এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?
আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ ছিল সেগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর প্রতিষ্ঠা –
1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান সাধক জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইনস্টিটিউশনের আদলে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেন – “আজ যাহা প্রতিষ্ঠা করিলাম তাহা মন্দির, কেবলমাত্র পরীক্ষাগার নহে।”
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর উদ্দেশ্য –
এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং জগদীশচন্দ্র লিখেছেন – “এর মুখ্য উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো।” তরুণতর বিজ্ঞানীদের সামনে বিশ্বমানের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করে দিতে তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্রতী হন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত আবিষ্কার হবে তার সুফলে প্রত্যেকের অধিকার থাকবে।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর বহুমুখী বিজ্ঞানচর্চা –
বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স প্রভৃতি বিভাগ খোলা হয়।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর পরিচালক সমিতি –
বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার পর তার পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতির সদস্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং স্বয়ং জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার –
বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর 1918 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর মন্তব্য –
ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা তথা নিত্য-নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দির নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আজও এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্ররূপে সগৌরবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বসু বিজ্ঞান মন্দির কী এবং কে এটি প্রতিষ্ঠা করেন?
বসু বিজ্ঞান মন্দির হল একটি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা 1917 সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন। এটি রয়্যাল ইনস্টিটিউশন, লন্ডনের আদলে তৈরি করা হয়েছিল।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা ও জ্ঞান প্রসার করা। জগদীশচন্দ্র বসু চেয়েছিলেন যে এখানকার আবিষ্কারগুলি যেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কী ধরনের গবেষণা হত?
এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োফিজিক্স -এর মতো শাখায় গবেষণা চলত।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিচালনা কমিটিতে কারা ছিলেন?
পরিচালনা কমিটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং জগদীশচন্দ্র বসু নিজে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার কী?
1918 সালে জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে এবং তারা উত্তেজনা ও ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বৈশিষ্ট্য কী ছিল যা তাকে অনন্য করে তুলেছিল?
এটি ছিল ভারতের প্রথম মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি, যা ঔপনিবেশিক আমলে স্থানীয় বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ দিয়েছিল।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বর্তমান অবস্থা কী?
আজও বসু বিজ্ঞান মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে এবং আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় অবদান রাখছে।
জগদীশচন্দ্র বসু কেন এটিকে ‘মন্দির’ বলেছিলেন?
কারণ এটি শুধু একটি পরীক্ষাগার ছিল না, বরং বিজ্ঞানের সাধনা ও জ্ঞানের পূজার একটি পবিত্র স্থান হিসেবে তিনি এটিকে দেখতেন।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় বিজ্ঞান জগতে কী প্রভাব ফেলেছিল?
এটি ভারতে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং পরবর্তীকালে অনেক বিজ্ঞানীকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের দর্শন কী ছিল?
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের দর্শন ছিল “বিজ্ঞান সর্বজনীন এবং এর সুফল সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।”
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন