ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো
ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো
Contents Show

ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো।

ভারতের অরণ্য ধ্বংসের কারণ –

ভারতে একসময় (খ্রিস্টপূর্ব 3000 বছর) সমগ্র ভূমিভাগের 80% বনভূমি অবস্থান করত। বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে 19.39% দাঁড়িয়েছে। ভারতে বর্তমানে প্রতি বছরে 1% হারে ভূমি বন্ধ্যা ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের দেশে অরণ্য নিধনের কারণগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  • প্রাকৃতিক কারণ।
  • মানবিক কারণ।

প্রাকৃতিক কারণ –

  1. দাবানল – বনভূমি অঞ্চলে গাছে গাছে ঘর্ষণের ফলে আগুনের সৃষ্টি হলে তাকে দাবানল বলে। এই দাবানলের কারণে মাইলের পর মাইল বনভূমির গাছ নষ্ট হয়ে যায়।
  2. ভূমিধস – পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে প্রায়ই অরণ্য অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়।
  3. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত – আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চলে অগ্ন্যুদগমের কারণে বিস্তীর্ণ অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ নষ্ট হয়ে যায়।
  4. ঝড়ঝঞ্ঝা – মাঝেমধ্যে প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে বনভূমি অঞ্চলের অনেক বৃক্ষ উৎপাটিত হয়।
  5. রোগ ও পোকার আক্রমণ – অরণ্যভূমিতে পঙ্গপালের আক্রমণ ও নানা প্রকারের রোগ ও পোকার আক্রমণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভূমিধস
ভূমিধস

মানবিক কারণ –

  1. ঝুমচাষ বা স্থানান্তর কৃষি – পার্বত্য অঞ্চলের আদিম অধিবাসীরা নিজ প্রয়োজনে গাছপালা কেটে ও সেই স্থানটি পুড়িয়ে অরণ্যের কিছুটা অংশ পরিষ্কার করে কয়েক বছর কৃষিকাজ করে এবং সেই স্থানের উর্বরতা হ্রাস পেলে আবার অন্যত্র গিয়ে সেখানেও গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে কৃষিকার্য করে যা ঝুমচাষ নামে পরিচিত। এতে বনভূমির আয়তন হ্রাস পায়।
  2. উন্নয়নমূলক কার্য – জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অরণ্যের নিধন শুরু হয়েছে। বড়ো বড়ো প্রকল্প যেমন – রাস্তাঘাট তৈরি, জলাধার নির্মাণ, রেললাইন সম্প্রসারণ প্রভৃতির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এই প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই পরিবেশজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে প্রধান হল ব্যাপকভাবে অরণ্য নিধন।
  3. জ্বালানির চাহিদা – উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে অসংখ্য গাছপালা কেটে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ব্যবহৃত কাঠের 82 শতাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি কাঠের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বনভূমির ওপর ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  4. বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে কাঠের চাহিদা – প্যাকিং বাক্স, আসবাবপত্র, দেশলাই -এর বাক্স, প্লাইউড, কাগজ ও মণ্ড তৈরিতে ব্যাপকভাবে কাঠ ব্যবহার হয়ে আসছে। বিগত কয়েক দশকে শিল্পের প্রয়োজনে কমপক্ষে 3000 বর্গকিমি বনাঞ্চল সাফ করে ফেলা হয়েছে। ভারতে কাগজ শিল্পের জন্য 2% এবং চা শিল্পে বাক্সের জোগান দিতে 22% অরণ্যাঞ্চলের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া একাধিক উপজাত সামগ্রী বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই সমস্ত চাহিদা মেটাতে আমাদের দেশের অরণ্য সম্পদ আজ ধ্বংসের মুখে।
  5. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ – পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবিকা অর্জন ও পশুজাত দ্রব্যের চাহিদার জন্য পশুচারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুচারণের ফলে বনভূমির চারাগাছগুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং পশুদের চলাচলে ভূমিক্ষয় হয়ে বনভূমি ধ্বংস হয়।
  6. অবৈজ্ঞানিক প্রথায় গাছকাটা – কাঠ ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রেই বনভূমিতে গাছ কাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন না। এতে বহু চারাগাছ ও অপরিণত গাছ নষ্ট হয়ে যায়।
  7. পরিবেশ দূষণের প্রভাব – পরিবেশ দূষণের প্রভাবও বনভূমিকে প্রভাবিত করছে। শিল্পায়নের ফলে শিল্পকেন্দ্র থেকে উদ্ভূত গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়, যা বনভূমির বৃক্ষের ক্ষতি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতে অরণ্য নিধন বা বন ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি কী কী?

