বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে 'জাতীয় শিক্ষা পরিষদ' -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?
Contents Show

বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু থেকেই একদিকে যেমন ছিল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার প্রবণতা, তেমনি প্রয়াস ছিল জাতীয় উদ্যোগে স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এরই সূত্র ধরে স্বদেশি বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।

‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর প্রতিষ্ঠা –

1906 খ্রিস্টাব্দে রাসবিহারী ঘোষের সভাপতিত্বে এবং রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি প্রমুখ শিক্ষাব্রতীর অর্থানুকূল্যে কলকাতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর উদ্দেশ্য –

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কর্মকান্ড –

কোনোপ্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই জাতীয় শিক্ষা পরিষদের পরিচালনায় বাংলা ও বাংলার বাইরে শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। প্রথমটি হল সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যার জন্য ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ আর দ্বিতীয়টি হল কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’। কারিগরি শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ উদ্যোগ নেয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে এই পরিষদ। সুরেন্দ্রনাথ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকে ‘স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম বৃহৎ গঠনমূলক প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর ব্যর্থতা –

বিপুল উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত চরম অর্থাভাব এবং সরকারি চাকুরিতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির মূল্যহীনতা একে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে।

‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর মন্তব্য –

স্বদেশি যুগের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিঃসন্দেহে অঙ্কুরিত হয়েছে স্বদেশবোধ ও জাতীয়তা। ঔপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কখন এবং কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

1906 সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল স্বদেশি ভাবধারায় বিজ্ঞান, কারিগরি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রসার।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতারা কারা ছিলেন?

রাসবিহারী ঘোষ (সভাপতি), রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে এবং অর্থানুকূল্যে এটি গড়ে ওঠে।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –
1. বিদেশি নিয়ন্ত্রণমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।
2. বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
3. মাতৃভাষা (বাংলা) মাধ্যমে শিক্ষাদান।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কী ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছিল?

1. বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ: সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যার জন্য।
2. বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট: কারিগরি শিক্ষার জন্য।
3. এছাড়া বাংলা ও অন্যান্য অঞ্চলে শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।

কারিগরি শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা কী ছিল?

পরিষদ কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন করার উদ্যোগ নেয় এবং বাংলা মাধ্যমে এই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ সম্পর্কে কী বলেছেন?

তিনি একে “স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম বৃহৎ গঠনমূলক প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন ব্যর্থ হয়?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হয় কারণ –
1. চরম অর্থাভাব এবং সরকারি সাহায্যের অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলি টিকতে পারেনি।
2. সরকারি চাকরিতে এই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির স্বীকৃতি না থাকা

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প হিসেবে স্বদেশি চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও বিজ্ঞানচর্চাকে প্রসারিত করেছিল। যদিও এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তবুও এটি পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কি শুধু বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল?

না, এটি বাংলার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল, তবে মূল কার্যক্রম কলকাতাকেন্দ্রিক ছিল।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ধারণার প্রভাব আছে কি?

হ্যাঁ, এর মাতৃভাষায় শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এবং স্বদেশি চেতনা পরবর্তীতে ভারতের শিক্ষানীতিতে প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ -এর কীরূপ ভূমিকা ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

তেভাগা আন্দোলন কাকে বলে এবং এর মূল দাবি কী ছিল? তেভাগা আন্দোলনের নাম 'তেভাগা' কেন হয়েছিল?

তেভাগা আন্দোলন কাকে বলে এবং এর মূল দাবি কী ছিল? তেভাগা আন্দোলনের নাম ‘তেভাগা’ কেন হয়েছিল?

'একা' আন্দোলন শুরু হয় কেন? 'একা' আন্দালনে আন্দোলনকারীদের শপথ কী ছিল?

‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন? ‘একা’ আন্দালনে আন্দোলনকারীদের শপথ কী ছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় কেন? বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারী সমাজ কীভাবে যোগদান করেছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় কেন? বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারী সমাজ কীভাবে যোগদান করেছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর