চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।
Contents Show

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

দক্ষিণ আফ্রিকা-প্রত্যাগত গান্ধি সর্বভারতীয় রাজনীতির বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশের পূর্বে যে তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেন-বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল সেগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম এবং নিঃসন্দেহে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কৃষকদের দুরবস্থা –

একদিকে উচ্চ রাজস্বের চাপ, অন্যদিকে নীলকরদের অকথ্য অত্যাচারে বিহারের চম্পারণ জেলার নিঃসম্বল কৃষকদের দুর্দশা চরমে উঠেছিল। নীলকররা ‘তিনকাঠিয়া ‘প্রথা’ অনুযায়ী স্থানীয় কৃষকদের বিঘাপতি 3 কাঠা বা মোট জমির 3/20 অংশে নীল চাষ করতে এবং উৎপন্ন নীল নীলকরদের কাছে পূর্বনির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করত।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে গান্ধিজির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত –

রাজকুমার শুক্লা নামক জনৈক কৃষকের কাছ থেকে গান্ধিজি চম্পারণের কৃষকদের দুর্দশার কাহিনি শোনেন এবং তৎক্ষণাৎ চম্পারণে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। অধ্যাপক অশীন দাশগুপ্তের পরিভাষায়, ‘চম্পারণের কৃষকদের মধ্যে গান্ধিজি স্বজনের সন্ধান পেয়েছিলেন।’

চম্পারণে গান্ধিজির আগমন ও নেতৃত্ব গ্রহণ –

কোনো সর্ব-ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই গান্ধিজি 1917 খ্রিস্টাব্দে রাজেন্দ্রপ্রসাদ, আচার্য কৃপালনী, মহাদেব ‘দেশাই প্রমুখ তরুণ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে নিয়ে চম্পারণে আসেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

সত্যাগ্রহ আন্দোলন –

গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীরা চম্পারণের কৃষকদের দুর্দশা ও অত্যাচার সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করতে থাকেন। ক্রুদ্ধ স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে চম্পারণ ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করেন। (প্রখ্যাত গান্ধি গবেষিকা ডঃ মৃদুলা মুখোপাধ্যায় গান্ধির এই কাজকে চরম সাহসিকতার পরিচায়ক বলে অভিহিত করেছেন। কেননা, সেই যুগে তিলক বা বেসান্তের মতো নেতারাও সরকারি নির্দেশ সরাসরি অমান্য করার সাহস পেতেন না।) গান্ধিজিকে বন্দি করে আদালতে হাজির করা হলেও সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং শেষ পর্যন্ত নীল চাষীদের অবস্থা সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। গান্ধিজি এই কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সফলতা –

  • গান্ধিজির অদম্য প্রচেষ্টায় 1917 খ্রিস্টাব্দে সরকার ‘চম্পারণ কৃষি বিল’ পাস করে চম্পারণে শতবর্ষব্যাপী কৃষক শোষণের অবসান ঘটায়।
  • কৃষকদের খাজনার হারও 20-25% হ্রাস পায়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব –

  • চম্পারণে গান্ধিজির সংগ্রাম ছিল ভারতের মাটিতে তার প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং এই সংগ্রামে তিনি জয়যুক্ত হন। ডঃ মজুমদার লিখেছেন, ‘চম্পারণ সত্যাগ্রহ হল সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে গান্ধিজির উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ।’
  • ডঃ জুবিথ ব্রাউন লিখেছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষক সমাজের সঙ্গে গান্ধিজির ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র স্থাপিত হয় এবং ক্রমে তিনি তাদের ‘হৃদয় দেওতা’-য় পরিণত হন।
  • চম্পারণের সাফল্য ভারতীয় গ্রামসমাজের দীর্ঘদিনের তন্দ্রাচ্ছন্নতা কাটিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল এবং সংগ্রামী চেতনায় পরিপূর্ণ করে তোলে।
  • এই আন্দোলনে গান্ধিজি কয়েকজন তরুণ নেতার সাহায্য পান। পরবর্তীকালে, এই তরুণ নেতৃবৃন্দ জাতীয় আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

এইভাবে, চম্পারণ সত্যাগ্রহ তার তাৎক্ষণিক এবং সুদূরপ্রসারী ফলাফলের দ্বারা ভারতীয় রাজনীতিকে নানাভাবে পুষ্ট করেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন কী?

চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল বিহারের চম্পারণ জেলায় নীল চাষীদের ওপর নীলকর ইউরোপীয় জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত প্রথম সফল অহিংস আন্দোলন (1917 খ্রিস্টাব্দে)।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের প্রধান কারণ কী ছিল?

চম্পারণ সত্যাগ্রহের প্রধান কারণ ছিল –
1. তিনকাঠিয়া প্রথা – নীলকররা কৃষকদের জমির 3/20 অংশে নীল চাষ বাধ্যতামূলক করত এবং ন্যায্য মূল্য দিত না।
2. অতিরিক্ত খাজনা ও শোষণে কৃষকরা দারিদ্র্যে নিপতিত হয়েছিল।

গান্ধিজি কীভাবে চম্পারণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন?

চম্পারণের কৃষক রাজকুমার শুক্লা গান্ধিজিকে তাদের দুর্দশার কথা জানালে, তিনি 1917 সালে সেখানে গিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

চম্পারণ সত্যাগ্রহে গান্ধিজির পদ্ধতি কী ছিল?

চম্পারণ সত্যাগ্রহে গান্ধিজির পদ্ধতি ছিল –
1. সত্যাগ্রহ ও অহিংসা – সরকারি আদেশ অমান্য করে তথ্য সংগ্রহ।
2. জনসমর্থন – রাজেন্দ্র প্রসাদ, কৃপালনি প্রমুখের সহায়তায় কৃষকদের সংগঠিত করা।
3. তদন্ত কমিশন গঠন – সরকার চাপে পরে কমিশন গঠন করে, যাতে গান্ধিজিও সদস্য ছিলেন।

চম্পারণ আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?

চম্পারণ আন্দোলনের ফলাফল ছিল –
1. চম্পারণ কৃষি বিল (1917 খ্রিস্টাব্দ) – তিনকাঠিয়া প্রথা বাতিল ও খাজনা হ্রাস।
2. গান্ধিজির জাতীয় নেতা হিসেবে উত্থান – এটি ছিল তাঁর ভারতীয় রাজনীতিতে প্রথম সফল সত্যাগ্রহ।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

চম্পারণ সত্যাগ্রহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল –
1. এটি ছিল ভারতে গান্ধীবাদী সত্যাগ্রহের প্রথম প্রয়োগ
2. কৃষকদের মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত রচনা করে।
3. পরবর্তীতে খেদা ও আহমদাবাদ আন্দোলনে গান্ধিজির পথপ্রদর্শক হয়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোগী কারা ছিলেন?

চম্পারণ সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোগী ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ (ভবিষ্যৎ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি), আচার্য কৃপালনি, মহাদেব দেশাই প্রমুখ।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন গান্ধিজির রাজনৈতিক দর্শনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

এটি তাঁর অহিংসা, সত্যাগ্রহ ও জনসংযোগের কৌশলকে শক্তিশালী করেছিল, যা পরে অসহযোগ ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রয়োগ করা হয়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের সাফল্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এটি প্রমাণ করেছিল যে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব এবং এটি ভারতীয় জনগণকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে ‘সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে গান্ধীর উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ’ বলা হয় কেন?

কারণ, এর মাধ্যমে গান্ধিজি কৃষক-মজুর থেকে শুরু করে শিক্ষিত শ্রেণী পর্যন্ত সকলের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যান।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্য বলতে কী বোঝো? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব ঠিক কী ছিল, তাই নিয়ে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।