এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য –
ভারতের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। মৌসুমি শব্দটি আরবি শব্দ মৌসম থেকে এসেছে — যার অর্থ ঋতু, গ্রীষ্মকালীন আর্দ্রতা এবং শীতকালীন শুষ্কতা ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে ভারতের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়।
মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি –
ভারতে গ্রীষ্ম ঋতুতে উষ্ণ ও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীত ঋতুতে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
ঋতু পরিবর্তন –
ভারতে প্রধান চারটি ঋতু – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত এবং অপ্রধান দুটি ঋতু হেমন্ত ও বসন্ত ঋতুর অস্তিত্ব দেখা যায়। ঋতু অনুসারে আর্দ্রতা, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির পার্থক্য দেখা যায়।
বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ –
গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিকে মৌসুমি বায়ু বিপরীতে প্রবাহিত হয়।
জেট স্ট্রিমের উপস্থিতি –
ভারতে দু-ধরনের জেটস্ট্রীমের উপস্থিতি দেখা যায় –
- গ্রীষ্মকালে দিল্লি থেকে গুয়াহাটির দিকে জেটবায়ু প্রবাহিত হয়। জুনের প্রথম সপ্তাহে তা হিমালয়ের উত্তরে চলে যায়।
- এই একই সময়ে 13° উত্তর অক্ষাংশের নিকট পূবালি জেটবায়ু লক্ষ করা যায়।
স্থানীয় বায়ুর উপস্থিতি –
ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনেক স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়, যেমন — ‘লু’ নামক উষ্ণ স্থানীয় বায়ু প্রধানত বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।
মৌসুমি বিস্ফোরণ –
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের আগে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আরব সাগরের উপকূল সংলগ্ন অগভীর সমুদ্রে স্থির হয়ে অবস্থান করে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে সৃষ্ট নিম্নচাপের আকর্ষণে তা হঠাৎ করে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায় যা মৌসুমি বিস্ফোরণ নামে পরিচিত।
চাপবলয়ের উপস্থিতি –
গ্রীষ্মকালে ভারতে অত্যধিক উষ্ণতার জন্য নিম্নচাপ বলয় এবং শীতকালে শৈত্যপ্রবাহের জন্য উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন –
বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন ভারতের জলবায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। উত্তর ভারতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উপদ্বীপীয় বা দক্ষিণ ভারতে পশ্চিম থেকে পূর্বে ক্রমশ বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে।
জলবায়ুগত দুর্বিপাক –
ভারতে বেশ কতকগুলি জলবায়ুগত দুর্বিপাক দেখা যায়, যেমন — গ্রীষ্মকালে আঁধি ও কালবৈশাখী, শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, আম্রবৃষ্টি ও কফিবৃষ্টি এবং শরৎকালে আশ্বিনের ঝড় আবির্ভূত হয়।
একটানা বৃষ্টিপাতের অভাব –
চাপ বলয়সমূহের সাময়িক বিরতি এবং চাপবলয়ের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনের জন্য বৃষ্টিপাত কখনও একটানা না হয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দেখা যায়।
গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত –
গ্রীষ্মঋতুতে দক্ষিণদিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে জলীয়বাষ্প আহরণ করে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়।
শীতকালীন শুষ্কতা –
শীতকালে উত্তরদিক থেকে আগত উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জলীয় বাষ্পের ঘাটতির জন্য বৃষ্টিপাত হয় না।
খরা ও বন্যা –
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলেও এই বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তন যথেষ্ট অনিশ্চিত হওয়ায় প্রায়ই খরা ও বন্যার সৃষ্টি হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের জলবায়ু কী ধরনের?
ভারতের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। এখানে গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা ও শীতকালে শুষ্কতা দেখা যায়।
মৌসুমি বায়ু কী?
মৌসুমি বায়ু হল ঋতুভিত্তিক বায়ুপ্রবাহ। গ্রীষ্মে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (আর্দ্র) এবং শীতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু (শুষ্ক) প্রবাহিত হয়।
ভারতে কয়টি প্রধান ঋতু আছে?
ভারতে চারটি প্রধান ঋতু —
1. গ্রীষ্ম (মার্চ-জুন)।
2. বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর)।
3. শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর)।
4. শীত (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)।
এছাড়া হেমন্ত ও বসন্ত অপ্রধান ঋতু।
মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হঠাৎ করে ভারতে প্রবেশ করে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়, একে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
জেট স্ট্রিম কীভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
1. গ্রীষ্মে তিব্বতীয় জেট স্ট্রিম হিমালয়ের উত্তরে সরে যায়।
2. গ্রীষ্মে পূবালি জেট স্ট্রিম (13° উত্তর অক্ষাংশে) বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে।
ভারতে বৃষ্টিপাতের বণ্টন কেমন?
ভারতে বৃষ্টিপাত অসম —
1. উত্তর ভারতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বৃষ্টিপাত কমে।
2. দক্ষিণ ভারতে পশ্চিম থেকে পূর্বে বৃষ্টিপাত কমে।
স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ দাও।
1. লু – বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে প্রবাহিত উষ্ণ বায়ু।
2. আঁধি – রাজস্থানে ধূলিঝড়।
3. কালবৈশাখী – পশ্চিমবঙ্গের গ্রীষ্মকালীন ঝড়।
শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত হয় না কেন?
শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় এটি শুষ্ক থাকে, ফলে বৃষ্টিপাত হয় না।
ভারতে খরা ও বন্যার কারণ কী?
মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চিত আগমন ও প্রত্যাবর্তনের কারণে কখনও অতিবৃষ্টি (বন্যা), কখনও অনাবৃষ্টি (খরা) হয়।
জলবায়ুগত দুর্বিপাকের উদাহরণ দাও।
1. গ্রীষ্মে – কালবৈশাখী, আঁধি।
2. শীতে – পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, আম্রবৃষ্টি।
3. শরতে – আশ্বিনের ঝড়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন