ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো
ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো
Contents Show

ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।

সহজভাবে শহর বা নগর বলতে বোঝায় কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক কারণে বহু মানুষের পাশাপাশি ঘন অবস্থান। জনসংখ্যার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ন্যূনতম 5000 জনের বসতিকে শহর এবং ন্যূনতম 100000 জনের বসতিকে নগর বলে। শহর বা নগর গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশগুলি হল –

বিস্তীর্ণ সমভূমির অবস্থান –

বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, জীবিকার সুযোগ প্রভৃতি উন্নত জীবনযাপনের সমস্ত অনুকূল পরিবেশ রচিত হওয়ার সুযোগ থাকায় ভারতের অধিকাংশ শহর ও নগর সমভূমিতে গড়ে ওঠেছে। বিস্তীর্ণ সমভূমিতে নগর বিবর্ধিত হওয়ার সুযোগ থাকায় তা অতি মহানগরের রূপ নেয়। উদাহরণ – বৃহত্তর কলকাতা, দিল্লি।

অনুকূল জলবায়ু –

অধিক উষ্ণ বা অধিক শীতল জলবায়ু অপেক্ষা সমভাবাপন্ন, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, মানুষের বসবাস ও কর্মের উপযুক্ত হওয়ায় ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে এবং নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমিতে অধিক নগর গড়ে উঠেছে। উদাহরণ – চেন্নাই, মুম্বাই, বিশাখাপত্তনম, প্রভৃতি।

জলের প্রাপ্যতা –

সুপেয় বা স্বাদু স্বচ্ছ জলের প্রাপ্যতা নগর গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। হরপ্পা, সিন্ধু, মহেন-জো-দারোর মতো সভ্যতাগুলিও গড়ে উঠেছিল মূলত সিন্ধু ও তার বিভিন্ন উপনদীকে কেন্দ্র করে। জনপদ বা শিল্পকারখানায় বিপুল স্বাদু জলের চাহিদা মেটানো হয় নদনদী, স্বাদু জলের হ্রদ, বড়ো জলাধার থেকে। যেমন – জামশেদপুর শহরের জলের চাহিদা মেটানো হয় সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদী এবং ডিমনা জলাধার থেকে।

উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা –

উন্নত গতিশীল পরিবহণের সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে শিল্প, শিক্ষা, ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং নগর গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ রচিত হয়। যেমন – রেল জংশনকে কেন্দ্র করে মুঘলসরাই, বন্দরকে কেন্দ্র করে মুম্বাই, হলদিয়া, চেন্নাই, কলকাতা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

ব্যাবসাবাণিজ্য কেন্দ্র –

যেসব অঞ্চলে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে সেখানে অধিক কর্মসংস্থানের কারণে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে এবং কার্যালয়, ব্যাংক প্রভৃতি গড়ে ওঠে। সেই স্থানটি ক্রমে শহর নগরে পরিণত হয়। শিলিগুড়ি, কটক, সুরাট, মুম্বাই শহর প্রধানত ব্যাবসাবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ‘মুম্বাই’ ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী নামে পরিচিত।

প্রশাসনিক কেন্দ্র –

প্রশাসনিক কাজের জন্য অনেক বড়ো বড়ো প্রশাসনিক সদর দফতর, ভবন, আদালত, ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, আবাসন প্রভৃতি গড়ে ওঠে। কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে একসময় নগর বা শহরে পরিণত হয়। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি প্রশাসনিক শহর হিসেবে খ্যাত। প্রশাসনিক কারণে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী (কলকাতা), জেলা সদর (বর্ধমান, হাওড়া), মহকুমা সদর (বিষ্ণুপুর), ও পৌরকেন্দ্র (চন্দননগর, কল্যাণী) শহর বা নগরের মর্যাদা পায়।

শিল্পকেন্দ্র –

কোনো অঞ্চলে বৃহদায়তন শিল্প বা অসংখ্য ছোটো ছোটো বা অনুসারী শিল্প গড়ে উঠলে তাকে কেন্দ্র করে জনসমাগম বাড়ে এবং ধীরে ধীরে অঞ্চলটি নগরে পরিণত হয়। উদাহরণ – জামশেদপুর (লৌহ-ইস্পাত শিল্প), আহমেদাবাদ (কার্পাস বয়নশিল্প), গুরগাঁও (মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প)।

পর্যটন কেন্দ্র –

প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য, মনোরম স্বাস্থ্যকর জলবায়ু প্রভৃতি উপভোগ করার জন্য বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং কমপ্লেক্স, পরিবহণ সংস্থার কার্যালয় প্রভৃতি গড়ে ওঠে। অঞ্চলটি একসময় শহরের মর্যাদা পায়। দার্জিলিং, নৈনিতাল, মুসৌরি, আগ্রা, উদয়পুর, কাশ্মীর, কোচি প্রভৃতি পর্যটন শহর হিসেবে বিখ্যাত।

অন্যান্য –

  1. বন্দরকেন্দ্রিক – হলদিয়া, কান্ডালা।
  2. খনিকেন্দ্রিক – রানিগঞ্জ।
  3. প্রতিরক্ষা বা দুর্গ – কোচি, ব্যারাকপুর, আম্বালা।
  4. ধর্মীয়স্থান – পুরী, তিরুপতি।
  5. শিক্ষা-সংস্কৃতি – শান্তিনিকেতন, বেঙ্গালুরু।
  6. ঐতিহাসিক স্থান – জয়পুর, যোধপুর।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতের নগর গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি কী কী?

ভারতে নগর গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হলো —
1. বিস্তীর্ণ সমভূমির অবস্থান
2. অনুকূল জলবায়ু।
3. জলের প্রাপ্যতা।
4. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা।
5. বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
6. প্রশাসনিক কার্যক্রম।
7. শিল্পায়ন।
8. পর্যটন কেন্দ্র।
9. বন্দর ও খনি অঞ্চল।
10. ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব।

সমভূমি অঞ্চলে নগর গড়ে ওঠার সুবিধা কী?

সমভূমি অঞ্চলে নগর গড়ে ওঠার সুবিধা হলো —
1. কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত ভূমি।
2. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা।
3. জনবসতি ও অবকাঠামো নির্মাণের সহজলভ্যতা।
উদাহরণ – কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই।

নদী বা জলাশয়ের কাছে নগর গড়ে ওঠার কারণ কী?

নদী বা জলাশয়ের কাছে নগর গড়ে ওঠার কারণ –
1. সুপেয় জলের সরবরাহ।
2. কৃষি, শিল্প ও গৃহস্থালির কাজে জলের প্রয়োজন।
3. নদীপথে পরিবহণ ও বাণিজ্যের সুবিধা।
উদাহরণ – দিল্লি (যমুনা নদী), কলকাতা (হুগলি নদী), জামশেদপুর (সুবর্ণরেখা নদী)।

পরিবহণ ব্যবস্থা নগরায়ণে কীভাবে সাহায্য করে?

1. রেল, সড়ক, বন্দর ও বিমানবন্দর নগরকে বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত করে।
2. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ও জনবসতি বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ – মুম্বাই (বন্দর), নাগপুর (রেল জংশন), গুরুগ্রাম (সড়ক ও মেট্রো সংযোগ)।

বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি কীভাবে নগর গঠনে সাহায্য করে?

1. বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ব্যাংক, বীমা, বিপণিকেন্দ্র গড়ে ওঠে।
2. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ – মুম্বাই (ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী), সুরাট (হীরা বাণিজ্য)।

প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলি নগরায়ণে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

1. রাজধানী বা জেলা সদর দপ্তর থাকলে সরকারি অফিস, আদালত, পুলিশ স্টেশন গড়ে ওঠে।
2. কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের বসতি বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ – নতুন দিল্লি (রাজধানী), কলকাতা (রাজ্য সদর)।

শিল্পায়ন নগর গঠনে কীভাবে সাহায্য করে?

বৃহৎ শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বসতি গড়ে ওঠে। উদাহরণ – জামশেদপুর (টাটা স্টিল), বেঙ্গালুরু (আইটি শিল্প)।

পর্যটন কীভাবে নগরায়ণে ভূমিকা রাখে?

পর্যটনশিল্পের বিকাশে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ সুবিধা গড়ে ওঠে। উদাহরণ – দার্জিলিং, আগ্রা (তাজমহল), গোয়া।

ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নগরের গঠনের কারণ উল্লেখ করো।

1. মুম্বাই – বন্দর, বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্র।
2. দিল্লি – রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র।
3. চেন্নাই – বন্দর ও শিল্পকেন্দ্র।
4. জামশেদপুর – লৌহ-ইস্পাত শিল্প।
5. বেঙ্গালুরু – তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাকেন্দ্র।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী

ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো।

গ্যাসের অণুর গড়বেগ কাকে বলে? গ্যাসের অণুর গতিবেগের ওপর তার চাপ কীভাবে নির্ভর করে?

গ্যাসের অণুর গড়বেগ কাকে বলে? গ্যাসের অণুর গতিবেগের ওপর তার চাপ কীভাবে নির্ভর করে?

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – গ্যাসের আচরণ – আদর্শ গ্যাস সমীকরণ এবং গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – গ্যাসের আচরণ – চার্লসের সূত্র ও চাপের সূত্র

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – গ্যাসের আচরণ – বয়েলের সূত্র