বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝো? তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে বিয়োজন মাত্রার মান কী হয়?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝো? তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে বিয়োজন মাত্রার মান কী হয়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝো? তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে বিয়োজন মাত্রার মান কী হয়?

বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝো? তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে বিয়োজন মাত্রার মান কী হয়?

কোনো তড়িৎবিশ্লেষ্যের মোট অনু সংখ্যার যে ভগ্নাংশ সাম্যাবস্থায় আয়নরূপে দ্রবণের মধ্যে থাকে, তাকে ওই পদার্থের বিয়োজন মাত্রা বা আয়নীভবন মাত্রা বলে।

বিয়োজন মাত্রা (α)=সাম্যাবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজিত অনুর সংখ্যাতড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মোট অনুর সংখ্যা

দ্রবণে তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে আয়নিত অবস্থায় থাকে তাই α ≈ 1। মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য দ্রবণে আংশিকভাবে আয়নিত হওয়ায় এদের আয়নায়ন মাত্রা সর্বদা 1 -এর কম হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বিয়োজন মাত্রা (α) এবং বিয়োজন ধ্রুবক (K) -এর মধ্যে পার্থক্য কী?

বিয়োজন মাত্রা (α) হল একটি অনুপাত যা নির্দেশ করে একটি দ্রবণের মোট অণুর কত ভগ্নাংশ আয়নে পরিণত হয়েছে। এটি একটি মাত্রাবিহীন সংখ্যা। অন্যদিকে, বিয়োজন ধ্রুবক (K) হল একটি সাম্যাবস্থা ধ্রুবক যা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট তড়িৎবিশ্লেষ্যের জন্য স্থির থাকে। এটি দ্রবণের ঘনমাত্রা নির্বিশেষে স্থির থাকে (তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলে), যেখানে বিয়োজন মাত্রা দ্রবণের ঘনমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয়।

দ্রবণের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিয়োজন মাত্রার মানের উপর কী প্রভাব পড়ে?

দ্রবণের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিয়োজন মাত্রার মান হ্রাস পায়। ঘনমাত্রা বৃদ্ধির অর্থ দ্রবণে প্রতি একক আয়তনে অবিযোজিত অণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। এর ফলে বিয়োজিত আয়নগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং তারা পুনরায় যুক্ত হয়ে অবিযোজিত অণু গঠন করে। ফলে সাম্যাবস্থায় বিয়োজিত অণুর ভগ্নাংশ (α) কমে যায়।

তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা তুলনা করো।

তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য – এরা জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর প্রায় সম্পূর্ণরূপে (99% এরও বেশি) আয়নিত হয়। তাই এদের বিয়োজন মাত্রা 1 -এর খুব কাছাকাছি (α ≈ 1) হয়।
মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য – এরা জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর অতি অল্প অংশে আয়নিত হয়। তাই এদের বিয়োজন মাত্রা 1 -এর চেয়ে অনেক কম (α << 1) হয়। উদাহরণস্বরূপ, এসিটিক অ্যাসিডের (CH₃COOH) বিয়োজন মাত্রা 0.1 M দ্রবণে প্রায় 0.013 (মাত্র 1.3%)।

বিয়োজন মাত্রার মান সর্বদা 0 থেকে 1 -এর মধ্যে হয় কেন?

বিয়োজন মাত্রাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় “বিয়োজিত অণুর সংখ্যা/মোট অণুর সংখ্যা” হিসেবে। এটি একটি ভগ্নাংশ। কোনও দ্রবণে যদি একটি অণুও বিয়োজিত না হয়, তাহলে বিয়োজন মাত্রা হবে 0। আবার, সমস্ত অণুই যদি বিয়োজিত হয়, তাহলে বিয়োজন মাত্রা হবে 1। যেহেতু বিয়োজিত অণুর সংখ্যা কখনই মোট অণুর সংখ্যার চেয়ে বেশি হতে পারে না, তাই বিয়োজন মাত্রার মান সর্বদা 0 থেকে 1 -এর মধ্যে থাকে।

বিয়োজন মাত্রা কীভাবে একটি তড়িৎবিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতা নির্ধারণে সাহায্য করে?

একটি দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা নির্ভর করে দ্রবণে উপস্থিত আয়নের সংখ্যা ও তাদের গতিশীলতার উপর। বিয়োজন মাত্রা যত বেশি হবে, দ্রবণে মুক্ত আয়নের সংখ্যা তত বেশি হবে, ফলে দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পাবে। এই কারণেই একই ঘনমাত্রার HCL (তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য, α ≈ 1) দ্রবণের পরিবাহিতা CH₃COOH (মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য, α << 1) দ্রবণের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

বিয়োজন মাত্রা এবং অ্যাসিড/ক্ষারের শক্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?

একটি অ্যাসিড বা ক্ষারের শক্তি মূলত বিয়োজন মাত্রা দ্বারাই নির্ধারিত হয়।
1. তীব্র অ্যাসিড/ক্ষার – যাদের বিয়োজন মাত্রা বেশি (α ≈ 1), তারা শক্তিশালী।
2. মৃদু অ্যাসিড/ক্ষার – যাদের বিয়োজন মাত্রা কম (α << 1), তারা দুর্বল।
উদাহরণ – HCl একটি তীব্র অ্যাসিড কারণ এটি জলে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয়ে H⁺ ও Cl⁻ আয়ন দেয়। অন্যদিকে, CH₃COOH একটি মৃদু অ্যাসিড কারণ এটি খুব কম পরিমাণে H⁺ ও CH₃COO⁻ আয়ন উৎপন্ন করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝো? তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে বিয়োজন মাত্রার মান কী হয়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহার দ্রব্যে তামার প্রলেপ দিতে হলে ক্যাথোড ও অ্যানোডরূপে কী কী ব্যবহার করা হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও।

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

তড়িৎলেপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ও তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।