এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের পূর্ব উপকূল অপেক্ষা পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা বেশি কেন ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পূর্ব উপকূল অপেক্ষা পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা বেশি কেন ব্যাখ্যা করো।
বন্দর গড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক প্রাকৃতিক গঠন হল উপকূল ভাগের ‘ভগ্ন প্রকৃতি’। ভারতের পশ্চিম উপকূলে বন্দর গড়ে ওঠার সকল অনুকূল পরিবেশগুলি বর্তমান। ভারতে 13টি প্রধান বন্দর, 21টি মাঝারি ও 187টি ক্ষুদ্র বন্দর রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা সবথেকে বেশি। এর প্রধান কারণগুলি হল –
- উপকূলভাগের ভগ্ন প্রকৃতি – উপকূলভাগ ভগ্ন হলে স্বাভাবিক বন্দর ও পোতাশ্রয় গড়ে তোলার জন্য তা খুবই আদর্শ। আরব সাগরের তীরবর্তী পশ্চিম উপকূল সংলগ্ন কোঙ্কন ও মালাবার উপকূল খুবই ভগ্ন। তাই এখানে খুব সহজেই বন্দর গড়ে উঠেছে।
- উদাহরণ – কোঙ্কন উপকূলে মুম্বই, জওহরলাল নেহরু, মার্মাগাঁও, মালাবার উপকূলে কোচি, নিউ ম্যাঙ্গালোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর গড়ে উঠেছে।
- জলের গভীরতা – পশ্চিম উপকূলের মহীসোপান অংশ খাড়াভাবে গভীর সমুদ্রে নেমে গেছে। ফলে পশ্চিম উপকূলের গভীরতা পূর্ব উপকূল অপেক্ষা অনেক বেশি।
- শিল্পাঞ্চলের অবস্থান – ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর রাজ্যগুলি যেমন – গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক -এ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প গড়ে উঠেছে (যেমন – কার্পাসবয়ন, তৈল উত্তোলন, লৌহ ইস্পাত ইত্যাদি) যা প্রত্যক্ষভাবে বন্দর গড়ে ওঠার পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
- স্বাভাবিক পোতাশ্রয়ের অবস্থান – জাহাজে পণ্য বোঝাই করা, খালাস করা, জাহাজ মেরামতের জন্য বন্দরে স্বাভাবিক পোতাশ্রয় থাকা দরকার। ভারতের পশ্চিম উপকূল স্বাভাবিক পোতাশ্রয় গড়ে তোলার পক্ষে অনুকূল হওয়ায় এখানে বন্দরের সংখ্যা বেশি।
- অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা – প্রাচ্যের খনিজ তেল উত্তোলনকারী দেশের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা ও ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধায় পশ্চিম উপকূলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে।
- ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কম – বঙ্গোপসাগরের তুলনায় আরব সাগরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কম। এটি পশ্চিম উপকূলে বন্দর তৈরির অন্যতম অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ।
- ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার – ভারতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে অর্থাৎ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের আমদানি (উন্নত কার্পাস, ভেষজতেল ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, নিউজপ্রিন্ট, খনিজ তেল), শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপোরোক্ত কারণগুলি পূর্ব উপকূল অপেক্ষা পশ্চিম উপকূলে অধিক বন্দর গড়ে তুলতে উপযোগী।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা বেশি হওয়ার প্রধান কারণ কী?
ভারতের পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হল এই অঞ্চলের ভগ্ন প্রকৃতির উপকূল, যা প্রাকৃতিক বন্দর ও পোতাশ্রয় গড়ে তোলার জন্য আদর্শ।
পশ্চিম উপকূলের ভগ্ন প্রকৃতি কীভাবে বন্দর গঠনে সাহায্য করে?
পশ্চিম উপকূলের কোঙ্কন ও মালাবার অঞ্চল অত্যন্ত ভগ্ন প্রকৃতির, যার ফলে এখানে প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় ও গভীর জলের বন্দর গড়ে উঠতে সুবিধা হয়।
পশ্চিম উপকূলে জলের গভীরতা বন্দর গঠনে কীভাবে সহায়ক?
পশ্চিম উপকূলের মহীসোপান খাড়াভাবে গভীর সমুদ্রে নেমে গেছে, ফলে জাহাজ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত গভীরতা রয়েছে, যা বন্দর গঠনে সহায়ক।
পূর্ব উপকূলের তুলনায় পশ্চিম উপকূলে বন্দর বেশি কেন?
পূর্ব উপকূলের তুলনায় পশ্চিম উপকূলে ভগ্ন প্রকৃতি, গভীর জল, শিল্পাঞ্চলের ঘনত্ব, প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ের উপস্থিতি এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কম থাকায় বন্দরের সংখ্যা বেশি।
পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি ভারতের অর্থনীতিতে কী ভূমিকা পালন করে?
পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি ও কাঁচামাল আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
পশ্চিম উপকূলে কোন কোন প্রধান বন্দর অবস্থিত?
পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কিছু প্রধান বন্দর হল – মুম্বই, জওহরলাল নেহরু, মার্মাগাঁও, কোচি ও নিউ ম্যাঙ্গালোর।
পশ্চিম উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কম প্রকোপ কীভাবে বন্দর গঠনে সহায়তা করে?
আরব সাগরে বঙ্গোপসাগরের তুলনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কম, ফলে পশ্চিম উপকূলে বন্দরগুলি নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে গড়ে উঠতে পারে।
শিল্পাঞ্চলের অবস্থান কীভাবে পশ্চিম উপকূলে বন্দর গঠনে প্রভাব ফেলে?
পশ্চিম উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে (গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক) শিল্পের ব্যাপক বিকাশ (তৈলশোধন, ইস্পাত, বস্ত্রশিল্প) বন্দরগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি বৈদেশিক বাণিজ্যে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
এই বন্দরগুলি খনিজ তেল, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, কৃষিজ পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যা বৈদেশিক বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করে।
পূর্ব উপকূলের তুলনায় পশ্চিম উপকূলে বন্দর বেশি সফল কেন?
পশ্চিম উপকূলের প্রাকৃতিক সুবিধা (গভীর জল, ভগ্ন উপকূল), শিল্পোন্নয়ন, যোগাযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা পূর্ব উপকূলের তুলনায় বেশি থাকায় এখানকার বন্দরগুলি বেশি সফল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের পূর্ব উপকূল অপেক্ষা পশ্চিম উপকূলে বন্দরের সংখ্যা বেশি কেন ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন