এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।
ভারতের মরু অঞ্চল –
অবস্থান – আরাবল্লি পর্বত এবং সিন্ধু-শতদ্রু বিধৌত সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত থর মরুভূমি অঞ্চলকেই ভারতের মরু অঞ্চল বলা হয়। রাজস্থান রাজ্যের জয়সলমীর, বিকানীর ও যোধপুর এবং পাকিস্তানের খয়েরপুর ও বাহাওয়ালপুর অঞ্চলে থর মরুভূমি বিস্তার লাভ করেছে।

সীমা – সমগ্র রাজস্থান রাজ্যের প্রায় \( \frac13 \) অংশ জুড়ে বিস্তৃত মরু অঞ্চলের উত্তরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা, দক্ষিণে গুজরাট, পূর্বে আরাবল্লি পর্বতশ্রেণি এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের মরু অঞ্চল অবস্থিত।
বাগার অঞ্চল –
থর মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে বালুকাময় অঞ্চলকে বাগার বলে। এখানকার কোনো কোনো স্থানে জলসেচের দ্বারা কৃষিকার্য হলেও বেশির ভাগ স্থানই ঘাসে ঢাকা। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলে কৃষির প্রসারে সাহায্য করেছে।
রোহি –
বাগার অঞ্চলের পশ্চিমে পলিগঠিত প্লাবনভূমিকে রোহি বলে। আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিম ঢালে বেশ কয়েকটি ছোটো ছোটো নদী প্রবাহিত হয়ে মরুভূমিতে শুকিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে নদীগুলি প্লাবিত হওয়ায় উর্বর প্লাবনভূমির সৃষ্টি করেছে।
ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল –
রোহি অঞ্চলের বালুকাময় অঞ্চলকে ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল বলে। এখান থেকে প্রকৃত মরুভূমি শুরু হয়েছে।
হামাদা –
ক্ষুদ্র মরু অঞ্চলের পশ্চিমে বালুকাময় নরম শিলাস্তর দ্বারা গঠিত পাথুরে বা প্রস্তরময় অঞ্চলকে স্থানীয় ভাবে হামাদা বলে।
মরুস্থলী বা বালুকাময় অঞ্চল –
এই অঞ্চলের একেবারে পশ্চিমের প্রকৃত মরুভূমিকে মরুস্থলী বলে। বৃষ্টিহীন, উদ্ভিদ বিরল, উষ্ণ, শুষ্ক, বালুকাময় এই মরুস্থলী অঞ্চলটি থর মরুভূমি নামে পরিচিত। এটি ভারতীয় সীমানা ছাড়িয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। এই অংশের চলমান বালিয়াড়িগুলিকে প্রিয়ান বলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের মরু অঞ্চল কোথায় অবস্থিত?
ভারতের মরু অঞ্চল (থর মরুভূমি) রাজস্থানের জয়সলমীর, বিকানীর ও যোধপুর জেলায় এবং পাকিস্তানের খয়েরপুর ও বাহাওয়ালপুর অঞ্চলে বিস্তৃত। এটি আরাবল্লি পর্বত ও সিন্ধু-শতদ্রু সমভূমির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
থর মরুভূমির সীমানা কী?
1. উত্তরে – পাঞ্জাব ও হরিয়ানা।
2. দক্ষিণে – গুজরাট।
3. পূর্বে – আরাবল্লি পর্বতশ্রেণি।
4. পশ্চিমে – পাকিস্তানের মরু অঞ্চল।
বাগার অঞ্চল কী?
থর মরুভূমির পূর্বে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে বালুকাময় অঞ্চলকে বাগার বলে। এখানে জলসেচের মাধ্যমে কিছু কৃষিকাজ হয়, তবে বেশিরভাগ এলাকা ঘাসে ঢাকা। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে সাহায্য করেছে।
রোহি অঞ্চল কী?
বাগারের পশ্চিমে পলি দ্বারা গঠিত প্লাবনভূমিকে রোহি বলে। আরাবল্লির পশ্চিম ঢালের নদীগুলি মরুভূমিতে শুকিয়ে যায়, কিন্তু বৃষ্টিপাতের সময় প্লাবিত হয়ে উর্বর ভূমি সৃষ্টি করে।
ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল কী?
রোহি অঞ্চলের পশ্চিমে বালুকাময় এলাকাকে ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল বলে। এখান থেকেই প্রকৃত মরুভূমি শুরু হয়।
হামাদা কী?
ক্ষুদ্র মরু অঞ্চলের পশ্চিমে পাথুরে ও বালুকাময় শিলাস্তর দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে স্থানীয় ভাষায় হামাদা বলে।
মরুস্থলী বা প্রকৃত মরুভূমি কাকে বলে?
থর মরুভূমির একেবারে পশ্চিমের শুষ্ক, বালুকাময় ও উদ্ভিদবিরল অঞ্চলকে মরুস্থলী বলে। এখানে চলমান বালিয়াড়িগুলিকে প্রিয়ান বলা হয়।
থর মরুভূমির জলবায়ু কেমন?
1. অত্যন্ত শুষ্ক ও গরম (গ্রীষ্মে তাপমাত্রা 45°C-50°C পর্যন্ত পৌঁছায়)।
2. বৃষ্টিপাত কম (বছরে 100-150 মিমি)।
3. শীতকালে শীতল (তাপমাত্রা 5°C-10°C পর্যন্ত নামে)।
থর মরুভূমির প্রধান উদ্ভিদ ও প্রাণী কী?
1. উদ্ভিদ – খেজুর গাছ, বাবলা, ক্যাকটাস, সেঁজুই, ক্যান্ডি (এঁটেল ঘাস)।
2. প্রাণী – মরু শিয়াল, বুনো খরগোশ, কালো হরিণ, গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড (পাখি), বিভিন্ন সাপ ও গিরগিটি।
থর মরুভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
1. খনিজ সম্পদ – জিপসাম, চুনাপাথর, লবণ।
2. পর্যটন – জয়সলমীর, বিকানীর ও যোধপুরের ঐতিহাসিক স্থান ও মরুভূমি সাফারি।
3. কৃষি – জলসেচের মাধ্যমে বাজরা, গম, তুলা চাষ হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন