এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ব্রাহ্মসমাজ কীভাবে দুইবার বিভক্ত হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ব্রাহ্মসমাজ কীভাবে দুইবার বিভক্ত হয়েছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ব্রাহ্মসমাজ কীভাবে দুইবার বিভক্ত হয়েছিল?
1828 খ্রিস্টাব্দে একেশ্বরবাদী ধর্মমত প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় যে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীকালে তা একাধিক শাখা-উপশাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
ব্রাহ্মসমাজের প্রাথমিক বিভাজন –
1833 খ্রিস্টাব্দে রামমোহনের অকাল প্রয়াণের পর ব্রাহ্মসমাজের আচার্য পদে উন্নীত হন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। 1858 খ্রিস্টাব্দে তরুণ কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করলে তাঁর উদ্যম ও ব্যক্তিগত দক্ষতায় ব্রাহ্মসমাজের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। কেশবচন্দ্রের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ দেবেন্দ্রনাথ তাকে অচিরেই (1862 খ্রিস্টাব্দ) ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও আচার্যপদে বরণ করেন এবং ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কিন্তু অচিরেই সংস্কারের প্রশ্নে কেশবচন্দ্র-দেবেন্দ্রনাথের মতবিরোধ তীব্রতর আকার ধারণ করে। কেশবচন্দ্র ব্রাহ্মসমাজের নিয়মকানুনে কিছু শিথিলতা আনতে প্রয়াসী হন। যথা – সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ এবং ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের উপবীত ধারণের অধিকার প্রদান। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ তাতে আপত্তি জানান এবং তিনি কেশবচন্দ্র সেন ও তার অনুগামীদের (আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, প্রমুখ) ব্রাহ্ম সমাজ থেকে বিতাড়িত করেন। বিতাড়িত কেশবচন্দ্র ও তার অনুগামীদের নেতৃত্বে 1866 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ‘।
ব্রাহ্মসমাজের দ্বিতীয় বিভাজন –
একদশক অতিক্রান্ত হতে না হতেই ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের অভ্যন্তরীণ মতোবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। কেশবচন্দ্রের অবতার তত্ত্বে বিশ্বাস, খ্রিস্টধর্ম প্রীতি, নিজ গৃহে পৌত্তলিকতার আয়োজন এবং সর্বোপরি নিজ নাবালিকা কন্যা সুনীতিদেবীর সঙ্গে কোচবিহারের মহারাজার বিবাহদান প্রভৃতি ঘটনা ব্রাহ্মসমাজের ঘোষিত আদর্শ ও বাস্তবতার মধ্যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় ক্ষুব্ধ তরুণ অনুরাগীরা যথা আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রমুখ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে বেরিয়ে যান এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ (1878 খ্রিস্টাব্দ)।
মন্তব্য –
ব্রাহ্মসমাজ একাধিক শাখা-উপশাখায় বিভক্ত হয়ে গেলেও বাস্তবিক পক্ষে এগুলির সবই ছিল বৃহত্তর ব্রাহ্ম আন্দোলনের শরিক এবং মানব হিতৈষণার ব্রতে ব্রতী।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ব্রাহ্মসমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন এবং কেন?
ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একেশ্বরবাদী ধর্মমত প্রচার এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার করা।
ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাজন কীভাবে ঘটে?
ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাজন ঘটে 1866 খ্রিস্টাব্দে। সংস্কারের প্রশ্নে কেশবচন্দ্র সেন এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে মতবিরোধের কারণে কেশবচন্দ্র সেন এবং তার অনুগামীরা ব্রাহ্মসমাজ থেকে বিতাড়িত হন এবং তারা ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রাহ্মসমাজের দ্বিতীয় বিভাজন কীভাবে ঘটে?
ব্রাহ্মসমাজের দ্বিতীয় বিভাজন ঘটে 1878 খ্রিস্টাব্দে। কেশবচন্দ্র সেনের কিছু কর্মকাণ্ড, যেমন অবতার তত্ত্বে বিশ্বাস, খ্রিস্টধর্ম প্রীতি, এবং নিজ কন্যার বিবাহ নিয়ে বিতর্কের কারণে আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ নেতারা ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের মূল কারণ কী ছিল?
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের মূল কারণ ছিল সংস্কার এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে মতবিরোধ। প্রথম বিভাজনের মূল কারণ ছিল সংস্কারের প্রশ্নে কেশবচন্দ্র সেন এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে মতপার্থক্য। দ্বিতীয় বিভাজনের মূল কারণ ছিল কেশবচন্দ্র সেনের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড এবং ব্রাহ্মসমাজের আদর্শের সাথে তার অসামঞ্জস্য।
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের পর কী হয়েছিল?
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের পর বিভিন্ন শাখা-উপশাখা গঠিত হয়, যেমন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ এবং সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। এই শাখাগুলি বৃহত্তর ব্রাহ্ম আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানব হিতৈষণা এবং সামাজিক সংস্কারের কাজ চালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন কি এর আদর্শকে প্রভাবিত করেছিল?
ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন সত্ত্বেও এর আদর্শ এবং লক্ষ্য অটুট ছিল। বিভাজনের পরেও বিভিন্ন শাখা মানব হিতৈষণা, সামাজিক সংস্কার, এবং একেশ্বরবাদী ধর্মমত প্রচারের কাজ চালিয়ে যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ব্রাহ্মসমাজ কীভাবে দুইবার বিভক্ত হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ব্রাহ্মসমাজ কীভাবে দুইবার বিভক্ত হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।