এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন?

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন বিরসা মুন্ডা। তিনি নিজেকে ঐশী শক্তির অধিকারী ‘ধরতি আবা’ বা ধরণীর পিতা বলে ঘোষণা করেন। ব্রিটিশের কর্তৃত্বমুক্ত স্বাধীন মুন্ডা রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি মুন্ডাদের সংগঠিত করেন। শেষপর্যন্ত 1900 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি বন্দি হন ও কলেরা রোগে মৃত্যু বরণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে আদিবাসী জনজাতির প্রথম সারির নেতারূপে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মুন্ডা বিদ্রোহ কারন ও ফলাফল আলোচনা করো।

উপজাতি উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে মুন্ডা বিদ্রোহ একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। মুন্ডারা ভারতের আদিমতম অধিবাসী। এরা ছোটোনাগপুর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অরণ্যে বসবাস করত। ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও ব্রিটিশদের অপশাসনে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 1899-1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়। এই অভ্যুত্থানটি উলগুলান অর্থাৎ বিরাট তোলপাড় বলে অভিহিত হয়। এই ঘটনাই মুন্ডা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ –

মুন্ডা বিদ্রোহের পশ্চাতে বেশকিছু কারণ ছিল।

  • ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন মুন্ডা সমাজের জীবন-জীবিকাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
  • ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বহিরাগত মহাজন, ঠিকাদারদের আবির্ভাবের ফলে বহু জায়গা মুন্ডাদের হস্তচ্যুত হয়।
  • বহিরাগতরা তাদের ঋণের জালে আবদ্ধ করে ও বিনা পারিশ্রমিকে (বেগার খাটা) খাটাতে শুরু করে।
  • নতুন ভূমিব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে জমিতে ব্যক্তিমালিকান প্রতিষ্ঠিত হলে মুন্ডাদের চিরাচরিত খুৎকাঠি প্রথার অবসান হয়।
  • ঔনিবেশিক শাসনে মুন্ডা এলাকায় ব্রিটিশ প্রবর্তিত নতুন নিয়মকানুন চালু হলে মুন্ডারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
  • অসমের চা বাগানে তাদেরকে শ্রমিক হিসেবে পাঠানো হত। সেখানে তারা চা বাগানের মালিকদের (মূলত ইউরোপীয়) দ্বারা শোষিত হতে শুরু করে।
  • মুন্ডাদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়।
  • বহিরাগতরা মুন্ডাদেরকে প্রলোভিত করে, নতুবা মদের নেশায় নেশাগ্রস্ত করে জমি, জায়গা সব লিখিয়ে নিত।
  • অরণ্য ব্যবহারের ওপর সরকার নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
  • মিশনারিরা মুন্ডাদের চিরাচরিত ধর্ম ও প্রথার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকে।

উপরোক্ত কারণের বিরুদ্ধে মুন্ডারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে এমনকি মহারানি ভিক্টোরিয়ার কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠায় (1886 খ্রিস্টাব্দ)। কিন্তু এসব আবেদনপত্রে সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। এই পরিস্থিতিতে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে 1899 খ্রিস্টাব্দের 24 ডিসেম্বর মুন্ডা বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। বিরসা মুন্ডার লক্ষ্য ছিল স্বাধীন মুন্ডারাজ্য প্রতিষ্ঠা। তিনি এই লক্ষ্যে মুন্ডাদের সংঘবদ্ধ করেন। মুন্ডাদের কাছে তিনি ‘ধরতি আবা’ বা ‘পৃথিবীর পিতা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

মুন্ডা বিদ্রোহের বিস্তার ও পরিণতি –

রাঁচি, কারা, বাসিয়া, তোরপা, তামার, চক্রধরপুর প্রভৃতি এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। গয়া মুন্ডা এই বিদ্রোহের সেনাপতি নিযুক্ত হন। জমিদার, মহাজন, পুলিশ, ইংরেজ কর্মচারীদের ওপর বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালায়।

