এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।
ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি
- উৎপত্তি – ভূ-আন্দোলনে ভূমির বসে যাওয়ায় এই উপকূল সৃষ্টি হয়েছে। এখানে সমুদ্রের তরঙ্গের সঞ্চয় কার্য লক্ষ করা যায়।
- বিস্তার – এই সমভূমির প্রস্থ খুবই সংকীর্ণ, গড়ে প্রায় 65 কিলোমিটার।
- উচ্চতা – সমভূমির গড় উচ্চতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
- ঢাল – সমুদ্রের দিকে এই সমভূমির ঢাল খুব খাড়া।
- পাহাড়ের অবস্থান – সমভূমির পূর্বাংশে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা অবস্থিত।
- বালিয়াড়ির উপস্থিতি – দক্ষিণে মালাবার উপকূল বরাবর বালিয়াড়ির উপস্থিতি দেখা যায়।
- মৃত্তিকার অবস্থা – এখানে বালুকাময় কাঁকরমিশ্রিত মৃত্তিকা রয়েছে, যা কৃষির জন্য অযোগ্য।
- নদীর ধারা – উপকূল অত্যন্ত সংকীর্ণ বলে এখানে কোনও বড় নদীর প্রবাহ নেই।
- বন্দর – উপকূল অত্যন্ত কাটা কাটা হওয়ায় অনেক বড় বড় বন্দর গড়ে উঠেছে।
- হ্রদ বা উপহ্রদ – কাটা কাটা তীররেখা থাকার কারণে এখানে অনেক উপহ্রদ বা লেগুন রয়েছে, যেমন — পেরিয়ার, ভেম্বানাদ।
- যাতায়াত ব্যবস্থা – সংকীর্ণ ভূভাগের কারণে এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব বেশি উন্নত নয়।
- জনবসতি – মালাবার উপকূল ছাড়া আর কোনও অংশে তেমন ঘন জনবসতি গড়ে ওঠেনি।
ভারতের পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি
- উৎপত্তি – নদী এবং সমুদ্র তরঙ্গের সম্মিলিত সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে এই উপকূলের সৃষ্টি হয়েছে।
- ভূমির ঢাল – সঞ্চয় কার্য ঘটায় সমভূমির ঢাল অতি অল্প এবং এটি প্রায় সমতল ভূভাগ।
- নদী উপত্যকা – উপকূল চওড়া বলে এখানে গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা এবং কাবেরী নদীর মতো বড় বড় নদীর উপত্যকা রয়েছে এবং সেগুলির মোহনায় বদ্বীপ গড়ে উঠেছে।
- বালিয়াড়ির উপস্থিতি – চওড়া এবং প্রশস্ত উপকূলে প্রায় সর্বত্রই বালিয়াড়ির উপস্থিতি দেখা যায়।
- মৃত্তিকার অবস্থা – নদীর পলিসমৃদ্ধ ভূভাগে উর্বর এবং কৃষিযোগ্য মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে।
- শহর এবং বন্দর – উপকূলরেখা অখণ্ড থাকায় এখানে কৃত্রিম বন্দর বেশি এবং স্বাভাবিক বন্দর খুব কম। কেবল বিশাখাপত্তনম বন্দরের গুরুত্ব রয়েছে। তবুও এই সমভূমিতে বহু বড় শহর গড়ে উঠেছে।
- জনবসতি – সমভূমির বিস্তৃত এবং উর্বর ভূভাগের কারণে এখানে ঘন জনবসতি বিদ্যমান।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?
1. পশ্চিম উপকূল – ভূ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এবং সমুদ্রতরঙ্গের সঞ্চয়কার্যের প্রভাব রয়েছে।
2. পূর্ব উপকূল – নদী ও সমুদ্রতরঙ্গের সম্মিলিত সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত হয়েছে।
পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলের বিস্তৃতি কেমন?
1. পশ্চিম উপকূল – সংকীর্ণ (গড়ে 65 কিমি)।
2. পূর্ব উপকূল – প্রশস্ত ও বিস্তৃত।
কোন উপকূলের ঢাল বেশি এবং কেন?
1. পশ্চিম উপকূল – ঢাল বেশি, কারণ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার প্রভাবে সমুদ্রের দিকে খাড়া ঢাল রয়েছে।
2. পূর্ব উপকূল – ঢাল কম, কারণ এটি নদীবাহিত পলির সমতল ভূমি।
কোন উপকূলে নদী ও বদ্বীপ বেশি দেখা যায়?
1. পূর্ব উপকূলে গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, কাবেরীর মতো বড় নদী ও বদ্বীপ রয়েছে।
2. পশ্চিম উপকূলে বড় নদী নেই, কারণ উপকূল সংকীর্ণ।
কোন উপকূলের মৃত্তিকা কৃষির জন্য বেশি উপযোগী?
1. পূর্ব উপকূল – উর্বর পলিমাটি কৃষির জন্য আদর্শ।
2. পশ্চিম উপকূল – বালুকাময় ও কাঁকুরে মাটি কৃষির অনুপযুক্ত।
কোন উপকূলে বন্দর বেশি এবং কেন?
1. পশ্চিম উপকূলে (মুম্বাই, কোচি, ম্যাঙ্গালোর) প্রাকৃতিক বন্দর বেশি, কারণ উপকূল ভগ্ন ও গভীর।
2. পূর্ব উপকূলে (বিশাখাপত্তনম, চেন্নাই) কৃত্রিম বন্দর বেশি, কারণ উপকূল সমতল ও অভগ্ন।
কোন উপকূলে হ্রদ (লেগুন) দেখা যায়?
1. পশ্চিম উপকূলে ভেম্বানাদ, পেরিয়ার মতো লেগুন রয়েছে।
2. পূর্ব উপকূলে লেগুন কম দেখা যায়।
জনবসতি কোন উপকূলে বেশি ঘন?
1. পূর্ব উপকূলে উর্বর মাটি ও বিস্তৃত সমতল ভূমির জন্য ঘন জনবসতি।
2. পশ্চিম উপকূলে (মালাবার ছাড়া) জনবসতি কম।
বালিয়াড়ি কোন উপকূলে বেশি দেখা যায়?
1. পূর্ব উপকূলে প্রায় সর্বত্র বালিয়াড়ি রয়েছে।
2. পশ্চিম উপকূলে শুধুমাত্র মালাবার উপকূলে বালিয়াড়ি দেখা যায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা কোন উপকূলে উন্নত?
1. পূর্ব উপকূল সমতল হওয়ায় রাস্তা ও রেলপথ ভালো।
2. পশ্চিম উপকূল সংকীর্ণ ও ভগ্ন হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা তুলনামূলক কম উন্নত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন