ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো।
Contents Show

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো।

1835 খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক -এর ঘোষণায় ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারকে সরকারি নীতি হিসেবে সিলমোহর দেওয়া হলেও বস্তুতপক্ষে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ভারত-ভূমিতে শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। সেই উদ্যোগের প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন খ্রিস্টান মিশনারিগণ।

পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান –

শ্রীরামপুর ত্রয়ী –

ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষার বিস্তারে প্রথম সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের তিন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য – উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যানউইলিয়াম ওয়ার্ড। এঁরা একত্রে ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ হিসেবে পরিচিত হন। তাঁদের উদ্যোগ 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা এবং 1818 খ্রিঃ কলেজ (শ্রীরামপুর কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবাদপত্রের প্রকাশনাতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাদের উদ্যোগে 1818 খ্রিঃ এপ্রিল ও মে মাসে যথাক্রমে প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা মাসিকপত্র ‘দিগদর্শন’ এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা – ‘সমাচার দর্পণ’। তাদের প্রতিষ্ঠিত শতাধিক বিদ্যালয়ে সহস্রাধিক ভারতীয় শিক্ষার্থী ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

অন্যান্য মিশনারিগণের অবদান –

  • 1830 খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডফ জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন।
  • বেলজিয়ামের জেসুইট মিশনারিগণের প্রচেষ্টায় 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • লন্ডন মিশনারি সোসাইটির সদস্য রবার্ট মে 1795 খ্রিস্টাব্দে প্রথমে চুঁচুড়ায় এবং পরবর্তীকালে অন্যত্র ছত্রিশটি ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
  • চার্চ মিশনারি সোসাইটিও অনুরূপ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনে ব্রতী হয়।

মন্তব্য –

নানাবিধ বিরুদ্ধ সমালোচনা সত্ত্বেও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগ ও অবদানকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না। সরকারি নীতি ঘোষনার অন্তত তিন দশক পূর্বেই ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রসারের ঐতিহাসিক দায়িত্ব তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বঙ্গীয় নবজাগরণের প্রাথমিক ভিত্তি তাদের হাতেই রচিত হয়েছিল।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কারা এবং তাদের অবদান কী?

শ্রীরামপুর ত্রয়ী হলেন উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড। তারা 1800 সালে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা এবং 1818 সালে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তারা প্রথম বাংলা মাসিকপত্র ‘দিগদর্শন’ এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশ করেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত শতাধিক বিদ্যালয়ে হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী ইংরেজি শিক্ষা লাভ করে।

খ্রিস্টান মিশনারিরা ভারতে কী ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন?

খ্রিস্টান মিশনারিরা স্কুল, কলেজ, ছাপাখানা এবং সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটান। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীরামপুর কলেজ, জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে।

খ্রিস্টান মিশনারিদের শিক্ষা প্রচেষ্টা কীভাবে ভারতীয় সমাজকে প্রভাবিত করেছিল?

খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সমাজে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে, যা বঙ্গীয় নবজাগরণের ভিত্তি রচনা করে। তাদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে শিক্ষিত ব্যক্তিরা পরবর্তীতে সমাজ সংস্কার ও জাতীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সরকারি নীতির আগে কীভাবে খ্রিস্টান মিশনারিরা শিক্ষা প্রসারে সক্ষম হয়েছিলেন?

খ্রিস্টান মিশনারিরা ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষা প্রসারে কাজ করেছিলেন। তারা ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরে স্কুল, কলেজ এবং ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের এই উদ্যোগ সরকারি নীতি ঘোষণার আগেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে।

খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের সমালোচনা ছিল?

খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে প্রধান সমালোচনা ছিল যে তারা ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাচ্ছেন। অনেকের মতে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে তাদের শিক্ষা প্রচেষ্টার ইতিবাচক দিকগুলিও অস্বীকার করা যায় না।

খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদানকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়?

খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদানকে ভারতের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা যায়। তারা সরকারি নীতি ঘোষণার আগেই শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ভারতীয় সমাজে নবজাগরণের সূচনা করেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