ভারতে অরণ্য নিধনের প্রধান কারণগুলি হলো –
1. প্রাকৃতিক কারণ – দাবানল, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ঝড়ঝঞ্ঝা, রোগ ও পোকার আক্রমণ।
2. মানবসৃষ্ট কারণ – ঝুমচাষ, উন্নয়নমূলক প্রকল্প (রাস্তা, বাঁধ, শিল্পায়ন), জ্বালানির চাহিদা, কাঠের বাণিজ্যিক ব্যবহার, পশুচারণ ও পরিবেশ দূষণ।

ঝুমচাষ কী এবং এটি কীভাবে বন ধ্বংস করে?

ঝুমচাষ বা স্থানান্তর কৃষি হলো এক ধরনের কৃষি পদ্ধতি যেখানে আদিবাসীরা বনের জমি কেটে ও পুড়িয়ে ফেলে সেখানে চাষাবাদ করে। কয়েক বছর পর মাটির উর্বরতা কমে গেলে তারা নতুন জায়গায় গাছ কেটে একই প্রক্রিয়া চালায়। এতে বনভূমি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।

দাবানল কীভাবে বন ধ্বংস করে?

দাবানল হলো বনে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে ছড়িয়ে পড়া অগ্নিকাণ্ড। গাছের মধ্যে ঘর্ষণ, আগুনের স্ফুলিঙ্গ বা মানুষের অসাবধানতায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, যা মাইলের পর মাইল বনভূমি পুড়ে ধ্বংস করে দেয়।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলি কীভাবে বন ধ্বংস করছে?

রাস্তা, রেললাইন, বাঁধ, শিল্পাঞ্চল ও নগরায়ণের জন্য বড়ো বড়ো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়, যার জন্য প্রচুর গাছ কাটা হয়। যেমন –
1. বাঁধ নির্মাণ – টিহরি বাঁধ, সর্দার সরোবর বাঁধের জন্য বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ডুবে গেছে।
2. শিল্পায়ন – কারখানা ও খনি তৈরির জন্য বন সাফ করা হয়।

ভারতে কাঠের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার কোন ক্ষেত্রে হয়?

ভারতে কাঠের ব্যবহার প্রধানত –
1. জ্বালানি (82%)।
2. কাগজ ও প্লাইউড শিল্প।
3. আসবাবপত্র।
4. চা বাক্স ও প্যাকিং সামগ্রী তৈরিতে।

অরণ্য নিধনের ফলে কী কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে?

অরণ্য নিধনের ফলে –
1. জলবায়ু পরিবর্তন।
2. মরুকরণ।
3. বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস।
4. বন্যা ও ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অরণ্য রক্ষায় ভারত সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

ভারত সরকার বন সংরক্ষণ আইন (1980), জাতীয় বন নীতি (1988), সামাজিক বনায়ন প্রকল্প এবং বন অধিকার আইন (2006) চালু করেছে। এছাড়া বন মহোৎসব ও হরিত হিমাচাল এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে গাছ লাগানো হচ্ছে।

সাধারণ মানুষ কীভাবে বন সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারে?

সাধারণ মানুষ –
1. কাগজ ও কাঠের অপচয় কমিয়ে।
2. বেশি করে গাছ লাগিয়ে।
3. জ্বালানি হিসাবে বিকল্প শক্তি (সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস) ব্যবহার করে।
4. বন ধ্বংসকারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়িয়ে বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভারতে বর্তমানে কত শতাংশ বনভূমি রয়েছে?

ভারতের মোট ভূমির মাত্র 19.39% বনাঞ্চল রয়েছে (ভারতীয় বন সার্ভে রিপোর্ট 2021 অনুযায়ী)।

অ্যাসিড বৃষ্টি কীভাবে বন ধ্বংস করে?

শিল্প ও যানবাহনের দূষণে বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) ও নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি গাছের পাতা ও মাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে গাছ মারা যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে অরণ্য নিধন বা অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?