আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করো
আদি বৈদিক যুগের ইতিহাস জানার প্রধান উপাদান_____(জেন্দ অবেস্তা/মহাকাব্য/ঋগবেদ)।
উত্তর – ঋগবেদ
মেগালিথ বলা হয়_____(পাথরের গাড়ি/পাথরের সমাধি/পাথরের খেলনা) – কে।
উত্তর – পাথরের সমাধি
ঋগবেদে রাজা ছিলেন_____(গোষ্ঠীর প্রধান/রাজ্যের প্রধান/সমাজের প্রধান)।
উত্তর – গোষ্ঠীর প্রধান
বৈদিক সমাজে পরিবারের প্রধান ছিলেন_____(রাজা/বিশপতি/বাবা)।
উত্তর – বাবা
বেমানান শব্দটি খুঁজে বের করো
ঋগবেদ, মহাকাব্য, সামবেদ, অথর্ববেদ
উত্তর – মহাকাব্য
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, নৃপতি
উত্তর – নৃপতি
ইনামগাঁও, হস্তিনাপুর, কৌশাম্বী, শ্রাবস্তী
উত্তর – ইনামগাঁও
উষা, অদিতি, পৃথিবী, দুর্গা
উত্তর – দুর্গা
নিজের ভাষায় ভেবে লেখো (তিন/চার লাইন)
বেদ শুনে শুনে মনে রাখতে হত। এর কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
বৈদিক যুগে বেদ শুনে শুনে মনে রাখতে হত, কারণ –
- বৈদিক যুগে বেদ -এর কোনো লিখিত রূপ ছিল না।
- সে সময় লিখন রীতির প্রচলনও ছিল না। ফলে পুঁথিপত্রের অভাব ছিল।
- তা ছাড়া এটা মনে করা হত যে, বেদ হল ঈশ্বরের বাণী। তাই ঈশ্বরের বাণী যাতে সঠিকভাবে উচ্চারিত হয় সেদিকে নজর রাখা হত।
বেদ যেহেতু শুনে শুনে মুখস্থ করা হত সে কারণে বেদ -এর অপর নাম ‘শ্রুতি’।
বৈদিক সমাজ চারটি ভাগে কেন ভাগ হয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্য থেকে বৈদিক যুগের সমাজের অনেক কথা জানা যায়। যেমন – বৈদিক সমাজের সবথেকে ছোটো অংশ ছিল পরিবার। পরিবারের সবথেকে বয়স্ক ব্যক্তিই ছিলেন পরিবারের প্রধান। একই পরিবারের সদস্যরা নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। অন্যদিকে, বৈদিক সমাজে কৃষি ও ব্যাবসাবাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়। শিক্ষারও বেশ প্রসার ঘটে। এছাড়া অনেক জনপদ ও শাসক গোষ্ঠীরও উদ্ভব হয়। ফলে মানুষের কাছে নানা ধরনের কাজের সুযোগ আসে। এই কাজগুলি করার জন্যই বৈদিক সমাজকে (পেশাভিত্তিক) চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণরা পুজো, যাগযজ্ঞ ও বেদপাঠ করতেন। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল দেশের জন্য যুদ্ধ করা ও যুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তির সম্পদ লুঠ করা। বৈশ্যরা কৃষি, পশুপালন ও ব্যাবসাবাণিজ্য করত। আর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের সেবা করত শূদ্ররা।
বৈদিক যুগের পড়াশোনায় গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয়?
বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ সন্তানরা উপনয়নের পর গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ করত। এই অধ্যায়কে বলা হত ব্রহ্মচর্যাশ্রম। এই সময় গুরু ও শিষ্যের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠত।
গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক
- প্রথমত শিষ্যরা বিনা পয়সায় গুরুগৃহে থেকে নানা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করত। গুরু তাঁর শিষ্যদের নিজের সন্তানের মতো লালনপালন করতেন, স্নেহ করতেন। শিক্ষা লাভ সম্পূর্ণ হলে গুরু শিষ্যকে স্নাতক বলে মানপত্র দিতেন।
- অন্যদিকে শিষ্যরাও গুরুকে শ্রদ্ধা করত, তাঁর সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করত। শিষ্যরা গুরু গৃহের যাবতীয় কাজ করত। শিক্ষান্তে শিষ্যরা গুরুদক্ষিণা স্বরূপ গুরুকে গো-দান করত।
আদি বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থার কি কোনো বদল হয়েছিল? বদল হয়ে থাকলে কেন তা হয়েছিল বলে মনে হয়?
আদি বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থার অনেক বদল ঘটেছিল।
কর্মের ভিত্তিতে বৈদিক সমাজ চারটি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় নারীদের সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে। আদি বৈদিক যুগে সমাজে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা ছিল। গৃহে নারীরাই ছিল সর্বময়ী কর্ত্রী। তারা উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেত। সমাজের নানা কাজে তারা যোগ দিত। নাচ-গান থেকে শুরু করে যুদ্ধবিদ্যাতেও তারা সমান পারদর্শী হয়ে উঠত। সে সময় নারীরা নিজেদের স্বামী মনোনয়ন করতে পারত।
কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়। এসময় কন্যাসন্তানের জন্মকে অকাম্য ধরা হত। সমাজে বাল্যবিবাহ ও সতীদাহপ্রথার প্রচলন ঘটে। ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার দায়িত্ব নারীদের হাত থেকে পুরুষদের হাতে চলে যায়। এছাড়া পুরুষের বহুবিবাহ, পণপ্রথা প্রভৃতি কারণে নারীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
হাতেকলমে করো
বৈদিক সমাজে রাজার ধারণার বদল একটি চার্টের সাহায্যে দেখাও।
বৈদিক সমাজে রাজার ধারণার বদলের চার্ট –
বৈদিক সমাজে জীবিকাগুলির একটি চার্ট তৈরি করো।
বৈদিক সমাজে জীবিকাগুলির একটি চার্ট –
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, “ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)” অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!