ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল-
ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল-
Contents Show

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল –

অবস্থান – ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমির পূর্ব ও পশ্চিমদিকে যথাক্রমে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূল রেখা বরাবর উপকূলীয় সমভূমি গঠিত হয়েছে। পূর্বদিকে সুবর্ণরেখা নদী থেকে শুরু করে পশ্চিমে কচ্ছ উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত এই সমভূমিটি দক্ষিণ দিকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপে এসে মিলিত হয়েছে। ভারতের উপকূল রেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 3100 কিলোমিটার।

উৎপত্তি – চ্যুতির দ্বারা সৃষ্ট অবনমিত স্থানে বালি, পলি সঞ্চিত হয়ে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি গড়ে উঠেছে ও ভূ-আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত উত্থিত স্থানে সমুদ্রতরঙ্গ ও নদীবাহিত পলি, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে পূর্ব উপকুলীয় সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

ভূপ্রাকৃতিক শ্রেণিবিভাগ – ভূপ্রাকৃতিক পার্থক্য অনুসারে ভারতের উপকূলীয় সমভূমিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

  1. পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি।
  2. পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি –

বিস্তার – গুজরাটের কচ্ছের রান থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত। এই সমভূমির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 1600 কিলোমিটার।

ভূপ্রকৃতি – এই উপকূলীয় সমভূমির পূর্বে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং পশ্চিমে আরব সাগর অবস্থিত। কেরল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি বরাবর এই উপকূলীয় সমভূমি প্রসারিত হয়েছে।

শ্রেণিবিভাগ – সমগ্র পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমিকে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে 6টি উপবিভাগে ভাগ করা যায়, যথা –

  • কচ্ছ উপদ্বীপ – কচ্ছ শব্দের অভিধানগত অর্থ জলাময় দেশ এবং রান শব্দের অর্থ কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত নীচু জমি। গুজরাটে কচ্ছ উপসাগরের উত্তরদিকে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত। এখানে বেলেপাথরে গঠিত পাহাড় দেখা যায়।
  • কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ – কচ্ছ উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ অবস্থিত যা নবীন শিলা ও লাভা শিলা দ্বারা গঠিত। এই উপদ্বীপের মাঝ বরাবর রয়েছে গির, গিরনার ও মাণ্ডব পাহাড়।
  • গুজরাট সমভূমি – কাথিয়াবাড়ের দক্ষিণ সীমায় গুজরাট সমভূমি অবস্থিত। সবরমতী, মাহী, শত্রুঞ্জয় প্রভৃতি নদীগুলির পলির সঞ্চয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
  • কোঙ্কণ উপকূল – মহারাষ্ট্র রাজ্যের পশ্চিমে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের আরও পশ্চিমে আরব সাগরের উপকূল রেখা বরাবর দমন থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় 500 কিমি।
  • কর্ণাটক উপকূল – কোঙ্কণ উপকূলের দক্ষিণে এবং কর্ণাটক রাজ্যের পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূলরেখা বরাবর কর্ণাটক উপকূল অবস্থিত। সংকীর্ণ নদী উপত্যকা, উপহ্রদ, ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি প্রভৃতির জন্য এই উপকূলের ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য এসেছে।
  • মালাবার উপকূল – ম্যাঙ্গালোর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত মালাবার উপকূল প্রসারিত। এটি কেরল রাজ্যের পশ্চিমে আরব সাগরের উপকূল বরাবর অবস্থান করছে। এই উপকূলভাগে বালিয়াড়ি (স্থানীয় নাম থেড়িস) এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জলাভূমি (স্থানীয় নাম কয়াল) দেখা যায়।
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি –

বিস্তার – এই উপকূলীয় সমভূমিটি সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত, যার দৈর্ঘ্য প্রায় 1500 কিলোমিটার।

ভূপ্রকৃতি – এই উপকূলীয় সমভূমির পশ্চিমে আছে পূর্বঘাট পর্বতমালা এবং পূর্বে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এই উপকূলীয় সমভূমি ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্য জুড়ে অবস্থিত।

শ্রেণিবিভাগ – আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে সমগ্র পূর্ব উপকূলীয় সমভূমিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. উত্তর সরকার উপকূল।
  2. করমণ্ডল উপকূল।

