সংগঠন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস প্রমুখ নারী বিপ্লবী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অবদান কী ছিল?
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (1930 সাল) এবং ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে (1932 সালে) নেতৃত্ব দেন। তিনি পাহাড়তলীর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালানোর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন।
শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী কে ছিলেন?
শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী ছিলেন দুই স্কুলছাত্রী যারা 1931 সালে কুমিল্লার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করেন। তাদের এই সাহসিকতা বাংলার নারী বিপ্লবী আন্দোলনে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।
দীপালী সংঘ কী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
দীপালী সংঘ ছিল নারীদের বিপ্লবী সংগঠন, যা 1923 সালে বিপ্লবী লীলা নাগ (রায়) ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংঘে নারীদের লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
কল্পনা দত্তের ভূমিকা কী ছিল?
কল্পনা দত্ত সূর্য সেনের ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র সদস্যা ছিলেন। তিনি বিপ্লবীদের জেল থেকে পালাতে সাহায্য করার জন্য বিস্ফোরক সরবরাহ করেন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সাথে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন ও দীর্ঘ কারাবরণ করেন।
বীনা দাস কে ছিলেন?
বীনা দাস ছিলেন একজন বিপ্লবী নারী যিনি 1932 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
উজ্জ্বলা মজুমদার কে ছিলেন?
উজ্জ্বলা মজুমদার 1934 সালে দার্জিলিং -এর লেবং -এ বাংলার গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
বাংলার নারী বিপ্লবীদের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
বাংলার নারী বিপ্লবীদের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল—
1. ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো,
2. অত্যাচারী ব্রিটিশ অফিসারদের শাস্তি দেওয়া,
3. নারীসমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা,
4. ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকার করা।
নারী বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
নারী বিপ্লবীদের এই সংগ্রাম প্রমাণ করে যে নারীরা শুধু গৃহকোণেই আবদ্ধ ছিলেন না, বরং তারা দেশের জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের এই সাহসিকতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীশক্তির অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন