ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রি হিমালয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করো

Rahul

আজকের আলোচনার বিষয় হলো হিমাদ্রি হিমালয়ের ভূপ্রকৃতিগত গুরুত্ব। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ অধ্যায়ের ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগে এই প্রশ্নটি বারবার দেখা যায়।

ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রি হিমালয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করো

হিমাদ্রি হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক গুরুত্ব –

ভারতের উত্তর সীমায় হিমালয় পর্বতমালা উত্তর-দক্ষিণে চারটি প্রায়-সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি নিয়ে গঠিত। এগুলি হল —

  • শিবালিক বা বহিঃহিমালয়,
  • হিমাচল বা মধ্য হিমালয়,
  • হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় এবং
  • টেথিস বা ট্রান্স হিমালয় পর্বতশ্রেণি

ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রির গুরুত্ব অপরিসীম।

  • জলবায়ুগত গুরুত্ব – হিমাদ্রির গড় উচ্চতা প্রায় 6000 মিটার এবং প্রসার (চওড়া) প্রায় 120 থেকে 190 কিলোমিটার। এটি উঁচু প্রাকৃতিক প্রাচীরের মতো ভারতের উত্তরে দণ্ডায়মান থাকায় শীতকালে উত্তরদিক থেকে আগত শীতল সাইবেরীয় বাতাস এই পর্বতে বাধা পায়। আবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখানেই বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৌসুমি বৃষ্টি ঘটাতে সাহায্য করে।
  • সর্বোচ্চ শৃঙ্গসমূহের অবস্থান – মাউন্ট এভারেস্ট (উচ্চতা ৪848 মিটার* পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি), মাকালু (8481 মি), ধবলগিরি (8172 মি), নাঙ্গা পর্বত (8126 মি), নন্দাদেবী (7816 মি) প্রভৃতি বরফাবৃত শৃঙ্গসমূহ হিমাদ্রিতেই অবস্থিত।
  • হিমবাহ ও নিত্যবহ নদীর সৃষ্টি – অধিক উচ্চতা (প্রায় 6000 মি) এবং কম উন্নতার কারণে এখানে অনেক হিমবাহের সৃষ্টি হয়েছে (গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, জেমু প্রভৃতি)। এগুলি থেকে আবার বহু নিত্যবহ নদীর সৃষ্টি হয়েছে যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলসেচ তথা কৃষির উন্নতিতে সাহায্য করেছে।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহায়তা – হিমাদ্রির উচ্চ অংশে অনেকগুলি গিরিপথ আছে। যেমন — বরলাচা লা, সিপকিলা, জোজিলা, লিপুলেখ, নাথুলা, জেলেপ লা প্রভৃতি। এইসব গিরিপথ হিমালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় সহায়তা করে।
  • উর্বর মৃত্তিকার উৎসস্থল – হিমাদ্রির বিভিন্ন অংশ থেকে উৎপন্ন অসংখ্য নদনদীর পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমেই উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ পলিগঠিত সমভূমি গঠিত হয়েছে।
  • পর্যটন শিল্পের প্রসারে সহায়তা – হিমাদ্রি পর্বতশ্রেণির প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম। ফলে এখানে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
  • সামরিক গুরুত্ব – এই পর্বতশ্রেণি প্রাকৃতিক বাধারূপে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভারতকে অনেকাংশে রক্ষা করে।
  • অন্যান্য গুরুত্ব – সরলবর্গীয় বনভূমির কাষ্ঠ সম্পদ আহরণ, পশুপালন, সূক্ষ্ম শিল্পের বিকাশ (শাল উৎপাদন) প্রভৃতি ক্ষেত্রে হিমাদ্রির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রি হিমালয় ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থার উৎস, খনিজ সম্পদের উৎস, জীববৈচিত্র্য এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Please Share This Article

Related Posts

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো -

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।