উত্তর সরকার উপকূল – ওড়িশার সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে  অন্ধ্রের কৃষ্ণা নদীর মোহানা পর্যন্ত উপকূলভাগ উত্তর সরকার উপকূল নামে পরিচিত। এই উপকূল দুটি ভাগে বিভক্ত –

  • ওড়িশা বা উৎকল উপকূল – সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত উপকূল ওড়িশা উপকূল নামে পরিচিত। মহানদী, ব্রাহ্মণী, বৈতরণী -এই তিনটি নদীর বদ্বীপ নিয়ে ওড়িশা উপকূল গঠিত। ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ চিল্কা এই উপকূলীয় সমভূমিতে অবস্থান করছে।
  • অন্ধ্র উপকূল – ওড়িশা উপকূলের দক্ষিণদিকে চিল্কা হ্রদ থেকে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ, গোদাবরী নদীর বদ্বীপ নিয়ে অন্ধ্র উপকূল গঠিত। কোলেবু হ্রদ, পুলিকট হ্রদ এই উপকূলীয় সমভূমিতে অবস্থান করছে।

করমণ্ডল উপকূল – কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত তামিলনাড়ু রাজ্যের পূর্বদিকের উপকূলভাগ করমণ্ডল উপকূল নামে পরিচিত। কাবেরী নদী ও ভাইগাই নদী এই উপকূলীয় সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই উপকূলের থাঞ্জাভুর নামক স্থানে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল কী?

ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমির পূর্ব ও পশ্চিমে যথাক্রমে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত নিম্নভূমিকে উপকূলীয় সমভূমি বলে। এটি প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত — পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমির মোট দৈর্ঘ্য কত?

ভারতের উপকূল রেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 3100 কিলোমিটার।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি কোথায় অবস্থিত?

এটি আরব সাগরের উপকূল বরাবর কচ্ছ উপদ্বীপ থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1600 কিলোমিটার।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির ভূপ্রকৃতি কেমন?

1. পূর্বে পশ্চিমঘাট পর্বত, পশ্চিমে আরব সাগর।
2. কেরল, কর্ণাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাট রাজ্যগুলি জুড়ে বিস্তৃত।
3. লবণাক্ত জলাভূমি (রান), বালিয়াড়ি, উপহ্রদ (কয়াল) দেখা যায়।

পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির প্রধান উপবিভাগগুলি কী কী?

1. কচ্ছ উপদ্বীপ (গুজরাট)।
2. কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ (গির, গিরনার পাহাড়)।
3. গুজরাট সমভূমি (সবরমতী, মাহী নদীর পলিভূমি)।
4. কোঙ্কণ উপকূল (মহারাষ্ট্র ও গোয়া)।
5. কর্ণাটক উপকূল (সংকীর্ণ নদী উপত্যকা)।
6. মালাবার উপকূল (কেরল, বালিয়াড়ি ও কয়াল)।

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি কোথায় অবস্থিত?

এটি বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর সুবর্ণরেখা নদী থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1500 কিলোমিটার।

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির ভূপ্রকৃতি কেমন?

1. পশ্চিমে পূর্বঘাট পর্বত, পূর্বে বঙ্গোপসাগর।
2. ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু রাজ্যগুলি জুড়ে বিস্তৃত।
3. বদ্বীপ, উপহ্রদ (চিল্কা, পুলিকট), নদীবাহিত পলিভূমি দেখা যায়।

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির প্রধান উপবিভাগগুলি কী কী?

উত্তর সরকার উপকূল –
1. ওড়িশা উপকূল (চিল্কা হ্রদ, মহানদী বদ্বীপ)।
2. অন্ধ্র উপকূল (কৃষ্ণা-গোদাবরী বদ্বীপ, পুলিকট হ্রদ)।
3. করমণ্ডল উপকূল (তামিলনাড়ু, কাবেরী বদ্বীপ)।

ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ কোনটি এবং এটি কোথায় অবস্থিত?

চিল্কা হ্রদ (ওড়িশা উপকূলে অবস্থিত)।

মালাবার উপকূলের বৈশিষ্ট্য কী?

1. কেরল রাজ্যে অবস্থিত।
2. বালিয়াড়ি (থেড়িস) ও জলাভূমি (কয়াল) রয়েছে।
3. ম্যাঙ্গালোর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

করমণ্ডল উপকূলের বৈশিষ্ট্য কী?

1. তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত।
2. কাবেরী নদীর বদ্বীপ রয়েছে।
3. থাঞ্জাভুরে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা-

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি-

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চল-

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।

দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।