এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ু থেকে নাইট্রোজেন প্রস্তুতি সম্পর্কে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ু থেকে নাইট্রোজেন প্রস্তুতি সম্পর্কে লেখো।
বায়ুর আয়তনের 78.06% হল নাইট্রোজেন। এ ছাড়া বায়ুতে 21% অক্সিজেন এবং 0.03% কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, সামান্য পরিমাণ নিষ্ক্রিয় গ্যাস এবং শিল্পজাত দ্রব্য SO₂, NH₃ প্রভৃতি মিশ্রিত থাকে।
- প্রথমে বায়ুকে গাঢ় KOH দ্রবণের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। ফলে বায়ুমধ্যস্থ CO₂ ও SO₂, KOH দ্রবণ দ্বারা শোষিত হয় এবং বায়ু থেকে দূরীভূত হয়।
- প্রথম পর্যায়ের প্রাপ্ত বায়ুকে এরপর গাঢ় H₂SO₄ -এর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। ফলে NH₃ ও জলীয় বাষ্প H₂SO₄ দ্বারা শোষিত হয় এবং বায়ু থেকে মুক্ত হয়।
- দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাপ্ত বায়ুকে এরপর উত্তপ্ত কপার কুচির উপর দিয়ে চালনা করা হয়। ফলে বায়ুর অক্সিজেন উত্তপ্ত কপার কুচির সঙ্গে বিক্রিয়া করে কিউপ্রিক অক্সাইডে পরিণত হয় এবং বায়ু থেকে মুক্ত হয়।
এই প্রক্রিয়া দ্বারা বায়ু থেকে মোটামুটি বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন গ্যাস পাওয়া যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য কী?
বায়ু একটি সহজলভ্য ও সস্তা উৎস হওয়ায়, এখান থেকে শিল্প ও গবেষণাগারে ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত করাই এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য। নাইট্রোজেন একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসাবে প্যাকেজিং, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, রাসায়নিক সংশ্লেষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন প্রস্তুতির প্রক্রিয়াটির প্রথম ধাপে বায়ুকে গাঢ় KOH দ্রবণের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয় কেন?
গাঢ় KOH (পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড) একটি ক্ষারকীয় দ্রবণ। এটি বায়ুতে থাকা অম্লীয় গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) কে শোষণ করে নেয় এবং বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রবণে পরিণত করে। এভাবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত গ্যাসগুলি বায়ু থেকে দূর হয়।
1. CO₂ + 2KOH → K₂CO₃ + H₂O
2. SO₂ + 2KOH → K₂SO₃ + H₂O
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন পৃথক করার আধুনিক পদ্ধতি কী?
হ্যাঁ, শিল্পক্ষেত্রে বায়ু থেকে নাইট্রোজেন (এবং অক্সিজেন) পৃথক করার জন্য আংশিক পাতন (Fractional Distillation) পদ্ধতিই সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে বায়ুকে প্রথমে তরলীকৃত করা হয় এবং তারপর বিভিন্ন গ্যাসের স্ফুটনাঙ্কের পার্থক্য ব্যবহার করে আলাদা করা হয়। এটি একটি বৃহৎ পরিসরের ও অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি।
নাইট্রোজেন গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ধর্ম এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে কাজে লাগে?
নাইট্রোজেন গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হলো এর রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তা। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে অন্যান্য গ্যাসগুলো (যেমন – CO₂, SO₂, NH₃, H₂O, O₂) বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে দূর হয়, কিন্তু নাইট্রোজেন সেই সকল বিক্রিয়ায় অপরিবর্তিত থেকে যায়। এই নিষ্ক্রিয়তাই নাইট্রোজেনকে পৃথক করে আনার মূল ভিত্তি।
বায়ু থেকে নাইট্রোজেন পৃথক করার এই পদ্ধতির নাম কী?
এটি একটি রাসায়নিক পদ্ধতি যেখানে বিভিন্ন অমেধ্যকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দূর করা হয়।
বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড দূর করতে কোন যৌগ ব্যবহার করা হয়?
বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) দূর করতে গাঢ় পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড (KOH) দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
বায়ুতে থাকা অ্যামোনিয়া (NH₃) ও জলীয় বাষ্প কীভাবে দূর করা হয়?
বায়ুকে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) এর মধ্য দিয়ে চালনা করলে অ্যামোনিয়া ও জলীয় বাষ্প শোষিত হয়ে দূর হয়ে যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বায়ু থেকে নাইট্রোজেন প্রস্তুতি সম্পর্কে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন