বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা – টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা - টীকা লেখো।
Contents Show

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা – টীকা লেখো।

উনিশ শতকে ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে যে অসংখ্য রাজনৈতিক সভা-সমিতি গড়ে উঠেছিল, ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ ছিল সেগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম তথা পথিকৃৎ স্বরূপ।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার প্রতিষ্ঠা –

1836 খ্রিস্টাব্দে টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরি, দ্বারকানাথ ঠাকুর, গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখের উদ্যোগে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম সভাপতি হন গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য এবং সম্পাদক হন দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার কর্মকাণ্ড –

নামকরণগত দিক থেকে রাজনৈতিক সভা বলে মনে না হলেও প্রখ্যাত গবেষক যোগেশচন্দ্র বাগলের মতে এটিই ‘বাঙালি তথা ভারতবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।’ যে সকল রাজকার্যের সঙ্গে ভারতবাসীর ইষ্ট-অনিষ্টের যোগ ছিল, তার আলোচনা এই সভার মূল উদ্দেশ্য তথা কর্মসূচি ছিল। 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার এক দমনমূলক রেগুলেশন জারি করে নিষ্কর জমির উপর করারোপের সিদ্ধান্ত নিলে এই সভা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। শুধু তাই নয়, জনগণের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে শাসনব্যবস্থার ত্রুটি গুলি দূর করার জন্য এই সংগঠন সরকারের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে। লর্ড বেন্টিষ্কের পাশ্চাত্য ভাষানীতির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসারের জন্য এই সভার উদ্ভব হলেও সভার আলোচনা ও বিতর্কে স্বদেশ ভাবনা বা রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার মন্তব্য –

এই সভা দীর্ঘায়ু না হলেও এবং এর সাফল্য সীমিত হলেও 1838 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান জমিদার সভার অগ্রদূত ছিল। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় যথার্থই লিখেছেন – ‘রাজকীয় বিষয়ের বিবেচনার জন্য অপর যে সভা হইয়া ছিল, তন্মধ্যে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথমা বলিতে হইবেক।’

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা কী?

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা ছিল উনিশ শতকের একটি সংগঠন, যা 1836 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসার, কিন্তু পরবর্তীতে এটি রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন?

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কারণ এটি ভারতবর্ষে প্রথম সংগঠন যেটি শাসনব্যবস্থার ত্রুটি, করনীতি ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন করেছিল। এটি রাজনৈতিক আলোচনা ও প্রতিবাদের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করে।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার প্রতিষ্ঠাতারা কারা ছিলেন?

কালীনাথ রায়চৌধুরী, দ্বারকানাথ ঠাকুর, গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখ এই সভা প্রতিষ্ঠা করেন। গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য প্রথম সভাপতি এবং দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড কী ছিল?

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড ছিল –
1. ব্রিটিশ সরকারের নিষ্কর জমিতে করারোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
2. শাসনব্যবস্থার ত্রুটি সংশোধনের দাবি জানানো।
3. বাংলা ভাষার প্রচার ও স্বদেশী চেতনা জাগরণে ভূমিকা রাখা।

বঙ্গভাষা সভার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি পরবর্তীকালে গঠিত জমিদার সভা (1838) ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য আদর্শ হিসেবে কাজ করে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মতে, এটি ছিল রাজনৈতিক আলোচনার প্রথম সভা।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা কতদিন স্থায়ী ছিল?

এটি দীর্ঘস্থায়ী না হলেও 1836 থেকে 1838 সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার সঙ্গে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর সম্পর্ক কী?

 ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় এই সভাকে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?