সরকারের বাহিনী বিদ্রোহীদের দমনে তৎপর হয়ে ওঠে। সইল রাকার পাহাড়ের যুদ্ধে (9 জানুয়ারি, 1900 খ্রিস্টাব্দ) মুন্ডা বাহিনী পরাজিত হয়। যুদ্ধে অনেকে প্রাণ হারায়, অনেকে বন্দি হয়। বিরসা মুন্ডা বন্দি হন (9 জুন রাঁচির কারাগারে কলেরায় তাঁর মৃত্যু হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।

মুন্ডা বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য –

মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল একটি উপজাতি বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে মুন্ডারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ‘মুন্ডারাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য, জঙ্গল পরিষ্কার করে উদ্ধার করা জমিতে খাজনা না দেওয়ার জন্য, নিজেদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুন্ডাদের এই আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল। এই বিদ্রোহের ফলে ‘খুৎকাঠি প্রথা’ মেনে নেওয়া হয়, বেগার শ্রম নিষিদ্ধ হয়।

মুন্ডা বিদ্রোহের বিশ্লেষণ –

মুন্ডা বিদ্রোহ ও তার বিশ্লেষণে বহু গবেষক আলোকপাত করেছেন। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘কৃষক বিদ্রোহ’ বলেছেন। এই বিদ্রোহ একেবারে ব্যর্থ হয়নি। এই বিদ্রোহের ফলে 1908 খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন পাস হয়। তা ছাড়া এই বিদ্রোহ মুন্ডাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টিতে সমর্থ হয়। পরবর্তীকালের অন্য বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা স্থল ছিল এই বিদ্রোহ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মুন্ডা বিদ্রোহ কী?

মুন্ডা বিদ্রোহ (1899-1900) ছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আদিবাসী মুন্ডাদের সংগঠিত আন্দোলন। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে এটি ‘উলগুলান’ (মহা বিদ্রোহ) নামে পরিচিতি পায়।

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
1. ব্রিটিশ অরণ্য আইনে মুন্ডাদের বনজ সম্পদ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা।
2. মহাজন ও জমিদারদের শোষণে জমি হাতছাড়া হওয়া।
3. খুৎকাঠি প্রথা (সমষ্টিগত জমি ব্যবস্থা) বিলুপ্তি।
4. জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও বেগার শ্রম।
5. চা বাগানে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা।

মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল গুলি হল –
1. ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন (1908) পাস হয়, যা আদিবাসীদের জমি রক্ষায় সহায়ক হয়।
2. বেগার শ্রম নিষিদ্ধ হয়।
3. মুন্ডাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
4. যদিও বিদ্রোহ দমন হয়, এটি পরবর্তী আদিবাসী আন্দোলনকে প্রেরণা দেয়।

উলগুলান বলতে কী বোঝায়?

উলগুলান একটি মুন্ডা শব্দ, যার অর্থ “বিশৃঙ্খলা” বা “মহা বিদ্রোহ”। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।

বিরসা মুন্ডার মৃত্যু কীভাবে হয়?

1900 সালের 9 জুন রাঁচি কারাগারে কলেরা রোগে তাঁর মৃত্যু হয়।

মুন্ডা বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
1. এটি ছিল একটি উপজাতি বিদ্রোহ।
2. মুন্ডারা স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা চেয়েছিল।
3. ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার এর একটি দিক ছিল।
4. এটি সংগঠিত ও লক্ষ্যভিত্তিক আন্দোলন ছিল।

খুৎকাঠি প্রথা কী?

এটি মুন্ডাদের সমষ্টিগত জমি ব্যবস্থা, যেখানে সম্প্রদায়ের সদস্যদের যৌথভাবে জমি ব্যবহারের অধিকার ছিল। ব্রিটিশরা এটিকে ব্যক্তিমালিকানায় রূপান্তরিত করে, যা মুন্ডাদের ক্ষুব্ধ করে।

মুন্ডা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

মুন্ডা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্বগুলি হল –
1. এটি ব্রিটিশবিরোধী আদিবাসী সংগ্রামের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত।
2. এটি পরবর্তীকালের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।
3. আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আইনি পরিবর্তন আনে।

বিরসা মুন্ডাকে কীভাবে স্মরণ করা হয়?

1. তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আদিবাসী নেতা হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়।
2. বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দর (রাঁচি) তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
3. বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাঁকে আদিবাসী অধিকারের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন? মুন্ডা বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন