চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও -
চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও –
Contents Show

চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।

অথবা, পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় –

পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে বলয়াকারে এক-একটি প্রায় সমচাপযুক্ত অঞ্চল অবস্থান করে, একে বায়ুচাপ বলয় বলে। সমগ্র পৃথিবীতে সাতটি বায়ুচাপ বলয় দেখা যায়। সেগুলি হল –

(1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় –

অবস্থান – নিরক্ষরেখার দুপাশে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে 0°-5° বা 10° অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে এই নিম্নচাপ বলয়টি অবস্থান করে।

নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ –

  • এই অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে বলে অধিক উষ্ণতায় এখানকার বায়ু সর্বদা পরিচলন পদ্ধতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়।
  • এখানে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের বিস্তার বেশি থাকায় প্রখর সূর্যতাপের কারণে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং হালকা বলে সহজেই তা ওপরে উঠে প্রসারিত হয়। ফলে চাপ কম হয়।
  • নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এখান থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায়। ফলে নিম্নাংশে বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়, নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
সুমের উচ্চচাপ
সুমের উচ্চচাপ

(2) ও (3) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় –

অবস্থান – উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 25°-35° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।

উচ্চচাপ সৃষ্টির কারণ –

  • নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠলে পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে তা উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে যায় এবং ক্রমশ শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে ফলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়।
  • সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু কোরিওলিস বলের প্রভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে এখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।
  • উত্তর গোলার্ধে 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যে দুটি উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় এর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না এবং ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ু প্রবাহিত না হওয়ায় এক ধরনের শান্ত ভাব বিরাজ করে। এই অঞ্চলকে উপক্রান্তীয় শান্ত বলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে।

(4) ও (5) সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় –

অবস্থান – উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 60° থেকে 70° অক্ষরেখার মধ্যে যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।

নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ –

  • মেরু অঞ্চলের তুলনায় এই দুই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি হয়। ফলে এই অঞ্চলের বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে ওঠে এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
  • পৃথিবীর আবর্তন বেগ এই অংশে মেরু অঞ্চলের তুলনায় বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বগামী বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় ফলে এখানে বায়ুর পরিমাণ বা ঘনত্ব কমে যায় এবং নিম্নচাপ বিরাজ করে।

(6) ও (7) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় –

অবস্থান – উভয় গোলার্ধের 80° থেকে 90° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় নামক বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক গভীর উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।

উচ্চচাপ সৃষ্টির কারণ –

  • মেরু অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পতিত হওয়ায় প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এখানকার বায়ু সর্বদা শীতল ও ভারী হয়।
  • সূর্যরশ্মির প্রখরতা কম থাকায় এই অঞ্চলে বাষ্পীভবনের পরিমাণ তথা বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে ফলে বায়ু ভারী ও উচ্চচাপযুক্ত হয়।
  • পৃথিবীর আবর্তনের কারণে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চল থেকে বায়ুর কিছু অংশ মেরু অঞ্চলে নেমে আসে এবং বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বায়ুচাপ বলয় কী?

পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে বলয়াকারে অবস্থিত প্রায় সমচাপযুক্ত অঞ্চলগুলিকে বায়ুচাপ বলয় বলে।

পৃথিবীতে কয়টি প্রধান বায়ুচাপ বলয় রয়েছে?

পৃথিবীতে সাতটি প্রধান বায়ুচাপ বলয় রয়েছে –
1. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়।
2. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়।
3. সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়।
4. সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়।

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় কোথায় অবস্থিত?

নিরক্ষরেখার দুপাশে 0°-5° বা 10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে এটি বিস্তৃত।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ কী?

1. সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বায়ু উত্তপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়।
2. জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বায়ু হালকা হয় ও চাপ কমে যায়।
3. পৃথিবীর দ্রুত আবর্তনের ফলে বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়।

কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় কোথায় অবস্থিত?

উত্তর গোলার্ধে 25°-35° (কর্কটীয়) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে 25°-35° (মকরীয়) অক্ষাংশে এগুলি অবস্থিত।

উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের অপর নাম কী?

এগুলিকে অশ্ব অক্ষাংশ বা শান্ত বলয় বলা হয়, কারণ এখানে বায়ু নিম্নমুখী হয় ও পার্শ্বপ্রবাহ কম থাকে।

সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় কেন সৃষ্টি হয়?

1. মেরু অঞ্চলের তুলনায় এখানে উষ্ণতা বেশি, তাই বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে।
2. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে চাপ কমে যায়।

মেরু অঞ্চলে উচ্চচাপ কেন সৃষ্টি হয়?

1. সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে বলে বায়ু শীতল ও ভারী হয়।
2. বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকে, ফলে ঘনত্ব বাড়ে।
3. মেরুবৃত্তীয় অঞ্চল থেকে বায়ু নেমে এসে চাপ বাড়ায়।

বায়ুচাপ বলয়ের পরিবর্তন কি ঋতুভেদে হয়?

হ্যাঁ, সূর্যের আপাত গতির কারণে বায়ুচাপ বলয়গুলি উত্তর-দক্ষিণে সামান্য সরে যায়।

বায়ুচাপ বলয় ও জলবায়ুর সম্পর্ক কী?

বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ, মৌসুমি বায়ু, মরুভূমি সৃষ্টি ও বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলকে প্রভাবিত করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কোনো জলবায়ু অঞ্চল কোন্ গোলার্ধে অবস্থিত কীভাবে শনাক্ত করবে -

কোনো জলবায়ু অঞ্চল কোন্ গোলার্ধে অবস্থিত কীভাবে শনাক্ত করবে?

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও -

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

নিয়ত বায়ু ও সাময়িক বায়ুর মধ্যে পার্থক্য -

নিয়ত বায়ু ও সাময়িক বায়ু কাকে বলে? নিয়ত বায়ু ও সাময়িক বায়ুর মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