এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতির পরিচয় দাও।
ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতি –
ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বহুপূর্বে কুটিরশিল্প রূপে ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছিল। 1874 খ্রিস্টাব্দে কুলটিতে প্রথম আধুনিক পদ্ধতিতে লৌহপিণ্ড উৎপাদন শুরু হয়। স্বাধীনতার পূর্বে 1907 খ্রিস্টাব্দে সাকচিতে, 1919 খ্রিস্টাব্দে বার্নপুরে এবং 1923 খ্রিস্টাব্দে ভদ্রাবতীতে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতার পরবর্তী পর্যায় –
স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন নতুন ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং এই শল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটে।
পরিকল্পনা | উন্নতি |
প্রথম (1951-1956 খ্রিস্টাব্দ) | জামশেদপুর ও বার্নপুরে সম্প্রসারণ ঘটে। |
দ্বিতীয় (1956-1961 খ্রিস্টাব্দ) | দুর্গাপুর, ভিলাই ও রাউরকেল্লাতে ইস্পাতকেন্দ্র স্থাপিত হয়। |
তৃতীয় (1961-1966 খ্রিস্টাব্দ) | বোকারো, ভিলাই ও রাউরকেল্লাতে ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপিত হয়। |
চতুর্থ (1969-1974 খ্রিস্টাব্দ) | সালেম, বিশাখাপত্তনম, হসপেট (বিজয়নগর) ইস্পাতকেন্দ্র স্থাপন এবং SAIL স্থাপিত হয়। |
পঞ্চম (1974-1978 খ্রিস্টাব্দ) | দুর্গাপুর, ভিলাই ও সালেম কেন্দ্রের সম্প্রসারণ হয়। |
ষষ্ঠ (1980-1985 খ্রিস্টাব্দ) | বোকারো সম্প্রসারণ, দ্বৈতারীতে নতুন ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। |
সপ্তম (1985-1990 খ্রিস্টাব্দ) | ভিলাই, বোকারো ও জামশেদপুরের সম্প্রসারণের শেষে বিশাখাপত্তনমে উৎপাদন শুরু হয়। |
অষ্টম (1992-1997 খ্রিস্টাব্দ) | দুর্গাপুর ও রাউরকেল্লা আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা, ছোটো বড়ো শিল্পস্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়। |
নবম (1997-2002 খ্রিস্টাব্দে) | কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া হয়। |
দশম (2002-2007 খ্রিস্টাব্দে) | ওড়িশার পারাদ্বীপে, শালবনীতে, ঝাড়খণ্ডের মনোহরপুর ও চান্ডিলে লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপন। |
একাদশ (2007-2012 খ্রিস্টাব্দে) | ওড়িশা কলিঙ্গনগর, মহারাষ্ট্রের ডলভিতে বৃহৎ সম্পুরিত কারখানা স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রাচীন ইতিহাস কী?
ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের ইতিহাস প্রাচীন। কুটিরশিল্প রূপে ইস্পাত উৎপাদন হতো। আধুনিক পদ্ধতিতে প্রথম লৌহপিণ্ড উৎপাদন শুরু হয় 1874 সালে কুলটিতে।
স্বাধীনতার আগে কোন কোন ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছিল?
স্বাধীনতার আগে ভারতে আধুনিক লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। এই সময়ে গঠিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারখানা হল –
1. 1907 – সাকচি (জামশেদপুর) – TISCO (টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি)।
2. 1919 – বার্নপুর – IISCO (ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি)।
3. 1923 – ভদ্রাবতী – MISCO (মাইসুরু আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি)।
স্বাধীনতার পর লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উন্নতিতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ভূমিকা কী?
স্বাধীনতার পর ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে লৌহ-ইস্পাত শিল্পে নতুন কারখানা স্থাপন ও পুরোনো কারখানার সম্প্রসারণ করা হয়। যেমন –
1. প্রথম পরিকল্পনা (1951-56) – জামশেদপুর ও বার্নপুরের সম্প্রসারণ।
2. দ্বিতীয় পরিকল্পনা (1956-61) – দুর্গাপুর, ভিলাই ও রাউরকেল্লায় নতুন কারখানা।
3. তৃতীয় পরিকল্পনা (1961-66) – বোকারো ইস্পাত কারখানা স্থাপন।
4. চতুর্থ পরিকল্পনা (1969-74) – SAIL (স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) গঠন, সালেম ও বিশাখাপত্তনমে নতুন কারখানা।
SAIL কী এবং কখন গঠিত হয়?
SAIL (Steel Authority of India Limited) 1973 সালে গঠিত হয়। এটি ভারতের সর্ববৃহৎ সরকারি ইস্পাত উৎপাদন সংস্থা, যা ভিলাই, বোকারো, দুর্গাপুর, রাউরকেল্লা ইত্যাদি কারখানাগুলি পরিচালনা করে।
বেসরকারি খাতে ইস্পাত শিল্পের উন্নয়ন কখন শুরু হয়?
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (1992-97) থেকে বেসরকারি খাতে ইস্পাত শিল্পের সম্প্রসারণ শুরু হয়। পরে JSW, TATA Steel, Essar Steel ইত্যাদি বেসরকারি সংস্থাগুলি বৃহৎ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে ভারতের প্রধান ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলি কোথায় অবস্থিত?
বর্তমানে ভারতের প্রধান ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত –
1. সরকারি – ভিলাই (ছত্তিশগড়), বোকারো (ঝাড়খণ্ড), দুর্গাপুর (পশ্চিমবঙ্গ), রাউরকেল্লা (ওড়িশা)।
2. বেসরকারি – জামশেদপুর (TATA Steel), বিজয়নগর (JSW Steel), পারাদ্বীপ (POSCO)।
একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (2007-12) ইস্পাত শিল্পের কী উন্নতি হয়?
একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ইস্পাত শিল্পের উন্নতির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন –
1. ওড়িশার কলিঙ্গনগর ও মহারাষ্ট্রের ডলভিতে নতুন বৃহৎ ইস্পাত কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
2. বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি (যেমন – POSCO, Arcelor Mittal)।
ভারত বর্তমানে বিশ্বে কততম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ?
বর্তমানে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ (চীনের পরে)। 2023 সালে ভারতের ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় 125 মিলিয়ন টন।
লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উন্নয়নে প্রধান সমস্যাগুলি কী?
ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উন্নয়নে কিছু প্রধান সমস্যা রয়েছে, যেমন –
1. কাঁচামাল (লৌহ আকরিক, কয়লা) এর অভাব।
2. শক্তির উচ্চ খরচ।
3. পরিবেশ দূষণ ও নিয়ন্ত্রণ।
4. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন