এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়ানে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়ানে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়ানে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?
কষ্টার্জিত স্বাধীনতার পর ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতা তথা অখণ্ডতা মেনে নেওয়া ছিল যথেষ্ট কষ্টকর। ভারত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সুষ্ঠ যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাতীয় সংহতি, অর্থনৈতিক বিকাশ প্রভৃতির পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব অন্তরায় স্বরূপ ছিল। তাই ভারত রাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে ও দৃঢ়তার সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগকে সফল করেছিল।
দেশীয় রাজ্য দফতর –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগকে সফল করতে 1947 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে স্বাধীনতার প্রাক্কালেই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে দেশীয় রাজ্য দফতর গঠিত হয়। ভি. পি. মেনন ছিলেন এই দফতরের সচিব। সর্দার প্যাটেল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন দেশীয় রাজ্যগুলি যেমন তাদের বৈদেশিক কার্যকলাপ, প্রতিরক্ষা, পরিবহন প্রভৃতির দায়িত্ব ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়। তিনি 5 আগস্টের মধ্যে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারত ইউনিয়নে যুক্ত হতে অনুরোধ করেন। বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে কাশ্মীর, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদের মতো কয়েকটি ব্যতিক্রমী দেশীয় রাজ্য ছাড়া প্রায় সব দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল।
ভারতভুক্তির পদক্ষেপ
নিকটবর্তী অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে সংযুক্তি –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অন্যতম প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল ভারত রাষ্ট্রের প্রদেশগুলির সঙ্গে তার পার্শ্ববর্তী দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তি। যেমন – উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে গাড়োয়াল, রামপুর ও বেনারসের সংযুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোচবিহারের সংযুক্তি প্রভৃতি।
বৃহত্তর রাজ্যে রূপান্তর –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির প্রশ্নে ভারত সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল কয়েকটি দেশীয় রাজ্যকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ রাজ্যে রূপান্তর। যেমন – পাঞ্জাব ও পাতিয়ালার 8টি দেশীয় রাজ্যকে যুক্ত করে 1948 খ্রিস্টাব্দে PEPSU (The Patiala and East Punjab States Union) গঠন করা হয়।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর –
কয়েকটি দেশীয় রাজ্যকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়। যেমন – হিমাচল প্রদেশ, কচ্ছ, ভোপাল, ত্রিপুরা, মণিপুর ইত্যাদিকে কেন্দ্রীয় শাসনাধীন অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
সামরিক অভিযান –
কয়েকটি দেশীয় রাজ্যকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ভারতভুক্ত করা হয়। যেমন – 1948 খ্রিস্টাব্দে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে হায়দ্রাবাদ রাজ্যটিকে ভারতভুক্ত করা হয়।
গণভোট –
জুনাগড়, কাশ্মীর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যকে গণভোটের মাধ্যমে ভারতভুক্ত করা হয়েছিল।
মন্তব্য –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা জার্মান রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্ক অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ও সফল ছিল। এই কারণে তাঁকে ‘ভারতের লৌহমানব’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠির পরিভাষায় – “সর্দার প্যাটেল যদি না দৃঢ় হস্তে শত শত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করতেন, তবে আমাদের দশা বলকানের মতো হতো।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?
স্বাধীনতার পর ভারতের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশীয় রাজ্যগুলির একীভূতকরণ অপরিহার্য ছিল। এগুলি স্বাধীন থাকলে ভারতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংহতি বিঘ্নিত হতো।
দেশীয় রাজ্য দফতর কী এবং কে এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
1947 সালের জুন মাসে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে দেশীয় রাজ্য দফতর গঠিত হয়। ভি. পি. মেনন এই দফতরের সচিব ছিলেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দেশীয় রাজ্যগুলিকে কূটনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ভারতভুক্ত করা।
দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?
1. প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্তি (যেমন – কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়)।
2. বৃহত্তর রাজ্য গঠন (যেমন – PEPSU গঠন)।
3. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর (যেমন – হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর)।
4. সামরিক অভিযান (হায়দ্রাবাদ দখল, 1948)।
5. গণভোট (জুনাগড় ও কাশ্মীরে)।
কোন দেশীয় রাজ্যগুলি সামরিকভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?
হায়দ্রাবাদ (1948 সালে অপারেশন পোলো -এর মাধ্যমে) এবং জুনাগড় (সামরিক হস্তক্ষেপ ও গণভোটের মাধ্যমে) ভারতভুক্ত হয়।
PEPSU কী?
পাটিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (PEPSU) 1948 সালে 8টি দেশীয় রাজ্যকে একত্রিত করে গঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি পাঞ্জাবের সঙ্গে যুক্ত হয়।
গণভোটের মাধ্যমে কোন রাজ্যগুলি ভারতভুক্ত হয়?
জুনাগড় (1947 সাল) ও কাশ্মীর (পরবর্তীতে বিশেষ মর্যাদা সহ) গণভোট বা জনমতের ভিত্তিতে ভারতের অংশ হয়।
দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকরা কী শর্তে ভারতভুক্তিতে সম্মত হন?
তাদের প্রিভি পার্স (ব্যক্তিগত সম্পদ ও ভাতা), কিছু স্বায়ত্তশাসন ও সাম্মানিক মর্যাদা দেওয়া হয়, তবে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত সরকারের অধীনস্থ হয়।
দেশীয় রাজ্য একীভূতকরণের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
এটি আধুনিক ভারতের ভিত্তি তৈরি করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনে এবং একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে সহায়তা করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়ানে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়ানে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন