এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভরত্রুটি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভরত্রুটি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভরত্রুটি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
ভরবিচ্যুতি বা ভরত্রুটি (Mass defect) – কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে। নিউক্লিয়াসের মোট ভর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের মোট ভরের সমান। কিন্তু দেখা গেছে নিউক্লিয়াসের স্থির ভর (M) নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনগুলির মোট ভরের থেকে কম হয়। ভরের এই হ্রাস বা পার্থক্যকে ভরত্রুটি (Δm) বলে। নিউক্লিয়াসের স্থির ভর ও এতে উপস্থিত নিউক্লিয়নগুলির মোট ভরের পার্থক্যকে ভরত্রুটি বলে।
ব্যাখ্যা – ধরা যাক, কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা Z এবং ভরসংখ্যা A।
সুতরাং, ওই মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা = Z এবং নিউট্রন সংখ্যা = A – Z
যদি একটি প্রোটনের ভর mp এবং একটি নিউট্রনের ভর mn হয় তবে পরমাণুটির নিউক্লিয়াসের ভর = Zmp + (A – Z) mn।
যদি পরমাণুটির নিউক্লিয়াসের স্থির ভর (পরীক্ষালব্ধ ভর) M হয় তবে ভরত্রুটি (Δm) = [Zmp + (A – Z)mn] – M
উদাহরণ – হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 2টি প্রোটন ও 2টি নিউট্রন আছে।
হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভর = 2টি প্রোটনের ভর + 2টি নিউট্রনের ভর।
= 2 × 1.00728 amu + 2 × 1.00867 amu
= 4.0319 amu
∴ হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসের পরীক্ষাভিত্তিক ভর = 4.0015 amu
∴ ভরত্রুটি (Δm) = নিউক্লিয়নের মোট ভর নিউক্লিয়াসের ভর
বা, ভরত্রুটি (Δm) = (4.0319 – 4.0015) amu
বা, ভরত্রুটি (Δm) = 0.0304 amu।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভরত্রুটি কেন হয়? এই ভর কমে যায় কোথায়?
ভরত্রুটি হওয়ার মূল কারণ হল নিউক্লিয় বল (Nuclear Force)। নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকা প্রোটনগুলি একে অপরকে বিকর্ষণ করে (ধনাত্মক চার্জের কারণে), কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী নিউক্লিয় বল তাদেরকে একত্রে বেঁধে রাখে। এই বন্ধন শক্তি তৈরি করার জন্য শক্তি খরচ হয়।
আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E = mc² অনুসারে, ভর এবং শক্তি পরস্পর রূপান্তরযোগ্য। নিউক্লিয়নগুলি (প্রোটন ও নিউট্রন) যখন একটি শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সেই বন্ধন শক্তি তৈরি করতে কিছু ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরিত ভরের পরিমাণই হল ভরত্রুটি (Δm)। তাই ভরটি আসলে “কোথাও যায়নি”, এটি নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি (Binding Energy) হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।
বন্ধন শক্তি (Binding Energy) কাকে বলে? ভরত্রুটির সাথে এর সম্পর্ক কী?
কোনো নিউক্লিয়াসকে তার উপাদান নিউক্লিয়নগুলিতে (প্রোটন ও নিউট্রন) সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে সেই নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি বলে।
সম্পর্ক: ভরত্রুটি এবং বন্ধন শক্তি একই সিক্কার দুই পিঠ। আইনস্টাইনের E = mc² সূত্র দ্বারা এরা সরাসরি সম্পর্কিত।
বন্ধন শক্তি (E) = ভরত্রুটি (Δm) × c² (যেখানে c হল আলোর বেগ)
উদাহরণ – হিলিয়ামের ক্ষেত্রে, ভরত্রুটি Δm = 0.0304 amu।
এই ভরত্রুটিকে শক্তিতে রূপান্তর করলে যে শক্তি পাওয়া যাবে, সেটিই হল হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি।
ধ্রুবক –
1 amu = 931.5 MeV (প্রায়)
সুতরাং, E = 0.0304 × 931.5 ≈ 28.3 MeV।
ভরত্রুটি কী শুধু নিউক্লিয়াসের জন্য প্রযোজ্য, না পরমাণুর জন্যও প্রযোজ্য?
ভরত্রুটির ধারণা মূলত নিউক্লিয়াসের জন্য প্রযোজ্য। কারণ ইলেকট্রনের ভর নগণ্য এবং নিউক্লিয়াসের তুলনায় এর বন্ধন শক্তি খুবই দুর্বল। তাই নিউক্লিয়াস গঠনের সময় যে ভর হারায় এবং যে বিপুল শক্তি নির্গত হয়, তা ইলেকট্রনগুলিকে তাদের কক্ষপথে আবদ্ধ করার শক্তির তুলনায় বহু গুণ বেশি।
তবে, যদি পুরো পরমাণুর (নিউক্লিয়াস + ইলেকট্রন) ভরত্রুটি হিসাব করতে চান, তাহলে আপনাকে নিউক্লিয়াস গঠনের পাশাপাশি ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের সাথে আবদ্ধ হওয়ার সময় যে ভর-শক্তি রূপান্তর ঘটে সেটিও বিবেচনা করতে হবে, যদিও এর মান খুবই কম।
ভরত্রুটির গুরুত্ব বা প্রয়োগ কী?
ভরত্রুটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
1. নিউক্লিয়ার স্থিতিশীলতা – যার বন্ধন শক্তি বেশি (অর্থাৎ, ভরত্রুটি বেশি), সেই নিউক্লিয়াস বেশি স্থিতিশীল।
2. নিউক্লিয়ার শক্তি – নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন বা শোষণের মূল নীতিই হল ভরত্রুটি। বিভাজন (Fission) বা সংযোজন (Fusion) প্রক্রিয়ায় নতুন নিউক্লিয়াসগুলির মোট ভরত্রুটি আগের চেয়ে বেশি হয়। এই “অতিরিক্ত” ভরত্রুটি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা আমরা পারমাণবিক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করি।
3. সূর্য ও নক্ষত্রের শক্তির উৎস – সূর্যে হাইড্রোজেন ফিউশন হয়ে হিলিয়াম তৈরি হয়। এই ফিউশন প্রক্রিয়ায় প্রচুর ভরত্রুটি ঘটে, যা E = mc² অনুসারে বিপুল তাপ ও আলোতে রূপান্তরিত হয়।
ভরত্রুটি কী সব নিউক্লিয়াসের জন্য ধনাত্মক হয়?
হ্যাঁ, স্থিতিশীল সকল নিউক্লিয়াসের জন্য ভরত্রুটি (Δm) ধনাত্মক হয়। অর্থাৎ, নিউক্লিয়াসের ভর সবসময় তার উপাদান নিউক্লিয়নগুলির পৃথক ভরের যোগফলের থেকে কম হয়।
যদি ভরত্রুটি ঋণাত্মক বা শূন্য হত, তাহলে নিউক্লিয়াসটি গঠিত হত না, কারণ এটি স্থিতিশীল হত না এবং আলাদা হয়ে যেত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভরত্রুটি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভরত্রুটি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন