প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের উদাহরণসহ শ্রেণিবিভাগ করো।
প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের উদাহরণসহ শ্রেণিবিভাগ করো।
Contents Show

প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।

অথবা, প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের উদাহরণসহ শ্রেণিবিভাগ করো।

প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. জীব-বিশ্লেষ্য (Bio-degradable)।
  2. জীব-অবিশ্লেষ্য (Non-biodegradable)।

জীব-বিশ্লেষ্য (Bio-degradable) –

জীব-বিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ হল সেই সমস্ত বর্জ্য পদার্থ যা যে-কোনো জীব, মূলত আণুবীক্ষণিক বিয়োজক দ্বারা বিশ্লেষ্য হতে পারে। বিয়োজকরা বা জটিল জৈব পদার্থসমূহকে সরল যৌগে পরিণত করে। কয়েক হাজার প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসেটিস এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী এই বিয়োজনের কাজ চালিয়ে যায়। যেমন – উচ্ছিষ্ট খাদ্যবস্তু, প্রোটিন ইত্যাদি।

জীব-অবিশ্লেষ্য (Non-biodegradable) –

যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ কোনো জীব দ্বারা বিশ্লিষ্ট বা বিয়োজিত হয় না তাদের জীব-অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ বলে। জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি আমাদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন – কৃত্রিম পলিমার, প্লাস্টিক, ডি.ডি.টি, কাচ প্রভৃতি।

বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় –

  1. বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ।
  2. বিষহীন বর্জ্য পদার্থ।

বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ –

যে সমস্ত বর্জ্য মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহে প্রবেশ করলে বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজে গোলোযোগ বা বাধা সৃষ্টি করে নানারকম রোগ সৃষ্টি, শারীরিক ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে, সেই সব বর্জ্যকে বিষাক্ত বর্জ্য বলে। জীব-অবিশ্লেষ্য সমস্ত বর্জ্য পদার্থই সাধারণভাবে বিষাক্ত। বিষাক্ত বর্জ্য জল, মাটি, বায়ুকে কলুষিত করে।

উদাহরণ – বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রবণ, লেড, পারদ, ক্যাডমিয়াম, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড প্রভৃতি।

বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ
বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ

বিষহীন বর্জ্য পদার্থ –

যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ জীবজগৎ তথা পরিবেশের সেভাবে ক্ষতি করে না, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাকৃতিক নিয়মেই যেসব বর্জ্য সাধারণত নির্বিষ পদার্থে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তাদের বিষহীন বর্জ্য বলে। অধিকাংশ জীব-বিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ বিষহীন বর্জ্য।

উদাহরণ – উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত বর্জ্য পদার্থ।

বিষহীন বর্জ্য পদার্থ
বিষহীন বর্জ্য পদার্থ

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জীব-বিশ্লেষ্য (Biodegradable) ও জীব-অবিশ্লেষ্য (Non-biodegradable) বর্জ্য কী?

1. জীব-বিশ্লেষ্য বর্জ্য – যে বর্জ্য পদার্থ প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির মাধ্যমে পচে পরিবেশে মিশে যায়। যেমন — খাদ্যবর্জ্য, কাগজ, গোবর।
2. জীব-অবিশ্লেষ্য বর্জ্য – যে বর্জ্য প্রাকৃতিকভাবে পচে না এবং পরিবেশে দীর্ঘদিন জমে থাকে। যেমন — প্লাস্টিক, কাচ, ইলেকট্রনিক বর্জ্য।

বিষাক্ত (Toxic) ও বিষহীন (Non-toxic) বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য কী?

1. বিষাক্ত বর্জ্য – মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর (যেমন — সীসা, পারদ, কীটনাশক)।
2. বিষহীন বর্জ্য – তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর (যেমন — কাগজ, খোসা, গাছের পাতা)।

জীব-অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পরিবেশের কী ক্ষতি করে?

1. মাটি ও জলের দূষণ ঘটায়।
2. জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে (যেমন — প্লাস্টিক খেয়ে সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু)।
3. দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত থেকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।

জীব-বিশ্লেষ্য বর্জ্য কি সম্পূর্ণ নিরাপদ?

1. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হ্যাঁ, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ফেললে গ্যাস (মিথেন) ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
2. কিছু জৈব বর্জ্য (যেমন — কৃষি রাসায়নিক) বিষাক্ত হতে পারে।

বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপায় কী?

1. পুনর্ব্যবহার (Recycling) – যেমন — ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক বর্জ্য।
2. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধ্বংস – যেমন — তাপ প্রক্রিয়ায় পোড়ানো (Incineration)।
3. নিয়ন্ত্রিত ভাবে মাটিতে পুঁতে ফেলা (Landfill)।

দৈনন্দিন জীবনে বর্জ্য কমানোর উপায় কী?

1. প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো (পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার)।
2. জৈব বর্জ্য কম্পোস্ট করে সার তৈরি করা।
3. ইলেকট্রনিক বর্জ্য আলাদা করে ফেলা।

প্লাস্টিক বর্জ্য কতদিন পর্যন্ত পরিবেশে থাকে?

প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে 400-1000 বছর পর্যন্ত অবিকৃত থাকতে পারে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ভারতে বা পশ্চিমবঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

1. স্বচ্ছ ভারত মিশন (শহর ও গ্রামে বর্জ্য আলাদাকরণ ও পুনর্ব্যবহার)।
2. ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ম (ইলেকট্রনিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ)।
3. প্লাস্টিক বন্ধ নীতিমালা (একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ)।

জৈব ও অজৈব বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য কী?

1. জৈব বর্জ্য – প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন (যেমন — খাদ্যবর্জ্য, কাঠ)।
2. অজৈব বর্জ্য – খনিজ বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে উৎপন্ন (যেমন — প্লাস্টিক, ধাতু)।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

1. পরিবেশ দূষণ রোধ।
2. প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা।
3. মানব স্বাস্থ্যের উন্নতি।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল-

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি-

ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ-

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর