আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘অভিষেক,’ থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
কহ দাসে লঙ্কার কুশল।
উত্তর – কুশল – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
ঘোরতর রণে/হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী!
উত্তর – বীরবাহু – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
নিশা-রণে সংহারিনু আমি রঘুবরে।
উত্তর – নিশা-রণে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
সীতাপতি, তব শরে মরিয়া বাঁচিল।
উত্তর – শরে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী মেঘনাদ।
উত্তর – কুসুমদাম – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে/এ অভাগী?
উত্তর – বিরহে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
তবে কেন তুমি, গুণনিধি, ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?
উত্তর – গুণনিধি – সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি। কিঙ্করীরে – কর্মকারক, ‘রে’ বিভক্তি।
ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া/কল্যাণী।
উত্তর – ত্বরায় – অধিকরণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।
উত্তর – বিধুমুখী – সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
সাজিছে রাবনরাজা, বীরমদে মাতি; –
উত্তর – বীরমদে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
উঠিছে আকাশে/কাঞ্চন-কঞ্চুক বিভা।
উত্তর – আকাশে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
হেন কালে তথা/দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।
উত্তর – তথা – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। মেঘনাদ – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
নাদিলা কর্বূরদল হেরি বীরবরে/মহা গর্বে।
উত্তর – কর্বূরদল – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। বীরবরে – কর্মকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
ঘোর শরানলে/করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে।
উত্তর – শরানলে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। বায়ু-অস্ত্রে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
মৃদুস্বরে/উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি।
উত্তর – স্বর্ণ-লঙ্কাপতি – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে।
উত্তর – পুত্র – সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি। জলে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
থাকিতে দাস, যদি যাও রণে/তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ ঘুষিবে জগতে।
উত্তর – রণে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। পিতঃ – সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!
উত্তর – ঔষধে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
তবে যদি একান্ত সমরে/ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ ইষ্টদেবে।
উত্তর – বৎস – সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি। ইষ্টদেবে – কর্মকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।
উত্তর – রাজা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। কুমারে – কর্মকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
নিম্নলিখিত পঙক্তি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
রাক্ষসাধিপতি, সসৈন্য সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।
উত্তর – রাক্ষসাধিপতি – রাক্ষসের অধিপতি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)। সসৈন্য – সৈন্যের সহিত বর্তমান (সহার্থক বহুব্রীহি)।
জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া।
উত্তর – মহাবাহু – মহা বাহু যার (বহুব্রীহি)।
রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা মৃন্ময়ী।
উত্তর – রত্নাকর – রত্নের আকর (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)। রত্নোত্তমা – রত্ন মধ্যে উত্তমা (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
সীতাপতি, তব শরে মরিয়া বাঁচিল।
উত্তর – সীতাপতি – সীতার পতি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
কনক আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী
উত্তর – বীরেন্দ্রকেশরী – বীরেন্দ্র কেশরীর ন্যায় (উপমিত কর্মধারয়)।
স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?
উত্তর – স্বর্ণলঙ্কা – স্বর্ণ নির্মিত লঙ্কা (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)। বামাদল – বামাগণের দল (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
এ কালসমরে রক্ষঃ চূড়ামণি
উত্তর – কালসমরে – কাল রূপ সমরে (রূপক কর্মধারয়)। চূড়ামণি – চূড়ায় মণি যার (বহুব্রীহি)।
এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ?
উত্তর – দশাননাত্মজ – দশাননের আত্মজ (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
আমি ইন্দ্রজিৎ, আন রথ ত্বরা করি;
উত্তর – ইন্দ্রজিৎ – ইন্দ্রকে জয় করেছেন যিনি (উপপদ তৎপুরুষ)।
মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয়।
উত্তর – মেঘনাদ – মেঘের মতো নাদ যার (মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি)।
ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে।
উত্তর – অপবাদ – অপ যে বাদ (সাধারণ কর্মধারয়)। রিপুকুলে – রিপুদের কুলে (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
উদ্ধারিতে গোধন, সাজিলা শূর, শমীবৃক্ষমূলে।
উত্তর – গোধন – গো রূপ ধন (রূপক কর্মধারয়)। শমীবৃক্ষমূলে – শমীবৃক্ষের মূলে (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু কুলেশ্বরে।
উত্তর – হেমলতা – হেম বর্ণের লতা (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)। কুলেশ্বরে – কুলের ঈশ্বর (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) তাতে।
তবু তারে রাখে পদাশ্রয়ে যূথনাথ।
উত্তর – পদাশ্রয়ে – পদ রূপ আশ্রয় (রূপক কর্মধারয়)। যূথনাথ – যুথের নাথ (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।
উত্তর – বিধুমুখী – বিধুর (চন্দ্র) মতো মুখ যার (মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি)।
বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে।
উত্তর – বীরেন্দ্র – বীরের ইন্দ্র (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)। পক্ষীন্দ্র – পক্ষীর ইন্দ্র (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
নাদিলা কর্তৃরদল হেরি বীরবরে।
উত্তর – বীরবরে – বীরদের মধ্যে বর (শ্রেষ্ঠ) (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) তার।
সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি।
উত্তর – সমূলে – মূলের সহিত বর্তমান (সহার্থক বহুব্রীহি) তাতে। নির্মূল – নেই মূল যার (নঞ বহুব্রীহি)।
ঘোর শরানলে করি ভস্ম।
উত্তর – শরানলে – শর নিঃসৃত অনল (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) তাতে।
কুম্ভকর্ণ বলী ভাই মম।
উত্তর – কুম্ভকর্ণ – কুম্ভের মতো কর্ণ (উপমিত কর্মধারয়)।
গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে।
উত্তর – গিরিশৃঙ্গ – গিরির শৃঙ্গ (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)। বজ্রাঘাতে – বজ্রের আঘাত (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) তাতে।
সেনাপতি পদে আমি বরিণু তোমারে।
উত্তর – সেনাপতি – সেনাগণের পতি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
অস্তাচলগামী দিননাথ এবে।
উত্তর – অস্তাচলগামী – অস্তাচলে গমন করেন যিনি (উপপদ তৎপুরুষ)। দিননাথ – দিনের নাথ (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো।
কহ দাসে লঙ্কার কুশল। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – দাসকে লঙ্কার কুশল জানাতে বলছি।
ঘোরতর রণে হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – ঘোরতর রণ হইল এবং তোমার প্রিয় ভাই বলী বীরবাহু হত হইল।
কে বধিল কবে প্রিয়ানুজে? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর – প্রিয়ানুজকে কেউ কোনোদিন বধ করেনি।
তব শরে মরিয়া বাঁচিল। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – তব শরে মরিল এবং বাঁচিল।
যাও তুমি ত্বরা করি। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – তোমাকে ত্বরা করে যেতে বলছি।
যদি তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া, মাতঙ্গ যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রয়ে যূথনাথ। (সরল বাক্যে)
উত্তর – তার রঙ্গরসে মন না দিয়ে মাতঙ্গ চলে গেলেও তাকে পদাশ্রয়ে রাখে যূথনাথ।
কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি! (সরল বাক্যে)
উত্তর – লঙ্কা কাঁপার সঙ্গে সঙ্গে জলধিও কাঁপল।
শুনেছি, মরিয়া নাকি বাঁচিয়াছে পুনঃ রাঘব? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর – মরিয়াও নাকি রাঘব পুনরায় বাঁচিয়াছে এমন কথা শোনা গেছে।
এ মায়া পিতঃ, বুঝিতে না পারি। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর – এ মায়া পিতঃ, আমার অবোধ্য।
কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – লোক মরে পুনরায় বাঁচে এমন কথা কেউ কোনোদিন শোনেনি।
তবে যদি একান্ত সমরে ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ/ইষ্টদেবে। (সরল বাক্য)
উত্তর – সমরে একান্ত ইচ্ছা হলে, বৎস, আগে ইষ্টদেবতার পূজা করো।
এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে/গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে। (যৌগিক বাক্য)
উত্তর – রাজা এরকম বলিলেন এবং গঙ্গোদক লইয়া যথাবিধি অনুসারে কুমারের অভিষেক করাইলেন।
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
কহ দাসে লঙ্কার কুশল। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – লঙ্কার কুশল দাসকে বলা হোক।
যাও তুমি ত্বরা করি। (ভাববাচ্যে)
উত্তর: তোমার ত্বরা করে যাওয়া হোক।
ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী মেঘনাদ। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – মহাবলী মেঘনাদের দ্বারা রোষে কুসুমদাম ছেঁড়া হল।
বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – বিধুমুখী, এবে বিদায় দেওয়া হোক।
বায়ু অস্ত্রে উড়াইব তারে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – বায়ু অস্ত্র দ্বারা তাকে উড়ানো হইবে।
নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করো, বীরমণি! (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – বীরমণি কর্তৃক নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করা হোক।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘অভিষেক’ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও, নিচের শেয়ার বাটনটি ব্যবহার করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন