এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মূল কারণ কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মূল কারণ কী ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মূল কারণ কী ছিল?
ভারতবাসী ব্রিটিশের ‘দাসত্ব শৃঙ্খল’ বিনা প্রতিবাদে পায়ে পড়েনি। ভারতে ইংরেজ রাজত্বের ইতিহাস অনেকাংশে কৃষক-উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাধীনতা রক্ষার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাস।
কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির কারণ –
রাজস্বের চড়া হার –
1765 খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর থেকে ইংরেজরা অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষকের কাছ থেকে চড়া হারে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। বাংলাকে কামধেনু মনে করে চলতে থাকে নির্মম দোহন।
নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার ফলাফল –
ইংরেজ-সৃষ্ট নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় নব্যোদ্ভূত জমিদার, ইজারাদার ও দর-ইজারাদারদের শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপিত হয় অসহায় রায়ত প্রজার উপর। এই দৃষ্টির অগ্নিবাণ থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
মহাজনী শোষণ –
মহাজন নামে পরিচিত মুখোশধারী সুদের কারবারীরা এরপর অজ্ঞ কৃষককে সহায়তার অছিলায় তাকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে এবং চুক্তিপত্রে তদুপেক্ষা চড়া হারের উল্লেখ করে জন্মান্তরব্যাপী কৃষক শোষণের এক ঢালাও বন্দোবস্ত সুসম্পন্ন করতেন।
অর্থকরী ফসল চাষের বাধ্যবাধকতা –
কোম্পানির আমলে ভারতীয় কৃষকদের খাদ্য শস্যের পরিবর্তে নীল, চা, পাট, তুলো প্রভৃতি অর্থকরী ফসল চাষ করতে বাধ্য করা হয়। হা-অন্ন কৃষক তাই বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
উপজাতিদের স্বাধিকার হরণ –
উপজাতিরা সাধারণত দুর্গম অরণ্য-অধ্যুষিত অঞ্চলে বন-জঙ্গল কেটে বসবাস করত। ক্রমে তাদের আবাদভূমি ব্রিটিশ খাজনা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের উপর আরোপিত হয় ভূমি রাজস্বের চড়া হার। তা ছাড়া বহিরাগত মধ্যস্বত্বভোগী ও মহাজনদের অত্যাচারে তাদের চিরাচরিত আর্থ-সামাজিক কাঠামো ও বিচার ব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়ে। স্বাধীনচেতা উপজাতি সম্প্রদায়গুলি তাই ক্রমে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
মন্তব্য –
ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে সংঘটিত এইসব কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর প্রথম প্রতিবাদ এবং চরিত্রগত বিচারে নিঃসন্দেহে জাতীয়তাবাদে সিক্ত ও সংগ্রামী চেতনায় পরিপূর্ণ ছিল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ব্রিটিশ শাসনে কৃষকদের উপর রাজস্ব নীতির প্রভাব কী ছিল?
ব্রিটিশরা 1765 সালে বাংলার দেওয়ানি লাভের পর কৃষকদের কাছ থেকে চড়া হারে রাজস্ব আদায় শুরু করে। নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় জমিদার ও মহাজনদের শোষণে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়, যা বিদ্রোহের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মহাজনী শোষণ কীভাবে কৃষক বিদ্রোহকে প্ররোচিত করেছিল?
মহাজনরা কৃষকদের উচ্চ সুদে ঋণ দিয়ে শোষণ করতেন। চুক্তিপত্রে বিভ্রান্ত করে তাদের ঋণের জালে ফাঁসিয়ে দিতেন, ফলে কৃষকরা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তির জন্য বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।
ব্রিটিশরা কেন কৃষকদের অর্থকরী ফসল চাষে বাধ্য করেছিল?
ব্রিটিশরা নীল, চা, পাট, তুলো ইত্যাদি রপ্তানিযোগ্য ফসল চাষে জোর দিত, যা স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কমিয়ে দিত। এর ফলে কৃষকরা দারিদ্র্যে পড়ে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়।
উপজাতি বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?
উপজাতি বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
1. উপজাতিদের জমি ব্রিটিশ রাজস্ব ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
2. তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমি ও স্বায়ত্তশাসন হরণ করা হয়।
3. মহাজন ও জমিদারদের শোষণে তাদের সমাজব্যবস্থা ধ্বংস হয়।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহগুলির ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
এগুলি প্রমাণ করে যে ভারতীয়রা ব্রিটিশ শোষণ মেনে নেয়নি। এই সংগ্রামগুলি পরবর্তীতে বৃহত্তর স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মূল কারণ কী ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মূল কারণ কী ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।