এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।
ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব –
উপকূলীয় সমভূমির অবস্থান, সমভাবাপন্ন সামুদ্রিক জলবায়ু, উর্বর মৃত্তিকা ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে, যেমন –
কৃষির উন্নতি –
উর্বর পলিমাটি, পর্যাপ্ত ও পরিমিত বৃষ্টিপাত, উপকূলীয় সমভূমির অবস্থান কৃষিকাজের পক্ষে আদর্শ। এই অংশে উৎপন্ন প্রধান কৃষিজাত ফসলগুলি হল – ধান, তৈলবীজ, তুলা, ডাল, নারকেল, গোলমরিচ প্রভৃতি।
খনিজের ভান্ডার –
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলটি মূল্যবান খনিজ সম্পদে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, আকরিক লৌহ ও মোনাজাইট উত্তোলিত হয়।
বনজ সম্পদ আহরণ –
উপকূল সন্নিহিত পর্ণমোচী ও চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি থেকে সেগুন, শাল, মেহগনি, বাঁশ, বেত প্রভৃতি বিভিন্ন কাঠ ও বনজ উপজাত সামগ্রী সংগ্রহ করে বহু মানুষ জীবিকানির্বাহ করে।
শিল্পোন্নতি –
কাঁচামালের প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক শিল্প, (যেমন – কাগজ শিল্প, কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প) ধাতব শিল্প, (যেমন – লৌহ-ইস্পাত ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প) এবং পেট্রোরাসায়নিক শিল্প ও রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে।
ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার –
এই অংশে রেলপথ, সড়কপথ, স্বাভাবিক ও কৃত্রিম পোতাশ্রয় যুক্ত বন্দর গড়ে ওঠায় ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি সম্ভব হয়েছে।
মৎস্য সংগ্রহ –
সমুদ্রের নৈকট্যের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পমফ্রেট, চিংড়ি, ইলিশ উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উপকূলীয় সমভূমি কীভাবে ভারতের কৃষিকে প্রভাবিত করে?
উপকূলীয় সমভূমিতে উর্বর পলিমাটি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও সমভাবাপন্ন জলবায়ু কৃষির জন্য আদর্শ। এখানে ধান, নারকেল, গোলমরিচ, তুলা, ডাল ও তৈলবীজের মতো ফসল উৎপাদন হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলে কী ধরনের খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়?
এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, আকরিক লৌহ, মোনাজাইট (বিরল মৃত্তিকা খনিজ) ইত্যাদি মূল্যবান সম্পদ উত্তোলিত হয়।
উপকূলীয় সমভূমি বনজ সম্পদ আহরণে কীভাবে সাহায্য করে?
উপকূলসংলগ্ন বনভূমি থেকে সেগুন, শাল, মেহগনি, বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করা হয়, যা কাঠ শিল্প ও বনজ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
এই অঞ্চলে কোন ধরনের শিল্পের বিকাশ ঘটেছে?
কৃষিভিত্তিক শিল্প (কাগজ, বস্ত্র), ধাতব শিল্প (লৌহ-ইস্পাত), পেট্রোরাসায়নিক শিল্প ও রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে।
উপকূলীয় সমভূমি বাণিজ্যের প্রসারে কীভাবে সাহায্য করে?
এই অঞ্চলে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা (রেল, সড়ক) ও বন্দর (মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা) থাকায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর হয়েছে।
মৎস্য আহরণে উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিকা কী?
সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে ইলিশ, চিংড়ি, পমফ্রেটের মতো সামুদ্রিক মাছ ধরা হয়, যা মৎস্য শিল্প ও খাদ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ।
উপকূলীয় সমভূমির জলবায়ু অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু কৃষি, শিল্প ও বন্দর কার্যক্রমকে সহায়তা করে, যা অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু প্রধান বন্দরের নাম কী?
মুম্বাই (জওহরলাল নেহরু বন্দর), চেন্নাই, কলকাতা (হলদিয়া), কোচি ও কান্ডলা উল্লেখযোগ্য।
উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশগত সমস্যা কী কী?
জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি, লবণাক্ততা ও দূষণ এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
উপকূলীয় সমভূমি পর্যটন শিল্পে কীভাবে অবদান রাখে?
গোয়া, কেরালা, ওড়িশার মতো উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে সমুদ্রসৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করেছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন