ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে?

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে? এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে? – এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় বজ্র ব্যাবস্থাপনার প্রশ্ন। আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।

ভাগীরথী-হুগলি নদী পশ্চিমবঙ্গের জীবনরেখা। কৃষি, জল সরবরাহ, পরিবহন, এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য এই নদীর উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই নদী দীর্ঘদিন ধরে দূষণের শিকার।

ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে

ভাগীরথী-হুগলি কীভাবে দূষিত হচ্ছে?

প্রায় 2500 কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গানদী, ভারতের জীবনরেখা, আজ মুখোমুখি এক ভয়াবহ বিপদের। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, শহরের নোংরা, কৃষি ক্ষেত্র থেকে ধোয়া যাওয়া কীটনাশক – এই সবকিছু মিশে দূষিত করে ফেলেছে নদীকে। বিশেষ করে মোহানা থেকে 600 কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ভাগীরথী-হুগলি নদী অত্যন্ত দূষিত অবস্থায় রয়েছে।

ভাগীরথী-হুগলির দূষণের জন্য দায়ী অনেক কারণ রয়েছে। কলকারখানাগুলো তাদের কঠিন বর্জ্য, বিষাক্ত তরল নোংরা সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক, জৈব বর্জ্য এবং ভূমিক্ষয়ের মাটি জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে গঙ্গায় পৌঁছায়। এছাড়াও, মানুষের নানানবিধ কর্মকাণ্ড নদী দূষণের জন্য দায়ী। মানুষজন নদীতে শুকনো ফুল, প্লাস্টিক ফেলে, এমনকী মলমূত্র ত্যাগ করে এবং মৃত পশু ও মূর্তি বিসর্জন দেয়। নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলোর সব নোংরা জলই সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। আর নদীতে যন্ত্রচালিত জলযানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পোড়া মোবিল, ডিজেল, পেট্রোলের মতো জ্বালানিও নদীর জলে মিশে যাচ্ছে।

এই দূষণের ফলে নদীর জলের গুণমান ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ফলে, জলজ প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। এমনকী মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দূষণের কারণে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ আছে। কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কলকারখানাগুলোর বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিকের ব্যবহার হ্রাস করা জরুরি। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে নদী দূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া যায়। নদীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো এবং নদীর তীরে জমে থাকা নোংরা পরিষ্কার করা দরকার।

আসুন, আমরা সকলে মিলে গঙ্গাকে রক্ষা করি। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য সচেতন হতে হবে। নদীতে কোনো নোংরা ফেলা যাবে না। পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গঙ্গার প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করলেই এই পবিত্র নদীকে বাঁচানো যাবে।

ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে?

ভাগীরথী-হুগলি নদীতে দূষণ বাড়লে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা যাবে। যেমন –

  • নদীর জলকে শোধন করে পানযোগ্য করতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
  • নদীর বিষাক্ত জল কৃষিতে জলসেচে ব্যবহার করলে জমি এবং কৃষি ফসলের দূষণ মাত্রা বেড়ে যায়।
  • নদীর জল যত দূষিত হবে মাছের দূষণও তত বাড়বে। নদীতে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীরাও দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
  • বর্জ্য বা আবর্জনা যতই নদীর মধ্যে সঞ্চিত হবে ততই নদীর গভীরতা কমবে। এতে বন্যার প্রকোপ বাড়বে।
  • বর্জ্য দূষণে নদীর ভাঙন বাড়বে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি কৃষির অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।
  • নদীতে ভাসমান নানা বর্জ্য নদীর জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থাকেও নষ্ট করে দেবে।

আরও পড়ুন – ভাগীরথী-হুগলি নদীকে কেন আমরা দূষণমুক্ত করব?

আজকের আলোচনায় আমরা দেখেছি, ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বৃদ্ধি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদীর জল দূষিত হওয়ার ফলে জলজ প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

এই দূষণ রোধ করার জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

এই বিষয়গুলো মনে রাখলে আপনি দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে লিখতে পারবেন।

Share via:

মন্তব্য করুন