এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ) – অধ্যায় সারসংক্ষেপ

ষষ্ঠ শ্রেণী - ইতিহাস - ভারতীয় উপমহাদেশের - প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা

সিন্ধু সভ্যতা এবং বৈদিক সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের পর উত্তর ভারতে নতুন একটি সভ্যতার উত্থান ঘটে, যাকে বৈদিক সভ্যতা বলা হয়। আনুমানিক 1500 খ্রিস্টপূর্ব (BCE) সময়ে, উত্তর ভারতের সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে আর্যরা এই সভ্যতার সৃষ্টি করে। এই সভ্যতার মূল উপাদানগুলি আমরা বৈদিক সাহিত্য থেকে জানতে পারি, যা মূলত গ্রামকেন্দ্রিক ছিল।

ভাষা পরিবার

ভাষারও একটি পরিবার রয়েছে, ঠিক যেমন মানুষের বিভিন্ন পরিবার থাকে। পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে কিছু ভাষা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, আর এভাবে সেগুলি একটি বৃহৎ ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার একটি বিশাল ভাষা পরিবার। এর মধ্যে একটি শাখা হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা, যার মধ্যে সংস্কৃত ভাষা জন্মগ্রহণ করে। এই ভাষাগোষ্ঠী থেকেই মাগধি অপভ্রংশ ভাষার সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে বাংলা ভাষা হিসেবে পরিচিত হয়।

প্রাচীন আদি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বর্তমানে আর ব্যবহার হয় না। তবে এর প্রভাব ঋগ্বেদ এবং জেন্ড অবেস্তা নামে দুটি প্রাচীন গ্রন্থে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই গ্রন্থগুলির ভাষা ও বর্ণনায় কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, যদিও অবেস্তা-তে দেবতাদের (যাদের দয়েব বলা হয়) নিন্দা করা হয়েছে, আর ঋগ্বেদ-এ অহুর দেবতাকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বৈদিক সভ্যতা ও সাহিত্য

বৈদিক সাহিত্যের চারটি প্রধান ভাগ রয়েছে –

  1. সংহিতা
  2. ব্রাহ্মণ
  3. আরণ্যক
  4. উপনিষদ

বৈদিক সাহিত্যের রচনাকাল দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়: আদি বৈদিক সাহিত্য এবং পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য। বৈদিক যুগকেও দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: ঋগ্বেদিক যুগ (আদি বৈদিক যুগ) এবং পরবর্তী বৈদিক যুগ। ঋগ্বেদ থেকে আমরা আদি বৈদিক যুগের অনেক তথ্য জানতে পারি, এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে।

বৈদিক সভ্যতার অবস্থান

বৈদিক সভ্যতা মূলত উত্তর ভারতে গড়ে উঠেছিল। ঋগ্বেদ-এ সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনা ইত্যাদি নদীর উল্লেখ রয়েছে। সিন্ধু এবং তার পূর্বদিকের উপনদীগুলির ঘেরা অঞ্চলকে সপ্তসিন্ধু অঞ্চল বলা হত। তবে, পরবর্তী বৈদিক যুগে এই সভ্যতা পাঞ্জাব থেকে সরে গিয়ে হরিয়ানা অঞ্চলে চলে আসে।

বৈদিক যুগের প্রত্নতত্ত্ব

বৈদিক সভ্যতায় লোহা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে জানা গেছে, বৈদিক যুগে তিরের ফলা, বর্শা, আংটি, পেরেক, ছোরা ইত্যাদি লোহার বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হতো।

বৈদিক সভ্যতায় রাজনীতি

ঋগ্বেদে জনগণকে বোঝানোর জন্য জন, গণ, বিশ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই সময়ের শাসকরা বিভিন্ন উপাধি ব্যবহার করতেন, যেমন: বিশপতি, গোপতি, ভূপতি, মহীপতি, এবং নরপতি। রাজা যেসব অঞ্চলে শাসন করতেন, তাকে রাজ্য বলা হত। রাজাকে শাসনকার্যে সাহায্য করত বিদথ, সভা, এবং সমিতি নামক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

বৈদিক সভ্যতার অর্থনীতি ও সমাজ

বৈদিক যুগের মানুষ কৃষিকাজ, পশুপালন, ব্যবসাবাণিজ্য এবং অন্যান্য কাজের মধ্যে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পেশার মধ্যে ছিল: কৃষক, কামার, কুমোর, জেলে, তাঁতি, চিকিৎসক, রাখাল ইত্যাদি। বৈদিক সমাজে পিতাই ছিল পরিবারে প্রধান। বৈদিক সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র।

বৈদিক যুগের শিক্ষা

বৈদিক যুগে প্রথম দিকে মুখে মুখে শিক্ষা দেওয়ার প্রচলন ছিল। ছাত্ররা আশ্রম বা গুরুগৃহে থেকে পড়াশোনা করতেন, এবং এই সময়কালকে বলা হত ব্রহ্মচর্যাশ্রম। তাদের শিক্ষা বিষয় ছিল: বেদপাঠ, অস্ত্রচালনা ইত্যাদি। ছাত্রদের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রবিদ্যা শেখানো হত।

বৈদিক যুগে অন্যান্য সমাজ

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈদিক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। সিন্ধু ও গঙ্গা নদীর উপত্যকা অঞ্চলে বৈদিক সভ্যতার বসতি ছিল। তবে, ভারতের পূর্ব, উত্তর-পূর্ব, এবং দক্ষিণ অংশে বৈদিক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়নি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা কালো এবং লাল রঙের মাটির পাত্র আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া, কিছু ভাঙা বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। মানুষ সেই সময়ে পাথর এবং তামা ব্যবহার করত এবং মৃতদেহকে সমাধি দিত। এরকম একটি শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে মহারাষ্ট্রের ইনামগাঁও তে।

মেগালিথ

মেগালিথ বলতে বোঝানো হয় বৃহৎ পাথরের সমাধি। প্রাচীন ভারতে লোহার ব্যবহারের সাথে এই ধরনের সমাধিগুলির সম্পর্ক রয়েছে। ভিন্ন আকৃতির পাথর দিয়ে এই সমাধিগুলি তৈরি হত। ভারতের কিছু বিখ্যাত মেগালিথ কেন্দ্র হলো কাশ্মীরের বুরজাহোম, ইনামগাঁও, এবং রাজস্থানের ভরতপুর। তবে, দক্ষিণ ভারতে বড়ো পাথরের সমাধি বেশি দেখা যায়।

Share via:

মন্তব্য করুন