এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব কীরূপ?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব কীরূপ?
অথবা, ভারতের জনসংখ্যার বণ্টনে যে-কোনো দুটি প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব আলোচনা করো।
ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভূপ্রকৃতি – জনবণ্টনে ভূপ্রকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। ভূমির উচ্চতা, বন্ধুরতা, ঢালের পরিমাণ ও প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জনবসতি গড়ে ওঠে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচিত হল –
- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে খাড়া ঢাল, ধস প্রবণতা, উর্বর মৃত্তিকার অভাব, বাসযোগ্য সমভূমির অভাব, পরিবহণ ও ভারী শিল্প গড়ে তোলার অসুবিধা থাকায় ভারতের হিমালয়, পশ্চিমঘাট, পূর্বঘাট, আরাবল্লি, বিন্ধ্য, সাতপুরা, মহাদেব, মহাকাল পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল।
- মালভূমি অঞ্চলে অনুর্বর মৃত্তিকা, কৃষিকাজের প্রতিকূলতা ও পরিবহণে অনগ্রসরতা থাকলেও খনিজ ও শিল্প সমৃদ্ধির জন্য জনবসতির ঘনত্ব মাঝারি ধরনের। ছোটোনাগপুর ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমিতে জনবসতি মাঝারি ধরনের।
- সমভূমি অঞ্চলে জীবনধারণের সব অনুকূল অবস্থাসমূহ বর্তমান থাকায় পৃথিবীর প্রায় 90% মানুষ সমভূমিতে বসবাস করে। সমভূমির বিস্তীর্ণ সমতলক্ষেত্র, উর্বর কৃষিজমি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতি উপাদানগুলির কারণে মানুষের সর্বাধিক বিকাশ ঘটে। ভারতের গঙ্গা-সিন্ধু-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত সমভূমি অঞ্চলটি ভারতের সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চল।
জলবায়ু – জনসংখ্যার বণ্টনে জলবায়ুর গুরুত্ব অপরিসীম। স্থানীয় উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বজ্রঝড়, শীতের প্রকোপ প্রভৃতি দ্বারা জনবণ্টন প্রভাবিত হয়। যেমন – উষ্ণ মরু অঞ্চলে (থর) চরমভাবাপন্ন জলবায়ু, প্রখর উষ্ণতা, পার্বত্য অঞ্চলে হিমশীতল জলবায়ু ও বৃষ্টিবহুল পরিবেশের কারণে জনবসতি বিরল। অন্যদিকে উপকূলীয় ও সমভূমি অঞ্চলের সমভাবাপন্ন মনোরম জলবায়ুর কারণে জনঘনত্ব অধিক।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতির প্রভাব কী?
ভূপ্রকৃতি জনবসতির ঘনত্বকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
1. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল (যেমন – হিমালয়, পশ্চিমঘাট) – খাড়া ঢাল, কৃষির অনুপযোগী মাটি ও পরিবহণ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে জনবসতি কম।
2. মালভূমি অঞ্চল (ছোটোনাগপুর, দাক্ষিণাত্য) – খনিজ সম্পদ ও শিল্পের কারণে মাঝারি জনঘনত্ব।
3. সমভূমি অঞ্চল (গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি) – উর্বর মাটি, উন্নত যোগাযোগ ও কৃষি সুবিধার জন্য সর্বাধিক জনবসতি।
জলবায়ু কীভাবে ভারতের জনবণ্টনকে প্রভাবিত করে?
জলবায়ুর বৈচিত্র্য জনবসতির ঘনত্ব নির্ধারণ করে।
1. উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু (পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা) – কৃষি-বান্ধব হওয়ায় জনঘনত্ব বেশি।
2. শুষ্ক মরু জলবায়ু (রাজস্থানের থর) – জলের অভাব ও কৃষি অনুপযোগীতার কারণে জনবসতি কম।
3. অতিবৃষ্টি অরণ্য অঞ্চল (আন্দামান, উত্তর-পূর্ব) – অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও যোগাযোগের অসুবিধার জন্য জনবিরল।
ভারতে জনবসতির সর্বাধিক ঘনত্ব কোথায় দেখা যায় এবং কেন?
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি (উত্তপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ) সর্বাধিক জনবহুল, কারণ –
1. উর্বর পলিমাটি ও কৃষি সুবিধা।
2. নদী ব্যবস্থা ও উন্নত পরিবহণ।
3. শিল্প ও নগরায়ণের কেন্দ্রবিন্দু।
কোন ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে ভারতে জনবসতি সবচেয়ে কম?
1. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল (জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল, অরুণাচল) – উচ্চতা, প্রতিকূল আবহাওয়া ও কৃষির অযোগ্যতা।
2. মরু অঞ্চল (রাজস্থানের থর) – জলের অভাব ও চরম তাপমাত্রা।
জলবায়ু জনবসতিকে কীভাবে প্রভাবিত করে? যেকোনো দুটি উদাহরণ দাও।
জলবায়ু জনবসতিকে প্রভাবিত করে তার উদাহরণ হলো –
1. কেরালা – সমুদ্রসংলগ্ন আর্দ্র জলবায়ু ও কৃষি-বান্ধব পরিবেশ জনঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
2. লাদাখ – শীতল মরু জলবায়ু ও অক্সিজেনের স্বল্পতায় জনবসতি কম।
“ভারতের জনবণ্টনে প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব অপরিসীম” – ব্যাখ্যা করো।
প্রাকৃতিক কারণ (ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, জলসরবরাহ) মানুষের বসতি, কৃষি, অর্থনীতি ও জীবনযাত্রাকে নির্ধারণ করে। যেমন –
1. নদী উপত্যকা – জীবনধারণের সহজলভ্যতা।
2. মরু/পর্বত – প্রতিকূল পরিবেশ জনবসতি হ্রাস করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব কীরূপ?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন